শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে বিব্রত সরকার ও প্রশাসন

তদন্ত কমিটি আসার ভয়ে বগুড়া ও নন্দীগ্রামে আশ্রায়ণ প্রকল্পে চলছে মেরামত

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ৫:২০ পিএম

মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো এখন গ্রহীতাদের কাছে গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। আর সরকার ও প্রশাসনের

জন্য তৈরি করেছে বিব্রত পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে নয়ছয়ের প্রমানিত অভিযোগে বগুড়ার শেরপুর ও শাজাহানপুরের ২ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ওএসডি করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে । তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘর নিয়ে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত ও আলোচিত ব্যক্তি বগুড়া সদরের নির্বাহী অফিসার আজিজুর রহমান ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে অনিয়মের প্রেক্ষিতে উচ্চতর তদন্ত কমিটি আসবে মর্মে অবহিত হয়ে তড়িঘড়ি করে বগুড়া ও নন্দীগ্রামে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘরগুলোর মেরামত ও মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে বগুড়ার নন্দীগ্রামে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে থাকায় আশ্রিতদের জন্য এখন ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠেছে। দেয়াল ধ¦সে দুর্ঘটনার শঙ্কায় ভূমিহীনরা এখনো ঘরে উঠতে সাহস পাচ্ছেননা। কেননা এগুলো নির্মানের মেয়াদ ৬ মাস পেরোবার আগেই ঘরের মেঝেতে ফাটল ধরেছে। সিমেন্টের পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে। টিন চঁইুয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। ফলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ফাটল ধরা ঘরে থাকতে চাচ্ছেননা ভূমিহীনরা।
ভুক্তভোগি ভূমিহীনরা জানান, মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে গোছন ও গোপালপুর পুকুরপাড়ের অনেক ঘরে ছয় মাসের মধ্যেই দেখা দিয়েছে দেয়াল, মেঝে ও বারান্দার পিলারে ফাটল। দাসগ্রাম পুকুরপাড়ে ১৭টি নির্মাণ করা ঘরে কেউ এখনো উঠেননি। সেখানে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই। যার ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ঘরগুলো। এদিকে গোপালপুর পুকুরপাড়ে ঘর বরাদ্দ পায় জালাল মন্ডল। তার ঘর এখনো ফাঁকা রয়েছে। এখনো ঘরে উঠেননি। তবে তার ঘরের বারান্দার পিলার ভেঙে পড়লে তড়িঘড়ি করে মেরামত করা হয়েছে। সরকারের ঘর পাওয়া রিয়াজ উদ্দিন, শাহীনুর, হালিমা বিবি, আশরাফ আলীসহ অনেকে জানান, তাদের বেশ কয়েকটি ঘরের মেঝেতে ফাটল ধরেছে।

তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু তাহের এপ্রসঙ্গে বলেন, কোনো ঘরের বারান্দার পিলার ভেঙে পড়েনি। কেউ হয়তো ঠেলা দিয়ে ফেলে দিয়ে থাকতে পারে। যে ঘরগুলো একটু ফাটল ধরেছে, সেগুলো মেরামত করে দেয়া হচ্ছে।
তবে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত বলেন, আমার সময়ে কাজগুলো করা হয়নি। উপভোগীরা কোন কারন ছাড়া তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে উঠছেনা বলেই অনেক ঘর খালি আছে। কিছু কিছু ঘর মেরামত করা হচ্ছে। ঘরে না ওঠার কারনে এবং ঘর গুলো পড়ে থাকতে থাকতে থাকতে কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তাই মেরমাত হচ্ছে। ঘর বরাদ্দ প্রাপ্তদের এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি ঘরে না উঠে, তাহলে ঘর বাতিল করা হবে।
একই চিত্র দেখা গেছে বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়নের চাঁদমুহা হরিপুর গ্রামের আবাসন প্রকল্পে। শুক্রবার এই প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায় মোট ৬০টি বরাদ্দকৃত ঘরের অর্ধেকটাই খালি পড়ে আছে। যারা আছেন তাদেরও বেশিরভাগ বাবা ভাই বা আত্মীয় স্বজনের বরাদ্দের বিপরীতে অবস্থান করছেন । বর্ষার শুরতেই প্রকল্পের পাশের বিলের পানি ঘরে প্রবেশ করে টয়লেট,বাথরুম, কিচেন নষ্ট করে

ফেলেছে। অনেকগুলো ঘরের মেঝের প্লাষ্টার উঠে গেছে। কোন কোন ঘরের মেঝে দেবে গেছে।
এই প্রকল্পের রাস্তায় চলছে মাটি ভরাটের কাজ। বগুড়া সদরের নির্বাহী অফিসারের পক্ষে এখানে বিট বালু ফেলে মাটি ভরাটরে কাজ তদারকি করছেন আমরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তবে তিনি বগুড়া উপজেলা অফিসের কর্মি নাকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ব্যাক্তিগতভাবে নিয়োজিত ঠিকাদার তা’ জানাতে অস্বিকৃতি জানিয়েছেন । মাটি ভরাটের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা উনি ( আশরাফুল ) আমাদের দিন হাজিরার টাকা দিচ্ছেন , উনি আজিুজর স্যারের লোক ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বগুড়া সদরের পি আই ও ( প্রকল্প বাস্তবায়নকারি কর্মকর্তা ) এব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি । তারা রোববার অফিস টাইমে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। একজন আওয়ামীলীগ নেতা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, প্রশাসনের উচ্চ মহলে বেশ দহরম মহরম আছে ওনার। তাই শতশত অভিযোগ স্বত্তে¡ও তিনি সাড়ে তিন বছর ধরে বগুড়ায় অবস্থান করছেন । এরই মধ্যে তিনজন ডিসি বগুড়ায় যাওয়া আসা করলেও উনি (ইউএনও আজিজুর রহমান ) বগুড়ায় ঠিকই বহাল থেকে সরকারের ভাবমুর্তি ঠিকই নষ্ট করছেন ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন