সরকারের অপরিকল্পিত চলমান লকডাউনে বাংলাদেশের জনপদে নিরন্ন ও বুভুক্ষ মানুষের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, লকডাউনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজ না থাকায় সন্তানের মুখে ভাত তুলে না দিতে পেরে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকার দিনমজুর দ্বীন ইসলাম আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ সরকারের মন্ত্রী-কর্মকর্তারা হরহামেশাই বলছেন, তারা পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন, কেউ না খেয়ে নেই, না খেয়ে মারা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- মুক্তারপুরে দ্বীন ইসলামের মতো দেশের অগণিত মানুষ এধরণের নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি। অন্যদিকে সরকারের অব্যবস্থাপনা, ভ্রান্ত নীতি ও অবহেলা-উদাসীনতায় অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিনই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এসব মৃত্যুর দায় সরকারকেই নিতে হবে। মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি বারবার বলেছে-করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে গণটিকা ছাড়া এই মহামারী মোকাবেলা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে বিপাকে ফেলেছে, জনগণের জীবন-জীবিকা-কে বিপন্ন করে তুলেছে।
তিনি বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে লকডাউন-বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে না। সমাজের ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের দিন আনে দিন খায় মানুষ, বেকার-কর্মহীন মানুষের দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া এসব পদক্ষেপ কার্যকর হয় না। বরং সরকারের ব্যর্থতায় প্রতিদিন মানুষ কাজ হারাচ্ছে, দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে, এমনকি মধ্যবিত্তরাও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতায় তাদের আয় সংকুচিত হচ্ছে। এবারও লকডাউনের আগে আমরা (বিএনপি) সরকারকে বলেছিলাম-এই শ্রেণীর মানুষের হাতে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা পৌঁছে দিতে। সরকার তা করে নাই। যার ফলে পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, নিম্ন আয় এবং কর্মহীন-বেকার মানুষের জীবন ধারণ এখন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে মানবেতর অবস্থায় দিন যাপন করছে।
সরকার জনগণকে সহায়তার নামে তামাশা করছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে কয়বার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কোন সময় মাথাপিছু ১১ পয়সা, কিংবা ১৪ গ্রাম চাল। বর্তমানেও চলমান লকডাউনে যে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে তা মাথা পিছু ৭ দিনের হিসাবে ১৩ টাকারও কম। এখন বলা হচ্ছে ঈদের আগে দশ কেজি করে চাল দেয়া হবে, তাহলে ঈদের আগ পর্যন্ত এই লকডাউনে মানুষ কি খেয়ে বাঁচবে। প্রকৃতঅর্থে, এই বরাদ্দও এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি এবং তা জনগণের হাতে পৌঁছেনি।
সরকারের মন্ত্রীরা তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে প্রতিদিনই বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন অভিযোগ করে প্রিন্স বলেন, তারা নাকি দূরবীন দিয়ে বিএনপি-কে খুঁজে পাচ্ছেন না, বিএনপি নাকি মিথ্যাচার করছে। এসব কথা বলে তারা দেশের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে ব্যর্থ অপচেষ্টা করছেন, এসব অযৌক্তিক ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ সময়ে জনগণের জীবন নিয়ে চিন্তা না করে মশকরা করছেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ ও মাউথ ল্যাংগুয়েজে সেটাই ফুটে উঠছে।
সরকারের বাগপটু মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপিকে দূরবীন দিয়ে খোঁজার প্রয়োজন নেই, বিএনপি জনগণের প্রয়োজনে পাশে আছে, বিএনপিকে না খুঁজে পরিহাস বন্ধ করে জনগণকে বাঁচানোর জন্য টিকা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, খাদ্য, অর্থ নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন। আপনাদের ব্যর্থতায় মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এই মৃত্যুর দায় মাথায় নিয়ে জনগণের কাঠগড়ায় আপনাদেরকে দাঁড়াতেই হবে।
প্রিন্স বলেন, মিথ্যাচার বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ করছে। সবচেয়ে বড় মিথ্যা ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরে। রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অনুগত ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের এক অংশের সহায়তায় দিনের ভোট রাতে করে নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দিয়ে যারা জোরপূর্বক ক্ষমতায় আছে, তারাই চরম মিথ্যা ও দুর্নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখে বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ শোভা পায় না। বরং আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বিকৃতি এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছে অবিরাম গতিতে। তারা ইতিহাস ও সত্যকে ভয় পায় বলেই শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারপর নাই মিথ্যাচার করছেন। তবে জনগণ সত্য ইতিহাস জানে। আপনাদের মনগড়া ইতিহাস জনগণ বিশ্বাস করে না। লাগামহীন মিথ্যাচার ও জনগণের ভোটের অধিকার খর্বের জন্য আপনারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। জনগণের এই চরম দুঃসময়ে বিএনপি জনগণের পক্ষে কথা বলার কারণে সরকারের লিপ সার্ভিস দেয়া মন্ত্রীরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। জনগণকে রক্ষা না করে, সারাদিন বিএনপি’র বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অসত্য বয়ান আর জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা। বেগম খালেদা জিয়া এখনও মুক্ত নন, তিনি কার্যত: এখনও বন্দী। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে তাঁর সুচিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বারবার জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে বিএনপি-কে জনগণের পক্ষে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যাবে না। এই চরম দুর্দিনেও সরকার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে হয়রানী করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন