‘স্বামী নেই। ঘরভিটা ছাড়া জমিজমা নেই। দুই সন্তান প্রতিবন্ধী। উপার্জন বলতে ভিক্ষাবৃত্তি আর বিধবা ভাতার কয়টা টাকা। সেই টাকা অন্যের নাম্বারে চলে গেছে।’ কথাগুলো বলতে বলতে দু’চোখের পানি পড়তে থাকে উপজেলার মাদরা গ্রামের আতিয়ারের বিধবা কন্যা ফিরোজা খাতুনের। স্বামীর ২ কাঠা বাস্তভিটার ওপর বাস করে একই গ্রামের অহেদ সরদারের কন্যা হাসিনা খাতুন। জমি না থাকায় স্বামীর ইন্তেকাল ও ৩ কন্যার বিয়ের পরে ভিক্ষা করে সংসার চলত। কিন্তু দু’বছর আগে হার্টের একটা ভাল্ব অকেজো হওয়ায় চলতে পারেনা। এখন মেয়েরা কিছু সাহায্য করে আর বিধাবা ভাতায় দিন চলে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা পায়নি হাসিনা। মাদরা গ্রামের প্রতিবন্ধী আসমা, প্রতিবন্ধী তৌহিদ, সোনাবাড়িয়ার বিধবা ফিরোজা, রাবেয়াসহ হাজার হাজার ব্যক্তি ভাতার টাকা পায়নি। ভাতার টাকা হিসাবে ধরে খুড়িয়ে তাদের সংসার চলে। ওষুধ কিনতে হয়।
সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, মেম্বর কামরুজামান, মেম্বর হাসান তাদের ইউনিয়নে প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তির ভাতার টাকা না পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, সমাজ সেবা দফতরের নির্দেশ মোতাবেক মাইকিং করে তিনবার বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধীদের ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হাজির করা হয়। প্রথমবার আইডি কার্ডের কপির উপর মোবাইল নাম্বার লিখে জমা নেয়া হয়। ২য়বার সমাজসেবা দফতরের কর্তারা ভাতা ভোগীদের আইডি ও মোবাইল নাম্বার যাচাই করে। তৃতীয় দফায় সমাজসেবা দফতরের সংগে মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’ এর কর্মচারীরা এসে মোবাইল সেট নিয়ে নাম্বারগুলো যাচাই করে।
একই অভিযোগ করেন দেয়াড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও দুইবার বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক প্রাপ্ত একই ইউনিয়নের মহিলা মেম্বর আকলিমা খাতুন। তারা জানান, তাদের ইউনিয়নের দুই শতাধিক ভাতা ভোগী এবার টাকা পায়নি। ভুক্তভোগীরা সমাজসেবা দফতরে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে টাকা দেয়া হয়েছে। তবে যে নাম্বারে টাকা গেছে বলা হচ্ছে, তা ভাতাভোগীর নয়। ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, যশোরে বা দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই নাম্বারধারীর অবস্থান। রিং দিলে বেশির ভাগ টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করছে। অনেক নাম্বারে কল রিসিভ হচ্ছে না। অনেক নাম্বারে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে সমগ্র উপজেলার হাজার হাজার ভাতা ভোগী এবার টাকা পায়নি। টাকা না পেয়ে প্রতিদিন দলে দলে ভাতা ভোগী উপজেলা সমাজসেবা দফতরে ভিড় করছে। সমাজসেবা দফতর থেকে কেউ সমাধান পাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরে আলম নাহিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রর উদ্যোক্তারা মোবাইল নাম্বার তালিকাভূক্ত করার সময় ভূল লেখার কারণে সমাস্যা হয়েছে। তবে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন