কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার অভ্যন্তরে এলজিইডি ও সওজ নির্মিত পাকা সড়কগুলো ক্রমান্বয়ে খালে পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শেষে সড়কগুলো সংস্কার না করার কারণে বহু সড়কের ক্ষেত্রে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন। ১৫৭ কিলোমিটারের পাকা সড়কের অধিকাংশ অংশ ভাঙা সড়কে পরিণত হয়ে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। ঠিক কোন অর্থবছরে উপজেলার সকল পাকা সড়ক মেরামত হবে তা কেউ বলতে পারবেন না বলে এলজিইডি কার্যালয়ের কাজের সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার দীর্ঘদিন ধরে সড়কের ভাঙা অংশগুলো মেরামত না করার কারণে ভাঙা অংশগুলো দিন দিন সড়কের পাশে খালে চলে যাচ্ছে আর পাকা সড়ক মাটির সড়কে পরিণত হচ্ছে। হাজীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এলজিইডির মোট সড়ক রয়েছে ৫৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাটির সড়ক রয়েছে ৩৮৮ কিলোমিটার ও পাকা সড়ক রয়েছে ১৫৭ কিলোমিটার। এই ১৫৭ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে মাত্র ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকা পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়। ঢাকা থেকে সংস্কারের অনুমোদন আসলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন সড়কের ভাঙা অংশগুলো মেরামত করা হবে। অনেককে বলতে শোনা যায়, ১৫৭ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে মাত্র ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। এটা কী ধরনের দায়িত্ববোধ? কেন সংস্কারের জন্য এত অল্প পরিমাণ সড়ক দেখানো হলো তা আমাদের কারো বোধগম্য নয়। অপরদিকে, হাজীগঞ্জ উপজেলা সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার মধ্যে হাজীগঞ্জ সওজের আওতায় রয়েছে ২৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের মধ্যে ১০ কিলোমিটার, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের মধ্যে ৮ কিলোমিটার ও হাজীগঞ্জ কচুয়া-গৌরীপুর সড়কে ৮ কিলোমিটার। একই উপজেলায় চাঁদপুর সওজের আওতায় রয়েছে বাকিলা-চাপাতলী সড়ক। এলজিইডি নির্মিত পাকা সড়কের মধ্যে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা সন্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লিংক সড়ক, দেবপুর-শ্রীপুর-মিতালি বাজার-রাজারগাঁও সড়ক, বলাখাল গুদারাঘাট এলাকা থেকে রামচন্দ্রপুর বাজার পর্যন্ত সড়ক, রামচন্দ্রপুর বাজার থেকে নাটেহরা হয়ে হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সড়ক, ফরিদগঞ্জের বাসারা বাজার থেকে আল-মদিনা বাজার হয়ে হালিমের দোকান এলাকা সড়ক, এনায়তেপুর এলাকা থেকে শুরু হয়ে আহম্মদপুর মোহাম্মদপুর হয়ে মালিগাঁও সড়ক, হাজীগঞ্জ বাজারস্থ থানা রোড থেকে শুরু করে সুহিলপুর-ধড্ডা-খালপাড়-রঘুনাথপুর সড়ক, বেলঘর-বলিয়া সড়ক, ওয়ারুক রেলস্টেশনের উত্তরে গঙ্গানগর এলাকা থেকে শুরু হয়ে বেলঘর-রাজাপুরা সড়ক (লাউকরা মুক্তিযোদ্ধা সড়ক) মিলিয়ে বহু পাকা সড়ক দিন দিন নষ্ট হয়ে সড়কের পাশে খালে গিয়ে মিশে যাচ্ছে। সওজ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বাকিলা-চাপাতলী সড়কের বাকিলা বাজার এলাকার খলাপাড়া অংশ মজুমদার বাড়ির পুকুরে ও মালি বাড়ির পুকুরে আলাদাভাবে সড়ক ভেঙে ভয়ানক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, দেবপুর-রাজাগাঁও সড়কের দেবপুর এলাকার সিএসজি স্কুটার স্টেশন এলাকায় বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এ সড়কের সামনে শ্রীপুর এলাকা দিয়ে সড়কের ভাঙা অংশের বেশখানেক অংশ সড়কের পাশে খালে গিয়ে মিশে রয়েছে। সড়কের ভাঙা অংশের বালি খোয়া বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে দিন দিন বড় গর্তে পরিণত হচ্ছে। বাকিলা-সন্না সড়কের সন্না বিষু মালি বাড়ির সামনের অংশ বহু আগে পুকুরে চলে গেছে। একই সড়কের আরো সামনে ঘাটের বাড়ির সামনে সড়কের পশ্চিম অংশ পুকুরে আর পূর্ব অংশ খালে সম্প্রতি সময়ে চলে গেছে আর এই অংশ দিয়ে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। হাজীগঞ্জ বাজারস্থ থানা রোড থেকে শুরু করে সুহিলপুর-ধড্ডা খালপাড় হয়ে রঘুনাথপুর সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জোৎসা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা পথে গাড়িতে উঠলে মনে হয় একেকদিন একেকটা যুদ্ধ করি। সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে প্রায় দিন আমাদের চোখের সামনে দুর্ঘটনা ঘটতে দেখি আর ভাবি না জানি কোনো নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হই। বাকিলা-চাপাতলী সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ ইনকিলাবকে জানান, সওজের নির্মিত এই সড়টি সংস্কার শুরু হয় অনেক আগে। কিন্তু এই সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে কমপক্ষে ৬ মাস হলো। সংস্কার করে যে গর্তগুলো মেরামত করা হয়েছিল পূর্ণকাজ না কারণে সেই গর্তগুলো পূর্বের ন্যায় হয়ে যাচ্ছে। এনায়েতপুর-আহম্মদপুর-মোহাম্মদপুর সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী খালেকুজ্জামান শামীম জানান, আমাদের এই সড়কের অবস্থা বলতে কোনো কথা নেই। সড়কে চলাচলের কথা বললে শরীরে জ¦র চলে আসে। ভালো মানুষ যেখানে রোগী হয়ে যায় সেখানে রোগীর অবস্থা কী তা আর বলার রাখে না। রামচন্দ্রপুর বাজার থেকে নাটেহরা হয়ে হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সড়কে চলাচলকারী নাটেহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি লোটাস দেলোয়ার বলেন, সুস্থ ব্যক্তি এই সড়কে চলাচল করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমান সময়ে সড়ক আর সড়কে নেই যেন ইটের খোয়ার সড়কে পরিণত হয়ে আছে। গঙ্গানগর এলাকা থেকে শুরু হয়ে বেলঘর-রাজাপুরা সড়ক (লাউকরা মুক্তিযোদ্ধা সড়ক) চলাচলকারী পাপ্পু নামের একজন ইয়ার্কির সূরে ইনকিলাবকে জানান, লাউকরা এলাকা পাকা সড়ক নয় যেন মাটির সড়ক। ভাবতেই ভালো লাগে কর্তৃপক্ষ সংস্কার না করার কারণে চোখের সামনে দিন দিন পাকা সড়ক মাটির সড়কে পরিণত হচ্ছে। সংস্কারের বিষয়ে হাজীগঞ্জ এলজিইডি প্রকৌশলী ফুয়াদ আহসান ইনকিলাবকে বলেন, চলিত অর্থবছরে প্রস্তাবনাকৃত সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন