আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : গোটা খুলনায় রাজনৈতিক দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নের গ্রামের অলিতে গলিতে প্রার্থীরা নির্বাচনী কর্মকা- শুরু করে দিয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার এখন থেকে শোভা পাচ্ছে এলাকার মোড়ে মোড়ে বাজার-ঘাটে ও বিভিন্ন জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। দোয়া চাইতে এখনই নেমে পড়েছেন বাড়ি বাড়ি অনেক প্রার্থীরা। তবে এবার আ’লীগ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় মনোনয়ন নেয়ার জন্য প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। খুলনায় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই এখনও শুরু করতে পারেনি। তবে দলের স্থানীয় নীতি নির্ধারক মহলে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। সূত্রমতে, ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে প্রায় আড়াইশ’ প্রার্থী আবেদন করেছেন। প্রাথমিকভাবে এসব প্রার্থীরা মনোনয়ন বোর্ডে হাজিরা দিয়েছেন এবং নেতারা তাদের ইন্টারভিউ নিয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের কাছে রয়েছে এসব নেতাদের দীর্ঘ দিনের আমলনামা। মনোনয়ন বোর্ডে ২১ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছাড়াও এলাকার বাঘা বাঘা প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নের পক্ষে জোরালো যুক্তি স্থাপন করেছেন। গতবারে বিএনপির সহযোগিতায় নির্বাচিত বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ হেমায়েত আলী ও ফুলতলার জামিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ড. মামুন রহমান এবার বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডে হাজির হননি। এ ব্যাপারে শেখ হেমায়েত আলী বলেন, আমার ব্যক্তিগত কারণে মনোনয়ন বোর্ডে হাজির হইনি। আমি কোন বলায়ে নির্বাচনে অংশ নিব তা এখনও ঠিক করিনি। এদিকে বিএনপির অনেক জনপ্রিয় নেতা দলীয় মনোনয়ন না চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য তৈরি হচ্ছেন। পরিস্থিতি বুঝে গায়ে কাঁদা না লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। খুলনা জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে এখন নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়ে গেছে। দলীয় প্রতীকে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় দলীয় কাউন্সিলরদের কদরও বেড়েছে। ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সম্পাদকসহ স্থানীয় তৃণমূলের নেতারা এখন প্রার্থীদের কাছে বেশ মূল্যায়িত হচ্ছে। চাঙ্গা হচ্ছে তৃণমূলের রাজনীতি। খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ত্যাগী নেতা বলে পরিচিত অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বিএনপির ইউনিয়ন নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ডের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি জনগণের দল। জনগণ যার পক্ষে বিএনপিও তার পক্ষে। তাছাড়া দলীয় প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে আন্দোলন সংগ্রামে যারা নির্ভীকভাবে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়িত করা হবে। বসন্তের কোকিলদের কোন সুযোগ দেয়া হবে না। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে। কারণ বিএনপি যাদের মনোনয়ন দিচ্ছে তারা জনগণের প্রকৃত নেতা। অপরদিকে, মাঠ পর্যায়ে মনোনয়নের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা পোস্টারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মাঠ গরম করেছেন। প্রতিটা ইউনিয়নে একাধিক প্রভাবশালী প্রার্থী এখন থেকেই নির্বাচনের মাঠ চষতে শুরু করেছেন। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এমপিদের সাথে জোর লবিং গ্রুপিং অব্যাহত রেখেছেন। তারা এসব প্রভাবশালীদের কাছে মনোনয়নের জন্য ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীনদলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। যে কারণে নির্বাচনের মাঠে নিজের অস্তিত্বকে শোডাউন করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন নেতারা দলের হাই কমান্ডের অনেকের গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থীরা কেউ না কেউ জেলা উপজেলার কর্ণধর কোন না কোন নেতার আস্থাভাজন। মনোনয়ন প্রতাশীরা তাই তাদের লাইনের হাইকমান্ডকে তুষ্ট করতে চালাচ্ছেন নানা তদবীর, দেন দরবার। এদিকে, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক হুইপ এসএম মোস্তফা রশীদি সূজা এমপি ইনকিলাবকে বলেন, মনোনয়নের মাধ্যমে প্রার্থী দেয়া হবে। কেন্দ্রের নির্দেশেই আমরা যথা সময়ে প্রার্থী সিলেকশন করব। যদিও চূড়ান্ত কোন রূপরেখা এখনও হয়নি তবে জেলা উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন দলের সভাপতি সম্পাদক সমন্বয়ে গঠিত একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে হয়তো দলীয় প্রার্থী বাছাই হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের দল তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই হবে। যাদের সাথে জনগণের অধিক সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদেরকেই মনোনয়ন দেয়া হবে এবং আশা করি জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে। অপরদিকে, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর কিছু নেতাকর্মী নির্বাচনের মাঠে কাজ করছেন। জাপা’র প্রার্থীরা পোস্টার ব্যানার ছাপলেও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হাঁটছেন অতি কৌশলে। নিজের পিট বাঁচিয়ে কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া যায় সেদিক বিচার বিশ্লেষণ করে তারা পা ফেলছেন। হামলা মামলার ভয়ে অনেক নেতারা এখনও মুখ খুলছে না। তবে তাদের অনুসারীরা বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন