শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ফুলচাষিরা ভালো নেই

ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালী

যশোর থেকে শাহেদ রহমান | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুলচাষিরা ভাল নেই। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বার বার লকডাউনের কারণে হারাতে বসেছে এ ফুলচাষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফুল বাইরে পাঠাতে না পারায় বাধ্য হয়ে কম দামে ফুল বিক্রি করছেন। সঠিক মূল্যে বিক্রয় না হওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দিন দিন তারা হতাশ হয়ে পড়ছে। জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশার কথা ভাবছে অনেকেই।
ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী গ্রামের ফুলচাষি মো. মোস্তফা হোসেন বলেন, ৬ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছিলাম। ফুল বিক্রয় হচ্ছে না, যার কারণে ফুলে টিটমেন্ট দেয়ার মত টাকা নই। ফলে ৬ বিঘা ধরে ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে গোলাপ ১০০ ফুলের দাম ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়ে থাকে। বর্তমানে সেখানে গোলাপ ১০০ ফুলের দাম ২০ থেকে ১৫০ টাকা। অন্য সময় গরু-ছাগলের খাদ্য হিসাবে ফুল জোগান দেয়া হত। কিন্তু বিক্রি না হবার ফলে এতো বেশি ফুল যে গরু-ছাগলেও খাচ্ছে না। দাম না থাকার কারণে ফুল তোলা বন্ধ। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে ফুল।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারার গ্রামের মো. শরিফুল গাজী বলেন, আমাদের বংশের সকলে ফুল চাষের সাথে জড়িত। করোনা সংক্রমণের কারণে ফুল বেচা বন্ধ। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে জারবেরা ফুল চাষে জন্য শেড তৈরি করা হয়েছে। ফুলের দাম না পাওয়ার কারণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিপদে আছি। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে শেড নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা আভাবে মেরামত করতে পারিনি, তাই শেড ওঠিয়ে ধান চাষ শুরু করেছি। যদি অবস্থা ভাল হয় তবে আবার ফুল চাষ করবো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র মতে, যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছে। শত শত হেক্টর জমিতে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, গøাডিওলাস, কসমস ও চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়। প্রতিদিন গদখালীর বাজারে ফুলচাষিরা ফুল বিক্রয় করতে আসে। পানিসারা-গদখালী গ্রামগুলোর বিভিন্ন স্থানে ছোট্ট ছোট্ট ফুলের দোকান রয়েছে। যেখানে খুচরা ও পাইকারী ফুল বিক্রয় হয়। গদখালী বাজারের ফুল বিক্রেতা মো. আনারুল ইসলাম জানান, গত ফেব্রæয়ারির পর থেকে ফুল বিক্রি হচ্ছে না। দোকানে ফুল অনলে বেশির ভাগ নষ্ট হচ্ছে। কোনো ক্রেতা নেই, দামও নেই। ফলে ২/১ জন ক্রেতা যা দাম বলে তাই দিচ্ছি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, যশোর থেকে দেশের চাহিদার শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ফুল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। করোনার কারনে ফেব্রæয়ারি মাস থেকে ফুল বিক্রির সুযোগ না থাকায় প্রায় সব মিলে যশোর অঞ্চলে ৩০০ কোটি টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩০০ জন ফুলচাষিকে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো লোন দেয়া হয়েছে। করোনার কারণে ফুলচাষিদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অনেক কষ্ট। ফুলচাষিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। উৎপাদন ধরে রাখতে পারছেনা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক অনুষ্ঠানের অনুমতি হলে ফুল বিক্রি শুরু হবে। একই সঙ্গে ফুলচাষিদের প্রণোদনা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান কৃষক এই নেতা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন