মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গ্যাস পাইপ লাইনের ওপর বিপজ্জনক ইটভাটা

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুরাদনগর (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ঘোড়াশাল গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুরোদমে চলছে মেসার্স এমবিসি ইটভাটার কার্যক্রম। গত ২৩ জানুয়ারি অবৈধভাবে পরিচালিত এই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধসহ পরিচালককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। প্রশাসনের স্বদিচ্ছা থাকার পরও স্থানীয় নামধারী কতেক নেতার চাপে ইটভাটাটি বন্ধ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। এ দিকে পেট্রোবাংলা, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বাঁধা উপেক্ষা করে ৩২ ও ৪৮ ইঞ্চি জাতীয় গ্রীডের পাশাপাশি দু’টি পাইপ লাইনের উপর বিপজ্জনক স্থানে মেসার্স এমবিসি ইটভাটা নামে ইটভাটা পুন:নির্মাণের কাজ করেন দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ী গ্রামের মোস্তাক আহাম্মদ। এতে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত এ গ্যাস সঞ্চালন লাইনে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ইটভাটা বন্ধ ও মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আলহাজ্ব ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সুপারিশসহ বিগত ২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন মোস্তফা মিলনসহ অর্ধশতাধিক এলাকাবাসী। ঘটনার সরেজমিন তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলেও ইটভাটার কার্যক্রম দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কি আইনের ঊর্ধ্বে-এ প্রশ্ন নিয়ে জনমনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, শুরু থেকেই ওই স্থানে ইটভাটা নির্মাণ না করার জন্য এলাকার জনগণ দাবি জানিয়ে আসছিল। কারণ জনসাধারণের বাসযোগ্য ৩ হাজার ফিটের মধ্যে কোন প্রকার ইটভাটা না করার পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকলেও ওই ইটভাটার ২ শত ফিটের মধ্যেই রয়েছে একটি বিশাল এতিমখানা। যেখানে প্রায় শতাধিক ছাত্র লেখাপড়া করছে। এছাড়াও ৫/৬ শত ফিটের মধ্যেই রয়েছে পাশের ধনীরামপুর গ্রাম। এ ইটভাটার কারণে উক্ত মাঠের কৃষকরাও চাষযোগ্য জমিতে ভাল ফলন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ দাবি উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ব্যবসায়ী মোস্তাক আহাম্মেদ মেসার্স এমবিসি ইটভাটা নামে ওই ইটভাটা নির্মাণ করেন। এর প্রায় ৫ বছর পর উপজেলার বাখরাবাদ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাইপ লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত এবং নকশা প্রণয়ন করে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। পরে ওই ভাটা মালিক তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের অজুহাতে পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে দীর্ঘ ১ বছর পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার পর ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে কুমিল্লার জেলা ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নির্মাণ কোম্পানির পক্ষ থেকে ওই ইটভাটা মালিক মোস্তাক আহাম্মদকে ভাটাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার শর্তে ব্যবসার ক্ষতিপূরণসহ ভাটার জায়গার মূল্য বাবদ প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পর পাইপ লাইনের জায়গা থেকে তার ভাটার চুলাটি ভেঙে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই একটু দূরে ফের আরেকটি চুলা নির্মাণ করেছেন। গ্যাস কোম্পানি বিটিসিএল থেকে ১৮ মিটার দূরে ইটভাটা প্রতিস্থাপন করার অনাপত্তি ছাড়পত্র আনা হলেও ১৬ মিটার দূরেই ইটভাটার কাজ করা হচ্ছে। ইটভাটার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরেও অধিক বিপজ্জনক ওই স্থানে ভাটা নির্মাণ করায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী। তারা অবিলম্বে বিপজ্জনক ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, ইটভাটা মালিকের এ ধরনের বেআইনী দুঃসাহস আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছে। পুনরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইটভাটাটি বন্ধসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজগর আলী জানান, সরেজমিন পরিমাপ করে দেখা যায়, ৪৮ ইঞ্চি গ্যাস পাইপ লাইন থেকে চুলার সর্বনি¤œ দূরত্ব ৭০ ফুট এবং ৩২ ইঞ্চি গ্যাস পাইপ লাইন থেকে চুলার সর্বনি¤œ দূরত্ব ৫৫ ফুট। এতে প্রতীয়মান হয় যে, ইট ভাটাটি দু’টি গ্যাস পাইপ লাইনের নিকটবর্তী হওয়ায় যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে অভিযোগের পরই সরেজমিন তদন্তে এসে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট জমির উদ্দিন ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ দিলেও ভাটা মালিক মোস্তাক আহাম্মদ অদৃশ্য ক্ষমতার খুঁটির জোরে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল আলম জানান, নতুন করে ইটভাটা করার জন্য কাউকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। যদি কেউ গ্যাসের সঞ্চালন পাইপ লাইনের উপর ইটভাটা স্থাপন করে থাকে তাহলে সেটি দেখার দায়িত্ব ওই গ্যাস কোম্পানির। জনসাধারণের বাসযোগ্য এলাকায় ইটভাটা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে মেসার্স এমবিসি ইটভাটার মালিক মোস্তাক আহাম্মদ জানান, ইটভাটার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বে¡ও প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে হয়রানি করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন