বরগুনার আমতলী উপজেলায় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে অতিবৃষ্টিতে পানি জমে কৃষকের আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এখন উপজেলার অর্ধেক জমি অনাবাদী থাকার শঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে গেছে। কোথাও বীজ ধান পাওয়া না যাওয়ায় হন্যে হয়ে ডিলারদের দুয়ারে দুয়ারে ধরণা দিচ্ছেন বীজের জন্য কৃষকরা।
জানা যায়, ২৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা ৬ দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলায় গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যায়। ১৫ বছরের সর্বোচ্চ ২৬২ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টি পাতের ফলে দেখা দেয় পানিবদ্ধতা। ফসলের মাঠ বীজ তলা দীর্ঘদিন ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ধীরে ধীরে বীজতলা সম্পূর্ন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি সরে যাওয়ার জেগে উঠছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত আমনের বীজতলার ক্ষেত।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় আমন ধানের চাষাবাদের জন্য ২২ হাজার ৩শ’ ৪০ হেক্টর জমি রয়েছে। এর জন্য বীজতলার প্রয়োজন ১৭শ’ ৩০ হেক্টর জমি। বেসরকারি হিসেবে কৃষকরা প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা করেছিল। কিন্তু মৌসুমী ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে অর্ধেক প্রায় ১ হাজার হেক্টর আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সরকারি হিসেবে বীজতলা নষ্ট হওয়ার পরিমান ৩শ’ ১৮ হেক্টর।
মৌসুমের শেষ সময়ে এসে বিপুল পরিমান বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। এখন আর কোথাও ধান বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলারের দোকানে দোকানে ধরনা দিয়েও বীজ পাচ্ছে না কৃষকরা। সারা দিন বীজের জন্য ধরনা দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তারা। দু’একটি দোকানে বীজ পাওয়া গেলেও ১০ কেজি ওজনের ৭শ’ টাকার বীজ ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন ডিলাররা বলে অভিযোগ কৃষকদের। চাহিদা মত আমনের বীজ পাওয়া না গেলে এ বছর আমনের অর্ধেক জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
পূর্ব চিলা গ্রামের সোহরাব শরীফ বলেন, ‘৬০ কেজি আমনের বীজ হালাইছিলাম। দ্যাওইতে পানি জইম্যা সব বীজ নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এহন দোহানে বীজ ধান পাইনা। বীজ করতে না পারলে জমি লাগাইতে পারমু না।’
সোনাউটা গ্রামের কৃষক কালাম জানান, ‘৪০ কেজি ধানের বীজ করছিলাম। পানিতে সব নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন হি করমু কি দিয়া জমি লাগামু হেই চিন্তায় অস্থির আছি।’
হলদিয়া গ্রামের শানু মোল্লা বলেন, ‘বিআর ২৩ ধানের বীজ করেছিলাম। পানিতে সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। এহন ডিলারেগো ধারে যাইয়াও ধান পাই নাই। বীজ ধান না পাইলে জমি লাগাইতে পারমু না।’
গুলিশাখালী গ্রামের মাদব হাওলাদার জানান, ‘আমনের বীজ কইর্যা সব পানিতে পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে।’
সোনাখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর বলেন, ‘৭০ কেজি আমনের বীজ করেছিলাম। পানিতে সব পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন ধান না পাইলে জমি লাগাইতে পারমু না।’ ডিলার তালুকদার ট্রেডার্সের মালিক মৃনাল তালুকদার জানান, আমনের বীজতলা করার মৌসুম শেষ হওয়ায় জুনের পর বিএডিসি আর কোন আমনের বীজ সরবরাহ করে না। কোম্পানির বীজও শেষ। এখন আর দোকানে আমনের বীজ নাই। মোকামেও আমন ধানের বীজ পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে উপজেলার পূর্বচিলা, পশ্চিম চিলা, সোনাউটা, হলদিয়া, চলাভাঙ্গা, উত্তর টিয়া খালী, ঘটখালী, লোচা, কাউনিয়া, সোনাখালী ও গুলিশাখালী গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে তলিয়ে থাকা বীজ পঁচে মাটির সাথে মিশে গেছে। কাঁদা পানির মাঠের মধ্যে যতদুর চোখ যায় শুধু পঁচা বীজতলা দেখা যায়।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানান, অতিবৃষ্টিতে পানি জমে ৩১৮ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এখন বীজ মৌসুম শেষ হওয়ায় সরকারি বিএডিসির গুদামেও কোন বীজ নেই।
এমনকি কোম্পানির বীজও বাজারে তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবে তিনি কৃষকদের স্থানীয় স্বর্না গোডা, দুতকলমসহ যে বীজ পাওয়া যায় তা লাগানোর পরামর্শ প্রদান করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন