ইফতেখার আহমেদ টিপু
নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে অভিযান চললেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। লঘু সাজার কারণে নকল-ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই থামছে না। সারা দেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মানহীন পণ্য। এর ফলে ক্রেতারা যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমনি হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। একশ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী ক্রেতাদের ঠকিয়ে মুনাফার পাহাড় গড়লেও তা যেন দেখার কেউ নেই।
দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান প্রণয়ন, প্রণীত মানের ভিত্তিতে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও গুণগত মান পরীক্ষা বা বিশ্লেষণ করে মানের নিশ্চয়তা প্রদান বিএসটিআইয়ের কাজ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত। বিএসটিআই মাত্র ১৫৫টি পণ্য বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করে। বাকি পণ্যগুলো বাধ্যতামূলক না হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এগুলোতে ভেজাল মেশাচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশনে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের যে পদ আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এছাড়া নমুনা সংগ্রহকারীরাও নিয়মিত নন। সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য রয়েছেন সীমিতসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযান পরিচালনার সময় প্রায়ই পুলিশের সংকট দেখা দেয়।
এমনিতেই মানহীন কিংবা ভেজাল পণ্য উৎপাদকদের শাস্তি খুব একটা হয় না। এছাড়া পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতারও অভাব আছে। দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর থাকলেও তার তৎপরতাও সীমিত। ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান অনেকাংশেই রাজধানীতেই সীমিত। ঢাকার বাইরে তৎপরতা নেই বললেই চলে। ভেজাল বন্ধে নকল ভেজাল অপরাধের দ- বাড়াতে হবে।
খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে কোনো খাদ্যই স্বস্তির সঙ্গে খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বাজারে যেসব জুস ও পানীয় বিক্রি হয় তার সিংহভাগই মানসম্মত নয়। নামিদামি কোম্পানির তৈরি করা মিষ্টি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে যে ঘি, বাটার অয়েল ও ভোজ্যতেল বিক্রি হয় তার সিংহভাগই নকল-ভেজাল। শিশুখাদ্যের মানও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দুধে ভেজালের রাজত্ব বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে। এখন যেসব প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। আম, কলা, আপেল, খেজুর ইত্যাদি ফল খেতে ভয় পায় এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো ফল পুষ্টির বদলে মানুষকে আরো রোগাক্রান্ত করছে।
আমি একাধিকবার লিখেছি, খাদ্যে নকল-ভেজাল বন্ধে সরকারি উদ্যোগ বা মোবাইল কোর্টের অভিযান যেমন অব্যাহত রাখতে হবে তেমনি এ জন্য গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে এ আপদ থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। মানুষের জীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত এ আপদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
খাদ্যপণ্যে ভেজাল জনস্বাস্থ্যের জন্য এ মুহূর্তে এক নম্বর হুমকি। এ হুমকি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সামাজিক সচেতনতার অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না। খাদ্যে ভেজাল এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে কোনো খাদ্যই স্বস্তির সঙ্গে খাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে যে জুস বা পানীয় বিক্রি হয় তার সিংহভাগই মানসম্মত নয়। নামিদামি কোম্পানির তৈরি মিষ্টি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে যে ঘি, বাটার অয়েল ও ভোজ্যতেল বিক্রি হয় তার সিংহভাগই নকল-ভেজাল। শিশু খাদ্যের মানও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দুধে ভেজালের রাজত্ব বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে।
এখন যেসব প্যাকেটজাত দুধ বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। আম, কলা, আপেল, খেজুর ইত্যাদি ফল খেতে ভয় পায় এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো ফল পুষ্টির বদলে মানুষকে আরো রোগাক্রান্ত করছে।
খাদ্যসামগ্রী ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণের খবর ছড়িয়ে পড়ার ফলে দেশের সাধারণ ভোক্তারা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি হাইকোর্ট খাদ্যে ব্যাপক ভেজাল মেশানোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন। হাইকোর্ট তার নির্দেশে বলেছেন, বারবার বলার পরেও ভয়ঙ্কর এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারের ঢিলেঢালা মনিটরিং ব্যবস্থা এবং ভেজালের বিরুদ্ধে আইনের যথার্থ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর প্রবণতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
খাদ্যে নকল-ভেজাল বন্ধে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এজন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে এ আপদ থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের সামাজিকভাবে চিহ্নিত করে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। ভেজাল বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নেবেÑ আমরা তেমনটিই দেখতে চাই।
কারাদ-ের পাশাপাশি অর্থদ- এমনভাবে বাড়াতে হবে যাতে অপরাধীরা ভয় পায়। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রধানকে পণ্যে ভেজাল রোধের দায়িত্বে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশে নকল ভেজালের দৌরাত্ম্য কীভাবে বাড়ছে তার প্রমাণ মেলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিতে যেসব খাদ্যপণ্য পরীক্ষার জন্য যায় তার দুই-পঞ্চমাংশের মধ্যে ভয়াবহ ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিশুখাদ্যেও চলছে যথেচ্ছভাবে ভেজাল। জনস্বার্থে এ ব্যাপারে সরকারকে আইনগত ব্যবস্থা যেমন জোরদার করতে হবে তেমন নকল ও ভেজাল প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোতে লোকবলও বাড়াতে হবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন