যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় টাঙ্গাইলের চারটি উপজেলায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় দুই শতাধিক বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরিভাবে জিওব্যাগ ফেলে যমুনার তীব্র স্রোতের বেগ কমানোর চেষ্টা করলেও তেমন উপকার পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত ১২ জুলাই থেকে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। যমুনার পশ্চিমপাড় তথা নদীর ডানতীরে সিরাজগঞ্জের অংশে ‘চায়না বাঁধ’ নির্মাণ করায় পানির স্রোত বাঁধে বাধা পেয়ে পূর্বপাড় অর্থাৎ নদীর বাম তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলার অংশে যমুনার বাঁকে বাঁকে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভূঞাপুর অংশেও ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার উত্তর চরপৌলী, দশখাদা, হাটখোলা, পানিকোড়া, মাকরকোল, কেশবমাইঝাইল, তিতুলিয়া, নয়াপাড়া, কুকুরিয়া, বারবাড়িয়া, দেওরগাছা, রশিদপুর, ইছাপাশা, খোশালিয়া, চানপাশা, মসপুর, বারবেলা, চকগোপাল, কালিহাতী উপজেলার আলীপুর, ভৈরববাড়ি, নাগরপুর উপজেলার পাইকশা মাইঝাইল, খাস ঘুর্ণিপাড়া, খাস তেবাড়িয়া, চরসলিমাবাদ, ভূতের মোড়, শাহজানি, ভারড়া, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া এবং ভূঞাপুর উপজেলার ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।
পানি কমতে থাকায় কালিহাতী উপজেলার আলীপুর মাদরাসার অর্ধাংশ, আলীপুর জামে মসজিদের ওজুখানাসহ কিয়দাংশ, আলীপুরহাটের দুই তৃতীয়াংশ গত কয়েকদিনের ভাঙনে যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আলীপুরের এসব স্থাপনা ভাঙনরোধে পাউবো ২৫০ মিটার এলাকায় জরুরিভাবে তিন দফায় প্রায় ৫৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলেছে। যমুনার ঘূর্ণাবর্ত তীব্র স্রোতে জিওব্যাগের সাময়িক বাঁধ ভেঙে স্থাপনা, বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে আঘাত হানছে।
এলাকাবাসী জানায়, পাউবো বার বার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছেনা। টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা উত্তর চরপৌলী ও আলীপুর গ্রামের অংশে অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়কের (নর্দান প্রজেক্ট) প্রায় ৬০০মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।
নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানায়, শ’ শ’ একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের বাড়িঘর, গাছপালাসহ গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই খেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক, সদর উপজেলার কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ জনপ্রতিনিধিরা জানান, যমুনায় পানি বাড়লেও ভাঙে আবার কমলেও ভাঙে। যমুনার স্রোত ঘূর্ণাবর্ত তাই ভাঙেও বেশি। তারা দীর্ঘদিন ধরে যমুনার বামতীরে সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের গোলচত্তর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কানে তুলছেন না।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্রতি বছরই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়। এ ভাঙনরোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছরেও প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি আরও জানান, যমুনার ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন