রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় প্রতিদিনই রোগীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কিন্তু অধিকাংশ রোগীদেরই ২৬ কি.মি. দূরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ফলে গরিব রোগীদের চিকৎসা নেই বললেই চলে।
চরখানখানাপুর জজপাড়া গ্রামের মৃত তাজেম শেখের ছেলে খোরশেদ শেখ জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর অধিকাংশ ওষুধ বাইরের দোকান থেকে ক্রয় করতে হয়। বয়স্ক ভাতার কিছু টাকা দিয়ে দোকান থেকে ওষুধ কেনার পর এখন হাত শূন্য হয়ে পড়েছে। অপর রোগী গোয়ালন্দ পৌসভার ৯নং ওয়ার্ডের কছিমুদ্দিপাড়া গ্রামের শাজাহান শেখ জানান, পেটের ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরের দোকান থেকে। হাসপাতালের টয়লেটে কোনো বাল্ব নেই। অন্ধকারের মধ্যেই মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে টয়লেট করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, রোগীদের খাসির গোশত, ইলিশ মাসের পরিবর্তে বয়লার মুরগি, ছোট সিলবারকার্প ও চাষের ১ টুকরো পাঙাশ মাছ দেয়া হয়। তরকারিতে হলুদ, তেল ও লবণ ছাড়া অন্যকোনো মসলা বা সবজি দেয়া হয় না। হাসপাতালের রোগীদের রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে দালালরা রোগীদের টেনে হেচড়ে নিয়ে যায়। হাসপাতালের টেক্সনিশিয়ান আমিনুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে এক্সে মেশিনটি প্রায় আড়াই বছর ধরে অচল। নতুন ১টি মেশিন আনা হলোও উক্ত মেশিনটি নিম্নমানের ও সাদা কালো এক্সে হয়। এক্সেমেশিন রুমে এসি মেশিনটি এখনো ঢাকা থেকে পৌঁছায়নি। ফলে নতুন এক্সেমেশিনটি এখনো চালু হয়নি বলেও তিনি জানান।
জানা যায়, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থাকলেও গত ৮ বছর ধরে এনেস্থেসিয়া ডাক্তার না থাকায় সকল প্রকার অপারেশন বন্ধ আছে। হাসপাতালের ২য় তলার টাইলস্ েবিভিন্ন জায়গায় ফাঁটল দেখা যাওয়ায় রোগীদের চলাফেলা ব্যহত হচ্ছে। হাসপাতালে সরকারি কোনো সুইপার না থাকায় রোগীদের দিনরাত দুর্গন্ধ পোহাতে হয়। উজানচর ইউনিয়নের সাব-সেন্টারে (মৃধাডাঙ্গা) সরকারি প্রচুর পরিমাণ মূল্যবান ওষুধ বিক্রির জন্য মজুদ করা হয়। উক্ত ওষুধ উদ্ধার করা হলেও তদন্ত কমিটির সাথে জড়িতদের কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না করে ধামাচাপার দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিমাসে ৯০ থেকে ১০০ জন সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভর্তি হয়। অধিকাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালে ২১ জন ডাক্তারের স্থলে ৯ জন রয়েছে। ৪ জন ডাক্তারকে অত্র হাসপাতালে বদলি করা হলেও সকলেই এখনো যোগদান করেনি। ফলে ডাক্তার সঙ্কট রয়েছে। ২৫ জন নার্সের স্থলে ১৮ জন রয়েছে। হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সুইপার নেই। তিনি আরো জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা রোগীর চাপে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালের পরিস্কার পরিছন্নতার জন্য সম্প্রতি ৩ লাখ টাকা পাওয়া গেলেও ৩ দিনের মধ্যে ৮/১০ জন শ্রমিক দিয়ে হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে নামমাত্র ঘাস-আগাছা পরিস্কার করা হয়। ডা. আসিফ মাহমুদ জানান, উজানচর সাব-সেন্টার থেকে সরকারি উদ্ধারকৃত ওষুধ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের। স্বাস্থ্য বিভাগের নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন