জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে
আশাশুনি উপজেলার ১২৭ নং পূর্ব কাদাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। প্রাণের ভয় কাঁধে নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে বসে ক্লাস পরিচালনা করে চলেছেন। পানি বেষ্টিত প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার মানুষের সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে কোনো রকমে চলে আসছিল। স্কুল গমনের সুযোগবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর সুযোগ পান। দীর্ঘকাল বাঁশের খুঁটি আর ছনের ছাউনিবিশিষ্ট ঘরের মধ্যে ক্লাস পরিচালনা করা হয়েছে। সরকারিকরণের পর ২০০১ সালে সরকারিভাবে বিদ্যালয়ে একটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। তখন অনেক আনন্দ ও প্রত্যাশা বুকে নিয়ে শিক্ষক-পরিচালনা কমিটি স্কুলকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। স্কুলের পার্শ¦বর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থারও অনেক উন্নয়ন ঘটে। তখন থেকে এলাকার অধিকাংশ ছেলেমেয়ে স্কুলগামী হয়। স্কুলের লেখাপড়ার মানেও উন্নয়ন ঘটে। শুরু থেকে সমাপনী পরীক্ষায় ১০০% কৃতকার্য হয়ে এসেছে। লবণাক্ত এলাকার এই প্রতিষ্ঠানটি বিল্ডিং নির্মাণের পর আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ঘরের দেয়ালের প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। লিন্টন ও পিলারে ফাটল ধরেছে। ছাদ দিয়ে বর্ষার পানি ভেতরে পড়ছে। ছাদের বড় বড় অংশ খসে খসে পড়ছে। কখন এসব মাথার উপর পড়ে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটাতে হয় শিক্ষার্থীদের। বাধ্য হয়ে খুবই জরাজীর্ণ একটি কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন অফিসসহ ৪টি কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অফিসের মধ্যে ২য় শ্রেণীর ক্লাস নিতে হচ্ছে। স্কুলমাঠ ও স্কুলে যাতায়াতের পথ বর্ষাকালে সম্পূর্ণভাবে পানিতে তলিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও খেলাধুলা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলে বিদ্যুৎ নেই। সীমানা প্রাচীর নেই, চেয়ার-বেঞ্চসহ নেই আরো অনেক কিছু। ২০০১ সালে ৩৫ জোড়া বেঞ্চ সরবরাহ করা হয়েছিল, সেখান থেকে আর কোনো আসবাবপত্র স্কুল কর্তৃপক্ষ পায়নি। ফলে আসবাবপত্রের সংকট রয়েছে। স্কুল ক্যাচমেন্ট এরিয়ার মধ্যে কাদাকাটি দক্ষিণ পাড়া (কুলতলা)-এ প্রায় ১০০ পরিবার বসবাস করে। সেখানে খেজুরডাঙ্গা নদী (খাল) চিত্তরঞ্জন মাস্টারের বাড়ির কাছে একটি সাঁকো স্থাপনের জন্য দীর্ঘকালের দাবি এলাকাবাসীর। কিন্তু সে দাবি কেউ পূরণ করেনি। সাঁকোটি করা হলে এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা মাত্র আধা কি.মি. দূরবর্তী এই স্কুলে যেতে পারত। তখন স্কুলটির পরিবেশও ভালো হতো। ঐসব ছেলেমেয়ের কিছু অংশ প্রায় ২ কি.মি. পায়ে হেঁটে নিকটবর্তী স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ পড়ার সুযোগবঞ্চিত হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ মোহন গাইন ও এসএমসি সভাপতি সুভাস চন্দ্র গাইন জানান, বিল্ডিং ও আসবাবপত্রের দুরবস্থাসহ শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে থাকায় নিশ্চিন্তে ক্লাস পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল ভবন পুনঃনির্মাণ, আসবাবপত্র সরবরাহ, বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ, মাঠ ভরাট, যাতায়াত রাস্তা নির্মাণ, খালের উপর সাঁকো নির্মাণ করা হলে স্কুলের সার্বিক পরিবেশ ফিরে আসবে। লেখাপড়ার মানসহ সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এব্যাপারে তারা ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষসহ জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন