শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে শোক

শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ৮:২৫ পিএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫২ জন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একসাথে এত শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ জানিয়ে দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি তুলেছেন নেটিজেনরা। সেই সাথে শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। অনেকে অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার তৎপরতায় ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছেন।

রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবারের এই অগ্নিকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারখানা থেকে এসব লাশ বের করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই পোড়া লাশ। চেনার উপায় নেই। লাশ ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। অতিরিক্ত লাশের ভীড়ে যেন ঠাঁই হচ্ছে না মর্গে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘রূপগঞ্জের সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়ে মারা গেলেন অন্তত ৫০ শ্রমিক। এ ছাড়াও আহত অর্ধশতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। অত্যন্ত দুঃখের খবর। সেজান জুস ফ্যাক্টরি কোনো হাইরাইজ বিল্ডিং ছিল না। তবু সেখানে ২০ ঘন্টা ধরে আগুন জ্বললো। শতশত শ্রমিক আটকা থেকে প্রাণ দিলো। আমরা কি এই আগুন নেভাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা প্রয়োগ করেছি, বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুন নেভাতে যা দেখেছিলাম? রাজধানীর উপকণ্ঠে একটি ৬ তলা ভবনে ২০ ঘন্টা ধরে আগুন জ্বলতে থাকা রাষ্ট্রের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমি এক আগে বহুবার বলেছি, যদি বাজেটে স্বল্পতা থাকে তো ছয় লেন প্রকল্প, মেট্রোরেল, সেতুর দুয়েকটি প্রকল্প বাদ বাদ দিন। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য, দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করুন। ফায়ার ফাইটিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি, নদীতে ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারে উন্নত উদ্ধারকারী জাহাজ, দ্রুত ধংসস্তুপ অপসারণে সক্ষম যন্ত্রপাতি ক্রয় করুন। বাজেট স্বল্পতাই বা হবে কেন? আমাদের রিজার্ভ থেকে বিদেশীদের ঋণ দেয়ার চেয়ে জনগণের জীবন বাঁচাতে খরচ করুন। সিঙ্গাপুর, কানাডার মতো উন্নত দেশ শুধু মুখে বললে হবে না, বাস্তবে দেখান।’’

চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে আহমেদ আফফান লিখেছেন, ‘‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবেনা এটা হচ্ছে আগুনে পুড়িয়ে মর্মান্তিক হত্যা।খাঁচার মধ্যে আঁটকে রেখে শ্রমিক বন্দী করে কাজ করতে বাধ্য করানো এক ধরনের অমানবিকতা।অমানবিকতা'র ফলস্বরূপ এই হত্যা। খাঁচায় বন্দী শ্রমিক মরবে পুড়বে গলবে এটা আর কতো দেখবো?? বিবেকবোধ আর কতো শ্রমিক পুড়লে জাগবে??

মোজাম্মেল হক লিখেছেন, ‘‘আগুনে পুড়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শই ঘটে। কত মানুষের স্বপ্ন আগুনের থাবায় বিলীন হয়ে যায়। সন্তান হারানোর শোক খুব কষ্টের। এই শোক তাকে যন্ত্রণা দিবে জীবনের বাকি সময়টুকু। পিতা-মাতা জীবিত থাকাবস্থায় যদি সন্তান মৃত্যুবরণ করে তাহলে সেই সন্তানের পিতা-মাতার ধৈর্য ধারণ করাটা খুব কষ্টের হয়ে যায়। তখন ধৈর্য ধারণ করা উত্তম।’’

শ্রমিক নিরাপত্তা না থাকায় কারখানা মালিকের সমালোচনা করে আব্দুর রাজ্জাক রনী লিখেছেন, ‘‘এটা কোনো কথা হলো, এতো নামি-দামি কোম্পানির কারখানা অথচ নাকি কোনো জরুরি ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি নেই! আমি এই কোম্পানির মালিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি যারা প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কিন্তু শ্রমিকদের জীবন বাঁচানোর জন্য সিঁড়ি নির্মাণ করে না! আমি ক্ষুব্ধ, আমি বাকরুদ্ধ, আমি ভীষণভাবে শোকাহত!’’

জাহিদ হোসাইন জাহিদ লিখেছেন, ‘এসব দেখে আর কষ্ট হয়না। সারাজীবন শুধু পুঁজিবাদের কুফল সম্পর্কে কার্ল মার্ক্সের দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীই দেখে গেলাম। কিন্তু এর পরের স্টেজটা কখনও আসলোনা। মৃত্যু অবধারিত জেনেও সমাজের এই মজুর বা শ্রমিকশ্রেণিকে কর্মে যোগ দিতে হয় দুমুঠো ভাতের আশায়! আর পুঁজিপতিরা সেটারই সুযোগ নেই। কখনও শ্রমিকদের নিরাপত্তা তাদের মনকে ভাবাতে পারেনি।’’

কামরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘এই রক্তপিপাসু মালিকরা বলেছিলো কারখানা খোলা না রাখলে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। আজ এদের লোভের জন্য ৫০টি পরিবার নিঃস্ব।এদের হাজার কোটি টাকা লাভ হলেও এদের ১০ দিন অফ রাখলেই নাকি এরা শেষ হয়ে যায়, এরা কখনোই শ্রমিকের নিরাপত্তার কথা ভাবে না।এদেশের শ্রমমন্ত্রনালয় যারা দায়িত্বে থাকে ওদের হাতেও রক্ত লেগে থাকে শ্রমিকের। এসব জুলুমবাজদের বিচার আল্লাহ করবে।’’

মির নাজমুল লিখেছেন, ‘‘কারখানা পরিদর্শক দপ্তর, শ্রম দপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, ভবন নির্মাণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এতোগুলো দপ্তর থাকার পরেও এবং তাদের নিয়মিত তদারকির পরেও অগ্নিকান্ডের ঘটনা এবং অগ্নিকান্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোর কারণে কেনো এতো প্রাণ ঝড়ে গেলো এই উত্তর কে দেবে! আমরাতো নিভৃত চেতনার জনতা তাই এই জবাব আদায় করার দরকারও হবেনা।’’

শোক প্রকাশ করে হারুনুর রশিদ লিখেছেন, ‘‘হে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতবাসী বানিয়ে দাও আমরা দুনিয়ার আগুন সয়ার ক্ষমতা নাই তুবুও দুনিয়ার আগুনে মৃত্যু বরন করেছি জানি না জীবনে কি আমল করেছি আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নাম আগুন হেফাজত কর আমাদের দয়া কর মালিক।’’

মোহাম্মাদ ফয়সাল রকি লিখেছেন, ‘‘কতটা তুচ্ছ মানুষের জীবন এই দেশে।এদের রক্ত ঝরানো টাকা দিয়ে আমাদের মত কিছু অমানুষ দের সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এইসব এর কৈফিয়ত তো এক জায়গায় দেওয়া লাগবেই। কি উত্তর দিব সেদিন।’’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন