শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

কাপাসিয়ায় সুবর্ণ সময়ের বিবর্ণ আখ্যান

প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
আমরা গর্বিত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান হাজার বছরেও থাকবে অম্লান-অমলিন। তার সাহসী পদক্ষেপে জনতার অধরা স্বপ্ন আজ আলোর মুখ দেখছে। অথচ তার এ মহা কর্মকা-ের সারথী হলো না কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ। বরং ৫১ বছরেও বেসরকারিই রয়ে গেল। বেগম খালেদা জিয়া, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আব্দুস সামাদ আজাদ, সাজেদা চৌধুরি, ব্রি. জে. (অব.) আ.স.ম. হান্নান শাহ, আফসার উদ্দিন আহমদ খানসহ অনেকের মুখে কাপাসিয়া কলেজ সরকারিকরণের প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হলেও তা ফলদায়ী হয়নি। স্মরণ করতে হয়, মাত্র ১৮ টাকা ফান্ড নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার ফল কীর্তিময় হলেও বিসর্জনের মাত্রা কম নয়। ফান্ড কালেকশনে গিয়ে অনেকের বরমী ও ভৈরব বাজারে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল। এজন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও কলেজটি সরকারি না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাই মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত বোধ করা স্বাভাবিক। অনেকের বিষণœœ ভাবনা-কান্না সবই যেন এখন ব্যর্থ, ভুল বা নীরব হাহাকার মাত্র।
ঢাকা নর্থের বর্তমান গাজীপুর জেলায় ১৯৬৫ সাল অব্দি কোন কলেজ ছিল না। কাপাসিয়া কলেজ গাজীপুর জেলার সর্বপ্রথম কলেজ। কাপাসিয়া সদরে, কাপাসিয়া কলেজই প্রথম ও একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কলেজের স্বনাম খ্যাত শিক্ষার্থীবৃন্দের অন্যতম নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান ভাইস এডমিরাল (অব.) জেড ইউ আহমদ, রহমত আলী এমপি, বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও কাপাসিয়া উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, কলেজ পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো.ছানাউল্লাহসহ আরো অনেকে।
প্রতিষ্ঠাকালে যাদের অবদান চিরস্মরণীয় : ১। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ। ২। সাবেক মন্ত্রী ফকির আব্দুল মান্নান। ৩। ডা. মো. ছানাউল্লাহ্, সাবেক এমপি। ৪। মরহুম ছাদির মোক্তার। ৫। মরহুম মেছবাহ্ উদ্দিন উকিল। ৬। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ মরহুম আলতামাছুল ইসলাম। ৭। কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সৈয়দ এহসান উদ্দিন আহমেদ। ৮। কলেজের প্রথম ছাত্র মো. আতাউর রহমান।
বলবার অপেক্ষা রাখে না, কাপাসিয়া কলেজে আলোরদ্যুতি বিচ্ছুরণের এখনই সুবর্ণ সময়। অথচ এখন যেন তা হয়ে থাকলো এক বিবর্ণ আখ্যান!
‘কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ’ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের স্মৃতি-কীর্তিধন্য, জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পুণ্যস্পর্শে উদ্বোধনকৃত উপজেলা সদরে অবস্থিত। ৫১ বছর শিক্ষার দ্যুতিতে সমুজ্জ্বল ও ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স সমৃদ্ধ একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজ। আর্থিকভাবে সচ্ছল, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রশংশনীয়, সুবিশাল অবকাঠামো, প্রায় ৬০ বিঘা জমি, সাড়ে তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কলকাকলিতে মুখরিত, বিশাল খেলার মাঠ, ৩টি পুকুর, সবুজ-শ্যামলে মনোরম কলেজটিতে জাতীয়করণের অসংখ্য উপাদান রয়েছে।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নানান নীতি-নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বেশকিছু স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। অতীতে সামরিক শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের বিশেষ কোনো নীতিমালা ছিল না। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনপূর্ব বিভিন্ন জনসভায় এলাকাবাসীর চাওয়ার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঘোষণা করেছেন প্রত্যেক উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ তিনি সরকারি করবেন। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অত্যন্ত আন্তরিক। জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রত্যেক উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ সরকারিকরণের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন উপজেলা সদরে থাকে, তেমনিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের ক্ষেত্রেও উপজেলা সদরের স্কুল-কলেজ বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল-কলেজ সরকারিকরণে তা মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নগরায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে না। বরং গ্রামীণ জনপদের মানুষ পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায় উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে ভিড় জমায়। কলেজ সরকারিকরণে মহান জাতীয় নেতা-নেত্রী ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের নাম ও স্মৃতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই তা সরকারি হওয়ার যৌক্তিকতা বাড়িয়ে দেয় এবং ঐসব মহান ব্যক্তিবর্গের নামে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নগরায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা এবং প্রতিষ্ঠানের বয়স, অবস্থান, অবকাঠামোগত সুবিধা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, যোগাযোগের ব্যবস্থা বিবেচনায় আনা খুবই প্রাসঙ্গিক। শুধু তাই নয় প্রয়োজনে যেভাবে নির্বাহী আদেশে পিজি, ইপসা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা অন্যান্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে সেভাবেই মহান জাতীয় নেতাদের নামে উপজেলা সদরে কলেজের নামকরণ করে হলেও ঐসব কলেজ সরকারিকরণ করা বেশি যৌক্তিক। কেননা, এতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ মানবসম্পদ উন্নয়নে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সম্প্রতি ১৬টি সরকারি কমার্স ইনস্টিটিউটকে এক ঘোষণায় সাধারণ কলেজ করা হয়। আশির দশকে এক ঘোষণায় মহকুমা সদরের কলেজগুলো জাতীয়করণ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের সূচনায় যেসব জেলা সদরে সরকারি মহিলা কলেজ ছিল না এমন ১২টি জেলায় এক ঘোষণায় মহিলা কলেজ জাতীয়করণ হয়। প্রধানমন্ত্রী উপজেলায় একটি কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণার পরও কাক্সিক্ষত ফল পেতে নীতিমালা তৈরির অপেক্ষা, জরিপ ইত্যাদির সুযোগে দীর্ঘসূত্রিতা, পক্ষপাতিত্ব ও অনিয়ম, দুর্নীতির ভয় রয়েই গেছে। কাজেই ‘এক ঘোষণা’য় উপজেলা সদরের কলেজগুলো জাতীয়করণ প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বাস্তবায়ন দ্রুততর করবে বলে আশা করি।
সব সরকারি অফিস যেমন সদরে থাকে, তেমনি সরকারিকরণেও ‘সদর’ গুরুত্বের দাবিদার। একবার ‘সদর বঞ্চিত’ হলে ঐ ক্ষতি ও ঐতিহাসিক দায় রয়েই যাবে। দিনাজপুরের কাহারোল ডিগ্রি কলেজ, টাঙ্গাইলের গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ, নোয়াখালীর সৈকত ডিগ্রি কলেজ উপজেলা সদরে অবস্থিত ও উপজেলার প্রধান কলেজ হয়েও প্রাথমিকভাবে সরকারিকরণের তালিকার বাইরে ছিল। পরে এলাকাবাসীর দাবি ও যুক্তি সংগত প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সদয় সম্মতি পাওয়ায় ঐসব ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের পথ সুগম হয়েছে। এমন কী চাপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার দু’টি কলেজ সরকারিকরণের তালিকাভুক্ত হয়েছে। কাজেই, কাপাসিয়ার গণমানুষের প্রিয়নেত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপির মায়াবী স্পর্শে কাপাসিয়া কলেজ সরকারিকরণের সোনালি ভোরের অপেক্ষায়। মিসেস সিমিন হোসেন রিমি এমপির পক্ষেই সম্ভব সর্বসাধারণের সব সময়ের চাওয়া কাপাসিয়া কলেজ সরকারিকরণ করা। কারণ, তার রয়েছে স্থানীয় রাজনীতি বা ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা, সততা, স্বচ্ছতা ও সাহস। তিনি এলাকার প্রয়োজনে কাজ করেন আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। কারো আবদার, অনুরোধ বা যোগাযোগের অপেক্ষায় তিনি থাকেন না।
পরিশেষে বলতে হয় ১৯৬৫ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কলেজটি উদ্বোধনকালে বলেছিলেন, ‘তিনটি ‘গ’: সধহ, সড়হবু, সবহঃধষরঃু হলে সব হয়’। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের স্মৃতিধন্য প্রতিষ্ঠানটি ৫১ বছরেও রয়ে গেছে বেসরকরি! তাই শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি কামনা করি।
ষ লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন