শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ইজারা শর্ত ভঙ্গ করে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে নদী তীর রক্ষা বাঁধ

প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী-ভাটিয়াপাড়া-টুঙ্গিপাড়া রেললাইন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে মধুমতি নদী থেকে বালু উত্তোলনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইজারা শর্ত ভঙ্গ করে ওই কোম্পানি উপজেলার করফা, চরফুকরা, জয়বাংলা খেয়াঘাট ও চর কালনা ফেরীঘাট এলাকায় মধুমতি নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে গত ১৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনউদ্দীন জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ম্যাক্স গ্রুপ বালু ফেলে রেল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ জন্য তারা কাশিয়ানী উপজেলার মধুমতি নদীর ৪টি বালু মহল ইজারা নিয়েছে। ইজারাকৃত বালু মহালের নির্ধারিত স্থানের বাইরে গিয়ে ড্রেজার দিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছে। ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ এবং পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে। ম্যাক্স গ্রুপের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার মনোয়ার হোসেনকে মোবাইল ফোনে সঠিক স্থান থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বলা হয়। কিন্তু ড্রেজার মালিকরা তা মানছে না।’ অন্যদিকে স্থানীয়রাও মধুমতি নদী থেকে ম্যাক্স কোম্পানি অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপরে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই বলেও স্থানীয়রা জানান। চরকালনা গ্রামের দবির উদ্দিন জানান, কাশিয়ানী উপজেলায় সরকারিভাবে ৪টি বালু মহল ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো চর ফুকরা, ইতনার চর (জয়বাংলা খেয়াঘাট), করফা, ও চর কালনা ফেরিঘাট। এসব এলাকা পাউবো কর্তৃক পরিমাপ ও স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। ম্যাক্স কোম্পানি এগুলো ইজারা নিয়েছে। তারা চিহ্নিত স্থানের বাইরে গিয়েও ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। চর ফুকরা গ্রামের ওসমান আলী জনান, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীর শংকরপাশা, ফুকরা এলাকার তীর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছপালা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, রাস্তা-ঘাট, দোকানপাট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে আমাদের অনেক পরিবারের। বালু উত্তোলন নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে ড্রেজার মালিকদের কয়েক দফা মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, সরকার দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ম্যাক্স কোম্পানির বালু উত্তোলনে কাজ পেয়েছেন। ফলে নিয়মনীতি ছাড়াই তারা তাদের ইচ্ছামতো বালু উত্তোলন করছে। আমাদের জায়গা থেকে বালু উত্তোলনে বাধা দিলে ড্রেজার মালিকরা নিজস্ব বাহিনী নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ফুকরা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সেলিম খান বলেন, ‘ম্যাক্সে কোম্পানির লোকেরা আমাদের জমির তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে যায়। এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে কাশিয়ানী থানা পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে টাকার বিনিময় ছাড়া পাই।’ উপজেলার ফুকরা গ্রামের বাসিন্দা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমি এবার যে জমি থেকে ৩০ মণ বাদাম পেয়েছি, সে জমি ঘেঁষে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে ম্যাক্স কোম্পানি। চর কালনা গ্রামের ফিরোজ খান (পিন্টু) বলেন, ‘নদীর তীর ঘেঁষে আমার প্রায় ৬ একর জমি রয়েছে। কিন্তু এভাবে বালু উত্তোলন করলে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমার জমি নদীতে বিলীন হবে।’ ‘মধুমতি নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ম্যাক্স কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) আব্দুল ওহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি। কাশিয়ানী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা ম্যাক্স কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) আব্দুল ওহাব সাহেবকে একাধিক বার সতর্ক করেছি।’ গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মোকলেছুর রহমান সরকারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন