মোহাম্মদ ইয়ামিন খান
আমরা জানি, কাশ্মীর শব্দের অর্থ যদিও শুষ্ক ভূমি; কিন্তু কাশ্মীরকে বলা হয় পৃথিবীর ভূস্বর্গ। সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল স¤্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীর নামকরণ করেন। সেই নয়নাভিরাম কাশ্মীরের বাতাসে ভাসছে বারুদের গন্ধ। কাশ্মীরের সংকট নতুন কিছু নয়। কাশ্মীর অঞ্চল দুটো অংশের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। একটি হচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর এবং পক্ষান্তরে আজাদ কাশ্মীর অংশটি পড়েছে পাকিস্তানের মধ্যে। কাশ্মীর সমস্যা এবং কাশ্মীর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত সরকার, কাশ্মীরের বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে বিরোধ চলছে। কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ-সংঘাত শুরু ১৯৪৭ সাল থেকেই। ১৯৪৭ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীরের শাসক হরিসিং লর্ড মাউন্টব্যাটন ও নেহেরুর সাথে যোগসাজশ করে ভারতে যোগদান করেন। এদিকে কাশ্মীরের অধিবাসীরা মুসলিম হওয়ায় পাকিস্তানে যোগদানে আগ্রহী ছিল। সেই থেকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ শুরু। এমনকি এই নিয়ে বহু সংঘাত-যুদ্ধ ও রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটে গেছে। এর কোনো ফায়সালা আজ পর্যন্ত হয়নি। দীর্ঘ ৬৯ বছর ধরে কাশ্মীরের জনতা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করে যাচ্ছে। স্বাধীনতাকামী মুসলিম জনতার ওপর ভারতীয় হানাদার বাহিনী বহু দমন-পীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতি মুহূর্তে সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে, নির্বিচারে মা-বোনদের ধর্ষণ করছে, যুবকদের বন্দুকের বেয়োনেটের খোঁচায় চোখ তুলে ফেলছে এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, ১৯৪৭ সালেই দুই লাখ কাশ্মীরিকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীকাল থেকে এ পর্যন্ত লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। আহত হয় অসংখ্য। ধর্ষণও বেসুমার। এই জনগোষ্ঠীকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যা কিছু করা দরকার যা ভারত তার পক্ষে যা করা সম্ভব সবই করেছে। কিন্তু সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার পিছনে পাকিস্তানকে সম্পৃক্ত করে তাকে সমুচিত জবাব দিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম খবর দিয়েছে, কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গিদের হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় সেনারা সীমান্ত পেড়িয়ে পাকিস্তানি কাশ্মীরে ঢুকে ২০ জঙ্গিকে হত্যা করেছে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পক্ষান্তরে পাকিস্তান ভারতের এই বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সন্ত্রাসবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান টেড পো এবং কংগ্রেসম্যান ডানা রোহাবাবাগ একটি বিলে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
পক্ষান্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণদানকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘ভারতকে ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে পাকিস্তান।’ আজ কাশ্মীরকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের সৃষ্ট উত্তেজনা যেন যুদ্ধের দামামা বাধিয়ে দিচ্ছে। কাশ্মীরের এই অবস্থা দেখে মনে হয় মানবতা আজ সত্যিই ভূলুণ্ঠিত, মানবতা আজ চিৎকার করে কাঁদছে।
যাইহোক, যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে ভারত কখনোই সুযোগ দিবে না। এই সমস্যার সমাধান সম্ভব কেবল যদি কাশ্মীরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের দেশপ্রেম আর ঈমানি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন অনৈক্য সৃষ্টিকারী সকল ব্যবস্থাগুলো বন্ধ করে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা।
ষ লেখক : পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন