আবদুল আউয়াল ঠাকুর: নির্বাচন অনুষ্ঠানের আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই নির্বাচন অন্তর্বর্তী না নতুন নির্বাচন সেটিও অনেকটাই ধোঁয়াশামুক্ত হয়েছে। জন কেরির সফরের পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা আলোচনা চলছিল। বর্তমানে অনেকটা পরিষ্কার ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচন কবে হবে তা সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে। দেশে মধ্যবর্তী কোনো নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন সেটা হবে, না হয় হবে না। এরপর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তার একজন মন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনের নির্ধারিত সিডিউলের তিন মাস আগে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপিকে নির্বাচনে এসে জনপ্রিয়তা প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেই বলেছেন, এখন আর মধ্যবর্তী নির্বাচন নয়, নতুন নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা প্রয়োজন। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এবং আরো কিছু আলামত মেলালে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, নির্বাচনের পালে হাওয়া লেগেছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়সহ অন্তত ১০ নেতার সঙ্গে কথা বলার পর এতদসংক্রান্ত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে তদারক করার এবং নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী মাসে দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে পরবর্তী নির্বাচনের সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা ও নির্দেশনা আসতে পারে। পরবর্তী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করার জন্য মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি আসনে অন্তত পাঁচজনের নাম দিয়ে তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া বিদেশি একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানকেও মাঠের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সমস্যাকে প্রকট বলে মনে করা হচ্ছে সেগুলোর একমাত্র সমাধান হচ্ছে রাজনীতিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। এখন যদি রাজনীতিকে প্রকৃতই নির্বাচনমুখী করা যায় তাহলে অবশ্যই দেশে বিদ্যমান অধিকাংশ অস্বস্তিকর সমস্যার সমাধান হতে বাধ্য। যে মহল বা যারা মনে করেছেন মূল ইস্যুকে ধাপাচাপা দিয়ে অন্য ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা বেশি হবে তারা প্রকৃতই রাজনৈতিক ভুল সমীকরণে রয়েছেন। এতে মূলত ক্ষতি হচ্ছে দেশের। এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতর ওপর। ক্ষমতায় থাকার এই প্রবণতা কার্যত নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে এর নজির রয়েছে। বিশদ আলোচনা না করলেও অতি সাম্প্রতিককালের মিয়ানমারের প্রসঙ্গই উল্লেখ যায়। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ঠেকাতে সেখানে সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে বর্র্বর নির্যাতন চালিয়েছে তা থেকে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া আর কোনো সুবিধা তারা নিতে পারেনি। সেখানে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। এখন সেখানে জাতিসংঘের উদ্যোগেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে দেশটির অর্থনীতি নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে আস্থার সংকটে কার্যত বিনিয়োগে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি বলে পরিচিত পোশাক শিল্প এখন মারাত্মক সংকটে মুখে পড়েছে। এই সংকটের মূল কারণ যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতি সে কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সকল সমস্যার নথি তৈরি করা সম্ভব নয়, সঙ্গতও নয়। একটা উদাহরণ দিলে বোধহয় বিষয়টি খানিকটা পরিষ্কার হতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা না দিয়ে ভারতীয়রা তৈরি করেছে ফারাক্কা বাঁধ। এখন দেখা যাচ্ছে, এই বাঁধের কারণে ডুবে যাচ্ছে বিহার। কথাটা যদি সোজা ভাষায় বলা যায় তাহলে এই দাঁড়াবে যে, মানস সরবর হতে উৎপত্তি হওয়া গঙ্গা পদ্মার নাম নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়ার কথা ছিল। এর ফলে সে যা কিছু বহন করত তা নিয়ে যেত সাগরে। বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছি আমরা এবং বিহার। সে কারণেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছেন, এ বাঁধ ভেঙে দিতে। বিহারের দাবির মুখে ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয়ার বিপত্তি এখনো বাংলাদেশে চলছে। কথাটা হলো, বাঁধ না দিলে স্বাভাবিক ¯্রােত আটকাতো না। রাজনীতিও ঠিক এমনই। মূলধারা অর্থাৎ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব ঠিক কোথায় গিয়ে পড়বে তার সঠিক বিশ্লেষণ কারো পক্ষেই করা সম্ভব নয়। এ নিয়ে অনুমান, ধারণা বা পর্যালোচনা যাই করা হোক না কেন তা যে বাস্তবে মিলবেই এ কথা বলা যায় না। কথা বলা, স্বাধীন চিন্তা করা এবং তার প্রয়োগের বিষয়টি মানুষের জন্মগত বোধের সাথে সম্পর্কিত। একে বাধা দিয়ে পৃথিবীর কোনো শাসনই টিকে থাকতে পারেনি। এমনকি মানুষের মৌলিক চাহিদা বলে পরিচিত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার অভাব মেটানোর অঙ্গীকার সত্ত্বেও সমাজতন্ত্র টিকে থাকতে পারনি। এর একমাত্র কারণ মানুষের চিন্তার অধিকার হরন। ভোটাধিকার হরণ বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতিই মোটা কথায় মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা হরণের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সে কারণে বর্তমানে যে নির্বাচনের কথা উঠেছে সেখানে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রকাশিত এক খবরে সরকার দলীয় সূত্র উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ মনে করছে আগামী নির্বাচন বয়কট করে টিকে থাকার মতো সাংগঠনিক অবস্থা বিএনপির নেই। এ অবস্থায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে আসতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের দর কষাকষির মূল জায়গা হয়ে উঠতে পারে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কার কী অবস্থান হবে সেটাই। আগামী নির্বাচনে বিএনপি কী করবে বা করতে পারবে সে ভাবনায় এখন গিয়ে বোধহয় খুব লাভ নেই। কারণ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে ঠিক নির্বাচনী আবহ তৈরি হওয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। এদিকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। সেক্ষেত্রে এবং বাস্তবতার আলোকেও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। যদি নির্বাচন এগিয়ে আনা হয় তাহলে দ্রুতই নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, সার্চ কমিটির কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। যাইহোক, ইতোমধ্যে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল সার্চ কমিটির মাধ্যমে। কী ধরনের নির্বাচন সেই কমিশন উপহার দিয়েছে তা কেবল দেশের মানুষই নয়, বিশ্ববাসীও জানে। তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহল আসেনি। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। পরপর তিনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেই কমিশনের সঙ্গে সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে ইইউ। বলছে, বাংলাদেশে ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়েছে এবং বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের পতন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এক আলোচনায় বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কৌশল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অংশ নয়। তার মতে, ষড়যন্ত্র করা, কূটচাল চালা, জঙ্গিদের লেলিয়ে দেয়া এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অংশ নয়। তিনি যা বলেছেন এক অর্থে তা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালের অগ্রণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ যারাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন তাদের কপালেই জুটছে নির্যাতন, নিপীড়ন ও জঙ্গিবাদের তকমা। বর্তমানের চলমান জঙ্গি আলোচনাও এর বাইরে নয়। এখন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন, মহাসচিবসহ দলের প্রায় সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই চলছে বিভিন্ন ধরনের মামলা। যে নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলসহ সবাই একমত, যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতেই পারেনি সেই নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা না বলে যারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন তাদের ওপরই চড়াও হচ্ছে সরকারের কোনো কোনো মহল। সঙ্গত বিবেচনা থেকেই বিএনপির মহাসচিব সার্চ কমিটি গঠনে জনমতের প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এটিকে কার্যত একটি গ্রহণযোগ্যা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক ও শুভ আকাক্সক্ষা হিসেবেই দেখা যেতে পারে। সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সবার সাথে আলাপ-আলোচনা হতেও পারে। যদি এটি প্রকৃত কথা হয় তাহলে অবশ্যই তা অভিনন্দনযোগ্য এবং আশা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, নির্বাচনের প্রার্থী নির্ধারণের সরকারি প্রক্রিয়া আরো আগে থেকে শুরু হয়েছে। সে কারণে কৌশল নির্ধারণের বিষয়টিও স্থান করে নিয়েছে। বলা যায়, সরকারের জনমুখী বা জনদরদি কর্মকা-ের প্রসার ঘটেছে। মনে করা হয়, সরকারি ফাইলে ভোটের যে হিসাব-নিকাশ রয়েছে তার সাথে মিলিয়ে জয়ী হতে কত ভাগ ভোট প্রয়োজন এবং কীভাবে তা জনগণের কাছ থেকে কতটা নেয়া যায় তার একটা ফর্মূলা নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করা হচ্ছে। জোনভিত্তিক এসব কাজের যারা সমন্বয় করছেন তারা মনে করছেন, সরকার তার ফর্মেট অনুযায়ী নির্বাচন দিয়ে ইতিবাচক ফল বের করে আনতে সক্ষম হবে। অন্তত তাত্ত্বিকভাবে সরকারের সফলতা প্রমাণ করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এমন একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোটকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে থাকুক বা না থাকুক, এটি কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না। আগামী সংসদে আসার অর্থাৎ সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার মতো কোনো পরিস্থিতিই তাদের সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। তাদের মতে, অন্তত ৬০ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে থাকবে। নির্বাচন অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য বিএনপির নির্বাচনে অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন বিধায় সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। এ মহল মনে করছে, বিএনপির নামে প্রায় সর্বত্রই একাধিক প্রার্থী দেয়া হতে পারে। বিএনপির আসন সংখ্যা যাতে কোনো বিবেচনাতেই ২০/২৫ এর বেশি না হয় সেদিকটি লক্ষ্য রেখে যারা কাজ করছেন তারা নাকি তৎপর। এই মহল মনে করছে, আগামী নির্বাচন হবে আগামী অন্তত ১০ বছরের জন্য। গত সময়ে পরপর দুই টার্মে আওয়ামী লীগ মূলত নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়নের নামে যে ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে আগামী ১০ বছরে বিএনপি তথা গণতান্ত্রিক জোট সে ধরনের কর্মসূচির মুখোমুখি হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইতোমধ্যে সরকার খুব ধীরগতিতে ঠা-া মেজাজে সে ধরনের কর্মসূচিতে হাত দিয়েছে।
বাংলাদেশে বিগত ৪০ বছরের অধিক সময়কালের শাসনকালের যদি নির্মোহ বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে যে কেউ স্বীকার করবেন, জিয়াই এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। এ নিয়ে কারো মনে সন্দেহ থাকলে নিরপেক্ষ কোনো মহলকে দিয়ে জনমত জরিপ অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই জনপ্রিয়তা মূলত তার জনদরদি দেশ উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্যই। দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের যতগুলো প্রক্রিয়া থাকে তার সবই চালুু করেছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, তিনি আজ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই স্বাধীনতার পদক প্রবর্তন করেছিলেন। মন্ত্রিসভা আদালতের একটি সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে তার পদক কেড়ে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি তার সিদ্ধান্ত ভুল হয়ে থাকে, তা হলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে অন্যদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে কীভাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে ¯œাতক, সম্মান ও মাস্টার্স পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও কতিপয় শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলে অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ভালো করা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সার্টিফিকেট বাতিল করেছিল। বিষয়টির উল্লেখ্য এ জন্য যে, একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার পদক প্রবর্তন -কারীর পদকই যদি কেড়ে নেয়া হয় তাহলে অন্যদের পদক এবং স্বাধীনতার পদকের চলই বা থাকে কি করে ‘পরিকল্পনা’ মোতাবেক ঠিকঠাক মতো হয়ে যায় তাহলে হয়তো বাস্তবায়নে হাত দেয়া হবে।
আগামী নির্বাচন যখনই হোক তা কেমন হবে তা বোঝা যাবে নির্বাচন কমিশন দেখেই। ভোরের সূর্য যেমনটা দিনের আলামতবাহী তেমনি নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে তা অবশ্যই নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রকৃতির ওপর। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেমনি সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক উপায় তেমনি দেশের গণতান্ত্রিক স্রোতেরও শেষ পরিণতি। আগেই উল্লেখ করেছি, গঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধ দিয়েছে দিল্লি। মরুভূমি হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশ। এটা ছিল অনুমেয় কিন্তু বিহারের ফুঁসে ওঠা দিল্লির বিবেচনায় ছিল না। সব মিলে এটাই বলা যায়, যে যাই বলুক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই জনমত জরিপের একমাত্র মাপকাঠি।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন