নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। কারখানা থেকে লাশ বের করার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রোল পড়ে যাচ্ছে। কেউ কাঁদছেন সন্তানকে হারিয়ে, আবার কেউ আহাজারি করছেন মা-বাবাকে হারিয়ে। বেঁচে নেই নিশ্চিত হয়েও শুধু প্রিয়জনের দেহাবশেষের ছুঁয়ে দেখতে বুক চাপরাচ্ছেন কেউ কেউ। মর্মান্তিক এ ঘটনায় পুরো রূপগঞ্জই যেন কাঁদছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৪৯ জনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আগের রাতে মারা যাওয়া তিনজনসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জন হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই পোড়া লাশ। চেনার উপায় নেই।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই কারখানা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে শ্রমিকরা ভবনের ছাদে জড়ো হন। ছাদসহ বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে। এতে ওই রাতেই তিনজনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, আহতও হন বেশ কিছু শ্রমিক।
ভবনের চতুর্থ তলায় ললিপপ, তরল চকলেট, তৃতীয় তলায় অরগানিক পানীয় (জুস, লাচ্ছি), দোতলায় টোস্ট বিস্কুট, বিভিন্ন ধরনের পানীয় এবং নিচতলায় বাক্স ও পলিথিন তৈরির কারখানা ছিল। পঞ্চমতলার একপাশে সেমাই, সেমাই ভাজার তেল, পলিথিন; অপর পাশে কারখানার গুদাম ছিল। কারখানার ষষ্ঠতলায় ছিল কার্টনের গুদাম। টানা ১৮ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় ভবনটিতে ফাটলও দেখা দেয়।
মো. আবদুল জলিল ও মো. আবু সামাদ নামের দুজন শ্রমিক জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে ১০০০-১২০০ শ্রমিক কাজ করতো।
ছয়তলা কারখানা ভবনের ওপরের দুই ফ্লোরে এখনো আগুন জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি অভিযানও চলছে।
তবে কারখানার একটি সিঁড়ি বন্ধ না থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিষ বর্ধন। ঘটনাস্থলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গাড়ির মই সেট করে ছাদ থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করেছি। বাকিরা যদি ছাদে উঠতে পারত, আমরা কিন্তু বাঁচাতে পারতাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন