বৃহস্পতিবার তখন বিকেল আনুমানিক ৫টা। নিচ তলায় আগুন লাগার সংবাদে কেউ ছুটাছুটি করে উপরে উঠতে থাকে। আবার কেউ নিচে নামার চেষ্টা করে। কেউ লাফিয়ে আগুনের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। আবার কেউ সিঁড়ি বেয়ে। আবার কেউ কেউ কর্মস্থলেই আটকা পড়ে যান। এর মধ্যে প্রায় ৩০ জনের মতো নারী শ্রমিক ভবনের ছাদে উঠে বেকায়দায় পড়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোয়া উপরের দিকে উঠতে থাকলে প্রাণ বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন ছাদে থাকা শ্রমিকরা। তাইজুল ইসলাম নামের এক ইলেকট্রিশিয়ান ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নিয়ে ছাড়ে লম্বা দড়ি পাঠায়। সেখান থেকে ফিল্মি স্টাইলে দড়ি বেয়ে ওই ৩০ শ্রমিক ৬তলার ছাদ থেকে নেমে এসে প্রাণে বেঁচে যায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেড কারখানায় ৬তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বেঁচে যায় ওই শ্রমিকরা।
যে ২৫-৩০ জন শ্রমিক তিনি নামিয়েছেন দড়ি দিয়ে ছাদ থেকে নামিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ আহত হননি। শ্রমিকদের ছাদ থেকে নামাতে গিয়ে তাজুল ইসলাম নিজেই কিছুটা আহত হন। হাসেম ফুড কারখানায় তাজুল ইসলাম ওই ভবনের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইলেকট্রেশিয়ান তাজুল ইসলাম জানান, বিকেল ৫ টার দিকে তিনি ওই ভবনের পাচঁতলায় ইলেট্রিক্যাল কাজ করছিল। হঠাৎ করে গ্যাসের গন্ধ পেয়ে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে চারদিকে ছুটোছুটি করতে থাকে। এসময় আগুন লাগার খবরে ৫ তলার শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে ভবনের ছাঁদে চলে যায়। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উপর দড়ি পাঠালে তাজুল ইসলাম একাই প্রায় ৩০ জন নারী শ্রমিককে নিচে নামিয়ে আনেন। যাদের তিনি দড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন তারা সবাই সুস্থ্য রয়েছে। তাজুল ইসলাম আরো বলেন, আমি নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই কাজটি করেছি। আমি নিজেই এখন একটু অসুস্থ্য তাই এখন আর আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না।
উল্লেখ্য, সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেড নামে একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আরো ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২ জনে। শুক্রবার বিকেল ৩ টার দিকে হাসেম ফুড কারখানাটির চতুর্থতলা থেকে ৪৯ টি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক অপারেশন অফিসার জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতদের স্বজনরা কারখানার চারপাশে ভীড় জমিয়েছে। স্বজনদের আহাজারিতে কারখানার আশপাশে ভারি হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে দেরি হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিক শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও ভাংচুর চালায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটায়। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুডের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আনসারদের মারধর করে অস্ত্রাগার থেকে তিনটি শর্টগান লুট করে নিয়ে যায় বলে জানান উপজেলা আনসারদের ইনচার্জ নাছিমা বেগম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন