উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার ৪ দিন পরেও সাগরে ইলিশ মাছ শিকারে যেতে পারলেন না পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সাগর সংলগ্ন আলীপুর-মহিপুর মৎস বন্দরের ৫ শতাধিক ট্রলারের জেলেরা। গত ২৩ জুলাই রাত ১২টায় ইলিশ শিকারের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞার সময় অতিবাহিত হয়। কিন্তু ২২ জুলাই রাতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গতকাল ২৭ জুলাই পর্যন্ত থেমে থেমে একটানা প্রবল বর্ষণের সাথে দমকা হাওয়ায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে।
এ দিকে খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সমুদ্র বন্দরের জন্য ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত রয়েছে, লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের সাথে সাগর উত্তাল রয়েছে।
জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, সামুদ্রিক মাছের বাঁধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। দীর্ঘদিনের অবরোধসহ গতবারের লোকসান কাটাতে ঝুঁকি নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আলীপুর-মহিপুর বন্দরের ৫০-এর বেশি ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গেলেও সাগর উত্তাল থাকায় একদিনের মধ্যে তারা ফিরে আসতে বাধ্য হন। এদিকে ভোলা, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতবদিয়ার, বাঁশখালী এলাকার অর্ধাশতাধিক ট্রলার নিষেধাজ্ঞার সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর এলাকায় মাছ শিকারে এসে সাগরের উত্তলতার কারণে মহিপুর-আলীপুর এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
আলীপুর মৎস বন্দরের দুলাল ফিশিং কোম্পানির মো. দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, তার এফবি মামনী-২ ও ৩ নামে দুটি ট্রলার রয়েছে, গত ২৩ জুলাই রাত ১২টায় অবরোধের সময় শেষ হওয়াকে সামনে রেখে রাত ১২টার পরে সাগরে যাওয়ার জন্য দুটি ট্রলারকে প্রস্তুত করেছিলেন ১৫ দিনের বাজার ও বরফসহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিস নিয়ে। ঐ দিন রাত ১২টার পরে দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়া থাকায় ট্রলার সাগরে যেতে পারেননি। পরের দিন ২৫ তারিখ সকাল ১০টায় ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ শিকারেরর জন্য মানামী-৩ ট্রলারটি ঘাট ছেড়ে গিয়ে কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণে ৩০ কিলোমিটার গিয়ে সাগরেরর প্রচন্ড উত্তলতার মধ্যে পরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
কথা হয় এবারে ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে ফেরত আসা সর্বাধিক মাছ প্রাপ্ত এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মালিক খলিরলুর রহমানের সাথে। তার ট্রলারে সর্বাধিক ১ মন ৩৫ কেজি ইলিশ মাছ পেয়েছেন তার মধ্যে বড় মাছের সংখ্যা খুবই কম। বিক্রি করতে পেরেছেন ৪০ হাজার টাকায়, এবারের ট্রিপে তার খরচই হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো।
সৈকত ফিশিং-এর মালিক আসাদুজ্জামান দিদার জানান, গতবছরে সাগরে ইলিশ মাছ কম ধরা পড়ায় অনেক ট্রলার মালিক তাদের ট্রলার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ বছরে ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে যখন ট্রলার মালিকরা জেলেদের প্রস্তুত করেছেন তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সদাই নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করতে তখনই দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়া শুরু হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছে। প্রতিটি বড় ট্রলারে কমপক্ষে সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টাকা ব্যায় প্রথম ট্রিপে সাগরে মাছ ধরতে।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কলাপাড়া উপজেলায় প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রলারসহ ১৮ হাজার ৩০৫ জন জেলে তালিকাভুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা না মেনে সাগরে মাছ শিকারের চেষ্টা চালায়। তাদেরকে ধরতে প্রায়ই আমাদের অভিযান চলছে। গত ২৩ জুলাই রাতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেছে। ট্রলারগুলি তাদের প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। কিছু ট্রলার সাগরে গিয়েছিল। কিন্তু তারা সাগর উত্তাল থাকায় ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন