মহামারী করোনার বিস্তার রোধে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে রংপুর মহানগরীতে বেড়েছে মানুষের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকেই খুলেছেন দোকানপাট। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পুলিশী চেকপোস্ট থাকলেও পূর্বের মত তৎপরতা নেই। নানা অযুহাতে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। সচেতনতার অভাব ও প্রশাসনের নমনীয়তায় কঠোর বিধিনিষেধ চলছে অত্যন্ত ঢিলেঢালাভাবে।
শনিবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রংপুর নগরীর মেডিকেল মোড়, কাচারী বাজার, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানীর মোড়, সাতমাথা, মর্ডান মোড়, শাপলা চত্বর, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দেখা গেছে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ও বাজার সংলগ্ন পয়েন্টগুলোতে মানুষের জটলা। রাস্তায় চলাচলরত কারোর মধ্যেই তেমন করোনা ভীতি নেই। নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুণতে হচ্ছে অনেককেই। তারপরও কমছে না লোকজনের চলাচল। বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট খোলা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নগরীর প্রধান সড়কের পাশের অনেক দোকান অর্ধেক ঝাপ তুলে খোলা ছিল। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়াও নগরীর অলি-গলিতে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের চলাচল ছিল লক্ষণীয়। বেশির ভাগ মানুষেরই মুখে মাস্ক নেই। পরিবারের বিভিন্ন চাহিদার অযুহাতেই বাহিরে এসেছেন সকলেই। তাদের কেউ পায়ে হেঁটে বা আবার কেউ বের হয়েছেন অটোবাইক ও রিকশা নিয়ে।
সকাল থেকে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাস্তায় বিভিন্ন বাহিনীর একাধিক গাড়ি টহল দিতে দেখা যায়। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই রাস্তায় তৎপরতা বেড়ে যায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর। বিধিনিষেধ কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাথে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে কাজ করছেন। যানবাহনের অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ করছে জরিমানা। চেকপোস্টে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে বাড়ির পথে ফিরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ। বিনা কারণে বাইরে হওয়া লোকদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে বলে জানান চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা একজন ট্রাফিক পুলিশ। তিনি জানান, যারা মাস্ক পরেনি, এমন অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতও বিভিন্ন স্থানে জরিমানা করছেন। তারপরও লোকজনের মাঝে সচেতনতা আসছে না। ঠুনকো অজুহাতে বাইরে বেরিয়ে আসছে মানুষ। কম-বেশি সব রিকশা আটকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিধিনিষেধ মেনে চলার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
এদিকে, লকডাউনের কারণে সন্ধ্যার পর থেকে প্রতিটি পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে আড্ডা দেয়া লোকজনের জটলা বেড়েই চলেছে। গতকাল নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। দেখা গেছে, প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে চা-পানের দোকান খোলা। এসব দোকানের সামনে একাধিক বেঞ্চ দেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই এসব স্থানে। বরং এসব বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসেই চলছে আড্ডা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬টি থানা, ট্রাফিক বিভাগ ও ডিবির ২৫টি টহল টিম মাঠে কাজ করছে। বিধি-বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে নগরীতে ২০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়াও বিধিনিষেধ কার্যকর করতে রংপুর জেলা প্রশাসনের সাথে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দল যৌথভাবে কাজ করছে।
আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক আহমেদ (ডিবি এন্ড মিডিয়া) জানিয়েছেন, বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর ২টি করে টহল দল কাজ করছে। শুক্রবার বিধিনিষেধের প্রথম দিনে তিন লাখ বাইশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শতাধিকেরও বেশি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
মন্তব্য করুন