শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সীতাকুন্ডে আউশের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

৬ হাজার হেক্টরে চাষ করেছে ১৯ হাজার কৃষক

প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে

অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে এবারো এক একর জমিতে আউশ চাষ করেছিলেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। তবে কিছুতেই আশংকা মুক্ত হতে পারছিলেন না তিনি। গত কয়েক বছরের মত যদি এবারো ধান ক্ষেতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তাহলে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। এ নিয়ে প্রথম দিকে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলেও শেষ পর্যন্ত ঝুঁকিটা নিয়েই ফেলেন তিনি। বিগত কয়েক বছরে আশানুরূপ ফলন না পেয়েও এক একর জমিতে বপন করেন সোনালি আউশ। বলা বাহুল্য, এবার প্রকৃতি বিমুখ করেনি এ কৃষককে। কোন জলাবদ্ধতা না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যাসহ কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি। ফলে সৌভাগ্য ধরা দেয় তাকে। এখন তার ক্ষেতে সোনালি আউশের চোখ জুড়ানো ঢেউ। কঠোর পরিশ্রমী কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি সীতাকু-ের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামে। বাড়ির অদূরেই তার ধান ক্ষেত। এখানেই কথা হয় তার সাথে। আউশ চাষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদককে বলেন, সীতাকু-ের প্রচুর কৃষক ধান চাষ করেন। কিন্তু তাদেরকে নিয়মিত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করতে হয়। এছাড়া আছে মানব সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সড়কের পাশের খাল, ছরা ভরাট হয়ে ঘর-বাড়ি দোকানপাট নির্মাণ হওয়ার কুফল পড়েছে চাষাবাদে। গত কয়েক বছর ধরে বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুরসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ফসল ভালো হচ্ছে না। তার উপর বাজারে বিক্রি করতে গেলে আউশের আশানুরূপ দামও মিলছে না। বরং যারা সবজি চাষ করছেন তারাই বেশি ভালো হচ্ছেন। এ কারণে অনেক কৃষকই আউশ চাষ বন্ধ করে দিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। ফলে পূর্বের তুলনায় আউশ চাষ কমছে। এ অবস্থায় এবারো জলাবদ্ধতায় ফসলহানি হলে আরো অনেক কৃষক ধান চাষ বন্ধ করে দিতেন। ভাগ্য ভালো এবার প্রকৃতি কৃষকদের সহায় ছিল। ক্ষেতে কোন জলাবদ্ধ হয়নি। ফলে আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন বাজারে ন্যায্য দাম পেলেই তারা খুশি। একই ইউনিয়নের পূর্ব লালানগর গ্রামের কৃষক মোঃ গোলাম নবী বলেন, আউশের ফলন যাই হোক বাজারে ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। গত বছর ১২ কেজি ধান পাইকারীতে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এবার ১২ কেজি ধান ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও আমাদের পোশাবে না। কৃষকরা যেন ধানে ন্যায্য মূল্য পায় তা মনিটরিং করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। অনেকটা একই তথ্য দিয়েছেন সৈয়দপুর ইউনিয়নের মীরেরহাট এলাকার কৃষক মোঃ নঈম উদ্দিন। তিনি এবার ৮০ শতক জমিতে আউশ চাষ করেছেন। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের আউশ ২০ শতক। আর ৬০ শতকই হলো হাইব্রিড আউশ। এ কৃষক বলেন, একসময় আমরা ধান চাষ করেই ভাগ্য বদল করেছি। নিজের জন্য ধান রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিতাম। লাখ লাখ টাকার ধান বিক্রি করেছি। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ফসলহানি হয়ে আশানুরূপ লাভ পাইনি আমরা। এ কারণে পানি ও লবতাক্ততা সহিষ্ণু নেরিকা প্রজাতির ধান, অন্যান্য ধানে নির্ভরতার পাশাপাশি অনেক কৃষক আবার ধান ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে সব আশংকা উড়িয়ে দিয়ে এবার প্রকৃতি কৃষদের অনুকূলে ছিল। ফলে আমাদের ক্ষেতে এখন সোনালি ধানের ঢেউ। কেউ কেউ ধান কাটাও শুরু করেছেন। এ কৃষক বলেন, আমরা খুবই আশাবাদী যে বাজারে দামও ভালো পাব। যদি সে আশা পূরণ হয় তাহলে কৃষকদের আগ্রহ ফিরে আসবে। কৃষকদের এসব তথ্য যে মিথ্যা নয় তা স্বীকার করেন, পৌরসভা ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ শাহআলম ও বারৈয়াঢালা ব্লকের গোপাল চন্দ্র নাথ। প্রায় অভিন্ন বক্তব্য রেখে তারা বলেন, এবার জলাবদ্ধতা ও রোগ বালাই না থাকায় আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে যারা আউশ চাষ করেছেন তারা প্রত্যেকেই বেশ খুশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, এ বছর ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮৬৫০ জন কৃষক বিভিন্ন জাতের আউশ চাষ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড চাষ হয়েছে ২৩ শত হেক্টরে, ৩৬৩০ হেক্টর উপশী জাতের ও ৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আউশ চাষ হয়েছে। সব জমিতেই বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব জমি থেকে ১৭৭২৬ টন চাল উৎপাদন হবে বলে তারা আশাবাদী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন