গত কোপার ফাইনালিস্টরা মুখোমুখি হল সেমিফাইনালেই। পেরুর ৩৯ বছরের প্রতীক্ষা সেবার আরও দীর্ঘায়িত হয়েছিল ফাইনালে হেরে। এবারের আসরেও গ্রæপপর্বে তাদের নিয়ে ছেলেখেলা করে ব্রাজিল জিতেছে চার গোলের ব্যবধানে। সেমিফাইনালে তাই হিসেব চুকানোর অপেক্ষায় ছিল পেরুভিয়ানরা। কিন্তু গতকাল ভোরে লুকাস পাকেতার একমাত্র গোলে পেরুকে আবারও হতাশ করে আরও একবার নিজেদের মাঠে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে গেল ব্রাজিল। টানা দ্বিতীয় শিরোপার জন্য ১১ জুলাই আর্জেন্টিনা কিংবা কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে তারা ফাইনালে।
ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখলের লড়াইয়ে এগিয়েছিল ব্রাজিল। ৮ মিনিটের মাথায় এসেছিল প্রথম সুযোগ, পাকেতার রক্ষণচেরা পাস বক্সে রিচার্লিসনকে খুঁজে নিলে তিনি দারুণভাবে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিভ্রান্ত করেন গোলরক্ষক গালেসেকে। সেখান থেকে নেইমারের জন্য পাস ছাড়লে শটটা গোলমুখে রাখতে পারেননি নেইমার। ১৩ মিনিটের মাথায় আবারও বিপদে পড়তে পারত পেরু। ক্যাসেমিরোর জোরালো শট গালেসে রুখে দিলেও বল গিয়ে পড়ে সামনেই থাকা এভারটনের পায়ে। ডিফেন্ডার রামোস দ্রæততার সাথে বল সরিয়ে দিলে সেই যাত্রায় বিপদ ঘটেনি।
১৯ মিনিটের মাথায় দূর থেকে ক্যাসেমিরো জোরালো শট নিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা প্রতিহত করেন পেরু গোলকিপার গালেসে। সেখান থেকে বল পাকেতার কাছে পৌঁছালে বক্সের মাঝে নেইমারকে খুঁজে নেন তিনি নিচু পাসে। নেইমার গালেসের একেবারে সামনে বল পেয়ে শট নিলে দারুণ রিফ্লেক্স সেভ করেন তিনি। সেখান থেকে ফিরতি শটে ঝাঁপিয়ে পড়ে আবারও হতাশ করেন ব্রাজিলিয়ানদের, এবার শট নিয়েছিলেন রিচার্লিসন।
গালেসের বীরত্বে বেশ কিছুক্ষণ ব্রাজিলিয়ানদের কাঠখড় পুড়াতে হয়। অবশেষে সাফল্য আসে ৩৫ মিনিটের মাথায়। আকাশে ভাসা বলে রিচার্লিসন মাথা লাগালে বাঁ প্রান্তে ফাঁকা হয়ে যান নেইমার। সেখান থেকে তিনি দ্রæততার সাথে বক্সে ঢুকে অন্যদের আসার অপেক্ষায় একটু সময় নিলে তাকে ঘিরে ফেলেন দুজন ডিফেন্ডার। তবে দারুণভাবে তাদের ফাঁকি দিয়ে জায়গা বানিয়ে বক্সের মাঝে ফাঁকা থাকা লুকাস পাকেতার উদ্দেশ্যে বল বাড়ালে বাঁ পায়ের শটে জালে বল জড়াতে ভুল করেননি তিনি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই প্রথম টানা দুই ম্যাচে গোল করেন পাকেতা।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে গিয়ে সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল আবারও। ডান প্রান্তে এভারটনের উদ্দেশ্যে বাড়ানো থ্রু বল লম্বা করে বক্সে ভাসান তিনি, তবে রেনান লোদি ঠিকভাবে মাথা লাগাতে না পারায় বল চলে যায় বাইরে। বিরতিতে তাই এক গোলের ব্যবধানে এগিয়েই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে নেয় পেরু, শুরু থেকেই হয়ে উঠে আক্রমণাত্মক। ৪৯ মিনিটের মাথায় ইয়োতুনের বাড়ানো থ্রু থেকে দারুণভাবে থিয়াগো সিলভাকে ফাঁকি দিয়ে ভিতরে ঢুকে বাঁ পায়ে বাঁকানো শট নেন লাপাদুলা। তবে গোলরক্ষক এডারসন প্রস্তুত থাকায় গেরো খোলেনি পেরুর। ৫২ মিনিটের মাথায় দুজনকে বোকা বানিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে বেরিয়ে যান কুয়েভা। সেখান থেকে বল পেয়ে গার্সিয়া দুরপাল্লার শট নিলেও তা গোলমুখে রাখতে পারেননি।
৬১ মিনিটের মাথায় আবারও সুযোগ তৈরি করে পেরু। ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে একটু ভেতরে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন গার্সিয়া। তবে দ্রæততার সাথে মাটিতে পড়ে সেভ করেন এডারসন। ফিরতি বল জালে জড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন লাপাদুলা তবে মার্কিনিয়স সেটা বুঝে ফেলে তাকে বাধা দেন। পরে অবশ্য দেখা যায় লাপাদুলা ছিলেন অফসাইডে।
সফরকারীদের আক্রমণের ঢেউ সামলে ব্রাজিলের খেলায় এরপর কিছুটা ছন্দ ফিরে আসে। ৭১ মিনিটের মাথায় নেইমারের বাড়ানো লম্বা থ্রু থেকে বক্সের ভিতরে ঢুকে পড়েন রিচার্লিসন। করজো তাকে ফেলে দিলে ব্রাজিলিয়ানরা পেনাল্টির জন্য জোরালো আবেদন জানালেও রেফারি তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অনড়।
নেইমার অবশ্য এরপর দেখিয়েছেন পায়ের কারুকাজ। তবে পেরুভিয়ানদের মার্কিংয়ের কঠোর বলয় ভেঙে গোলমুখে তেমন একটা ত্রাস সঞ্চার করতে পারেননি, উলটো বেশ কয়েকবার হয়েছেন ফাউলের শিকার। সমতায় ফেরার জন্য মরিয়া পেরুভিয়ানর ৮১ মিনিটের মাথায় পেয়েছিলো আরেকটা সুযোগ। ইয়োতুনের দারুণ ক্রস খুঁজে নিয়েছিল অরক্ষিত অবস্থায় থাকা কালেনসকে। তবে তা একেবারেই সদ্ব্যবহার করতে না পেরে হেডে তিনি বল পাঠান বাইরে।
শেষ দশ মিনিটে অবশ্য দুই দলের খেলাই ছিল বেশ ছন্নছাড়া, এদিক সেদিক দেখা গিয়েছে দৃষ্টিকটু ফাউল। শেষের দিকে গিয়ে পাকেতাকে নিয়ে জেগেছিল শঙ্কা। প্রথমার্ধেই হেড দিতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন পাকেতা, ম্যাচের শেষ দিকে এসে ফাউলের শিকার হয়ে সেই আঘাতটাই আবারও শঙ্কা জাগায়। তবে চিকিৎসকদের তত্ত¡াবধানে সেই যাত্রায় বিপদ না ঘটলেও তাকে তিতের ৯০ মিনিট খেলানোর সিদ্ধান্তটা কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। লা বøাঙ্কিরোহারা ব্রাজিলের রক্ষণের আর কোনও পরীক্ষা নিতে না পারায় ব্রাজিল উঠে যায় টানা দ্বিতীয় ফাইনালে।
ব্রাজিলের রক্ষণ এদিনও ছিল দুর্ভেদ্য। তবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে ফরোয়ার্ডদের গোলখরা তিতের কপালে ভাঁজ ফেলবে নিশ্চিত। নিজেদের দশম কোপা শিরোপা ঘরে আনতে নেইমারদের গোলমুখে ফর্ম দ্রæত ফেরার জন্যই মুখিয়ে থাকবেন সমর্থকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন