খুলনায় বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত ৫ বছরে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭ হাজার ৬৯৩টি তালাক রেকর্ড হয়েছে। সংখ্যার অনুপাত বিশ্লেষণে শতকরা ৭০ ভাগ নারীরা তাদের স্বামীদের তালাক দিচ্ছেন। খুলনার মনোবিজ্ঞানী ও সামাজিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভারতীয় সিরিয়ালে আসক্তি, যৌথ পরিবার প্রথা বিলুপ্ত, মাদক, যৌতুক ও নারী নির্যাতনসহ ১০টি কারণ চিহ্নিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ বছরে খুলনায় ৭ হাজার ৬৯৩টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৭২৭, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৭০৬, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৭১৯ ও ২০১৭ সালে ১ হাজার ৫৯৫টি এবং চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত ৯৬৬টি তালাক খুলনা সিটি করপোরেশনে রেকর্ড হয়েছে।
খুলনার মানবাধিকার কর্মী ড. মাহবুব আলম বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বৃদ্ধির নেপথ্যে অনেক কারণ রয়েছে। তবে মূল কারণগুলোর তালিকা খুব বেশি বড় নয়। মোটামুটি ১০টি কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। সেগুলো হলোÑ ভারতীয় সিরিয়ালগুলোতে পরকীয়া, অবাধ্যতা ও উশৃঙ্খলতা প্রদর্শন যা এদেশের নারী পুরুষের বড় একটি অংশকে ভুল পথে ধাবিত করছে। এছাড়া যৌথ পরিবার প্রথা বিলুপ্ত, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পারষ্পরিক অবিশ্বাস, পরকীয়া, দারিদ্র্য আবার ক্ষেত্র বিশেষে অধিক ধনশালী হয়ে বেপরোয়া জীবনযাপন, মাদকাসক্তি, সন্তান না হওয়া, নারী নির্যাতন ও যৌতুক, বহু বিবাহের প্রবণতা এবং মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা। সর্বোপরি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলাও পারিবারিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ।
খুলনা আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ডা. সুদেব মন্ডল বলেন, এখন কোন কারণে দাম্পত্য জীবনে ভুল বুঝাবুঝি হলেই বিবাহ বিচ্ছেদকে অনেকেই সমাধান মনে করছেন। পারিবারিকভাবে এ ধরণের সমস্যাগুলো সমাধান করার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। অভিভাবকরাও ক্ষেত্র বিশেষে সন্তানদের সংসার জোড়া লাগার বদলে বিচ্ছেদকেই একমাত্র পথ মনে করে থাকেন। মানুষের মধ্যে আগের মতো ধৈর্য্য ও সহনশীলতা নেই। মেনে চলা ও মানিয়ে চলার প্রবণতা কমে যাওয়ায় বাড়ছে তালাক।
খুলনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান লিংকন বলেন, সামাজিকভাবে যত সালিশি বিচার আচার করা হয়, তার মধ্যে পারিবারিক অমিল ও দাম্পত্য কলহ বিষয়ক অভিযোগ বেশি আসে। আমরা চেষ্টা করি যতটা সম্ভব বিবাহ বিচ্ছেদ এড়িয়ে চলার। তারপরও দেখা যায়, অভিযোগকারীরা শুরুতেই সংসার করবেন না এমন সিদ্ধান্তই যেন নিয়ে আসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন