এই সময়ে আদ্রতা ও রোদের তাপে চুলের নানা সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সামনে খুশির ঈদ। এই ঈদে চুলকে নরম, কোমল এবং প্রাণববন্ত রাখতে চাই বিশেষ যত্ন। প্রায়ই এখন বৃষ্টি হচ্ছে সাথে রোদ্র গরম। কাজ লকডাউন আর কোরবানীর চিন্তায় মাসটি চলে যাচেছ নিমিষেই। এমনি সময়ে বাইরে বেরলে পাঁচ মিনিটেই চুলের দফারফা। রোদ থেকে শুধুমাত্র যে ত্বকেরই ক্ষতি হয় তা তো নয়, চুলের জন্যও একই রকম ক্ষতিকারক। আর পাশাপাশি ঘামে ভেজা স্ক্যাল্প থেকে নানা ধরনের সমস্যাও অবধারিত। সামনে ঈদকে সামনে রেখে এই সময়টায় নরম এবং চকচকে চুল বা ঝলমলে চুল পেতে আজই শুরু করুন সঠিক যত্ন।
স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুন
অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। শ্যাম্পুতে থাকা নানা ধরনের কেমিক্যাল চুল শুষ্ক করে দেয়, চুল রু² হয়ে যায় ইত্যাদি। তবে প্রতিদিন শ্যাম্পু না করলে সমস্যা আরও বাড়বে। যাঁদের প্রতিদিন বাইরে বেরতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে রাস্তার ধোঁয়া, ধুলো স্ক্যাল্পে জমা হয়ে চুলের গোড়া বন্ধ করে দেয়। ফলে গ্রোথেরও সমস্যা হয় এবং চুল ও স্ক্যাল্পের যাবতীয় সমস্যাও দেখা দেয়। শুধু বাইরে বেরলেই যে স্ক্যাল্পে ময়লা জমে তা নয়। বাড়িতে থাকলেও ঘাম জমেও স্ক্যাল্পের ক্ষতি হতে পারে। তবে এটাও ঠিক যে, প্রতিদিন অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রতিদিন শ্যাম্পু করার ক্ষেত্রে মাইল্ড বা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
হেয়ার কন্ডিশনিং
অবশ্যই কন্ডিশনিং করতে ভুলবেন না। অনেকেই সময়ের অভাবে প্রতিবার কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। এতে চুল রূক্ষ হয়ে যায়। বিশেষত গরমকালের সূর্যের প্রখর রোদে, চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন শ্যাম্পুর পাশাপাশি কন্ডিশনিংও গুরুত্বপূর্ণ।
রোদ থেকে সুরক্ষা
গরমকালে সূর্যের প্রখর রোদ থেকে চুলকে বাঁচানো খুব কঠিন। খুব বেশিক্ষণ স্কার্ফ বা টুপি পরে থাকলেও ঘামে স্ক্যাল্প ভিজে নানা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আলাদা করে যতœ নেওয়া প্রয়োজন। এখন বহু লিভ-ইন কন্ডিশনার বা সিরাম বাজারে পাওয়া যায়, যা ইউ-ভি প্রোটেকশন যুক্ত। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। অথবা একটা ছোট্ট টিপস ট্রাই করতে পারেন। শরীরে সানস্ক্রিন মাখা হয়ে গেলে, একবার ওই হাত চুলের ওপর বুলিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন হাতে আলাদা করে সানস্ক্রিন না থাকে। এতেও চুলের ওপরের স্তরে একটি হালকা আস্তরণ পড়ে, যা রোদ থেকে চুলকে রক্ষা করে। চুল লালচে হয়ে যাওয়া থেকে আটকায়।
অয়েল মাসাজ
চুলকে গভীরভাবে নারিশ করতে হট কোনও বিকল্প হয় না। আর যেহেতু এই সময়, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন, তাই তেল না লাগালে, চুল রু² হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই একদিন অন্তর, রাতে অথবা শ্যাম্পু করার এক ঘন্টা আগে মাথায় তেল মাসাজ করুন। তবে সপ্তাহে একদিন ডিপ নারিশমেন্ট প্রয়োজন। নারকেল, অ্যাভোকাডো, অলিভ, আমন্ড ইত্যাদি তেল খুব সহজেই চুলোর গোড়াায় অ্যাবজর্ব হয়ে যায়। তাই এই সমস্ত তেল ব্যবহার করলে ভাল।
চুল অনুযায়ী হেয়ার প্যাক
গরমকালে রোদ থেকে বাঁচাতে চুলের প্রয়োজন অতিরিক্ত আদর। নানা ধরনের হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তেলে লেবু, ক্যামোমাইল, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরির মতো হার্ব মিশিয়ে, ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো প্রাকৃতিক উপাদান এবং রোদ থেকে হওয়া ক্ষতির হাত থেকে চুলকে বাঁচাতেও সাহায্য করবে।
১/৪ কাপ মধু নিয়ে হালকা গরম করে, এতে ১/৪ কাপ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণ একটু ঠান্ডা হলে, আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো চুল এবং স্ক্যাল্পে লাগান। এবার গরম জলে তোয়ালে ডুবিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। আধঘণ্টা রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। অলিভ অয়েলের পরিবর্তে নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
দু’টো ডিমের কুসুম এবং ২ টেবলচামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। পুরো চুলে লাগিয়ে ৪-৫ মিনিট মাসাজ করুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে আধঘণ্টা রেখে দিন। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু এবং ঠান্ডা জল দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন।
একটা গোটা পাতিলেবুর রস, ২ টো ডিমের কুসুম, একটা ডিমের সাদা এবং ১ টেবলচামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ১০-২০ মিনিট রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গরমের বা এই সময়ে জন্য বেস্ট সামারকুল হেয়ার প্যাক হল টকদই এবং আমন্ড অয়েলের মিশ্রণ। টকদই ড্যানড্রফ কমাবে, চুলকে নরমও করবে। আধকাপ টকদই, ২ টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল এবং ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ১-২ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন।
এই সময়টাতে চুলের বিভিন্ন সমস্যাগুলোর মধ্যে নির্জীব এবং জেল্লাহীন চুল অন্যতম প্রধান। এই হেয়ার প্যাকটি চুলকে শাইনি করতে এবং চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে অব্যর্থ। এককাপ নারকেল তেল, আধকাপ লেবুর রস, ৩ টেবিল চামচ শুকনো জবাফুলের গুঁড়ো এবং ২৫০ মিলি বিয়ার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। পুরো চুল এবং স্ক্যাল্পে ভালভাবে এই প্যাক লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। রু²তাও থাকবে না, আর চুলও হয়ে উঠবে নরম, কোমল এবং চকচকে।
হেয়ার স্টাইল
গরমে একেই ঘামের ঠেলায় অস্তির শেষ থাকে না। তার ওপর যদি কাঁধে, ঘাড় এলোমেলো চুল এসে পড়ে, তবে আর দেখতে হবে না! এছাড়া এতে ধুলো-ময়লাও বেশি জমবে। তাছাড়া, চুল খুলে রাখলে, রোদের তাপে রুক্ষ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই সবদিক ভেবে, চুল বেঁধে রাখাই শ্রেয়। এতে চুল সামলাতেও সুবিধে হবে। খুব টেনে বা টাইট করে বাধবেন না। কারণ এমনিতেই ঘামে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। এর উপর টান পড়লে চুল পড়া বেড়ে যাবে।
রোদে বেরলে মাথায় স্কার্ফ, হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার করুন। সুতির স্কার্ফ ব্যবহার করবেন। খুব টাইট কিছু মাথায় না লাগানোই ভাল। ঈদকে সামনে লেখে চুলকে ফ্রেশ রাখতে এবং চকচকে করে তুলতে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
এইসময় ঘামের মাধ্যমে শরীরের অনেক পানি এবং মিনারেলস বেড়িয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়াও প্রয়োজন। এতে চুল ভাল থাকবে। চুল ভাল রাখতে ডায়েটের ভূমিকা অনস্বীকার্য। টাটকা ফল, সবজি, প্রচুর পানীয় পান সাথে ডায়েট ও শরীর চর্চা এই ঈদে আপনার চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে ও তারুণ্যময়।
সহকারী অধ্যাপক (ডার্মাটোলজী)
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
অরোরা স্কিন এন্ড এয়েসথেটিকস
পান্থপথ, ঢাকা, প্রয়োজনে: ০১৭২০১২১৯৮২।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন