শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পর্যটন শিল্পে আশার আলো

খুলছে হোটেল-মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে আবারো খুলছে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো । এরফলে পর্যটকের পদচারণায় পুরনো রুপে দেখা যাবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এতে চাঙ্গা হবে পর্যটন শিল্প। আর ঘুরে দাঁড়াবে দেশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি। প্রতি বছর এ খাত থেকেই দেশের মূল অর্থনীতিতে যোগান হয় হাজার হাজার কোটি টাকা।

কক্সবাজার, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে যেন মায়াবী হাতছানি। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও এসব এলাকায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ঘুরে বেড়ান সারা বছর। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, লেক, নদী আর পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে আনন্দের পাশাপাশি অপরূপ প্রকৃতি অবলোকন করবে পর্যটকেরা। হোটেল মোটেল বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত পর্যটকদের স্বাগত জানাতে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে ভ্রমণ পিয়াসুদের আনাগোনা। হোটেল মোটেলে শুরু হয়েছে আগাম বুকিং।

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান,
পর্যটন মানেই যেন কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সাগর পাহাড় আর দ্বীপে মহান আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি পর্যটন নগরী কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, মাতারবাড়ি, সোনাদিয়া, ইনানী ছাড়াও সাগর বক্ষে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন কক্সবাজারেই।

২০১২ সালে ইউনেস্কোর ‘সেভেন ওয়ান্ডারস অব নেচার’ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আর ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন নিয়ে হৈ চৈ পড়েছিল। তখন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটনের অপরূপ লীলাভ‚মি কক্সবাজার ও সুন্দরবনের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায় সারাবিশ্বের পর্যটকদের। দেশি-বিদেশি পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের নামকরণ হয় পর্যটন নগরী। সমুদ্রের অথৈ নীল জলরাশির কোলঘেঁষে বিস্তীর্ণ উঁচু নিচু পাহাড়শৃঙ্গ সত্যিই অপরূপ। সাগর আর পাহাড়ের মাঝখানে ১২০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক কক্সবাজারকে যুক্ত করেছে বিশ্ব পর্যটনের সাথে। গত কয়েক বছরে সাগর পথে কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন ইউরোপের পর্যটকরা।

বর্হিবিশ্বে এখন কক্সবাজার দিয়েই বাংলাদেশের নতুন পরিচিতি। কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে এক ডজন পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ চার শতাধিক হোটেল মোটেল। গড়ে ওঠে দোকানপাট ও রেস্টুরেন্টসহ পর্যটনকেন্দ্রীক অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর সাথ সম্পৃক্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপি খাতে পর্যটন শিল্পের অবদান ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা। এ খাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ২৪ লাখ ৩২ হাজার। একই বছর পর্যটন খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৪৩ বিলিয়ন টাকা। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে পরিস্থিতি ভালো থাকলে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। আর ৪ কোটি দেশীয় পর্যটক সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ান।
পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে বর্তমান সরকার। প্রতি বছর এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হলো- টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং মহেশখালীর সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক।
কক্সবাজারের পর্যটন খাতে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কক্সবাজারের মহেশখালী, সোনাদিয়া, উখিয়ার ইনানী সৈকত, রামুর হিমছড়ি ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়। একসময় এখানে পর্যটন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতের ধাবী গ্রæপ ও সউদী বিনিয়োগ কারীরা। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় থেমে যায় এসব বিনিয়োগের আশ্বাস।

এদিকে, পর্যটক আকর্ষণে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করেছে। আগামী ২৯ আগষ্ট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বহুল আকাঙ্খিত রেল যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে। এতে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

এছাড়াও মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেগা পরিকল্পনাকে ঘিরে বিদেশি পর্যটকরা আসা-যাওয়া করছেন কক্সবাজারে। উখিয়া-টেকনাফে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দেশি-বিদেশি ভিভিআইপিসহ হাজার হাজার পর্যটক প্রতি মাসেই কক্সবাজার ভ্রমণ করছেন।
করোনার মহামারিতে বন্ধ ছিল হোটেল-মোটেল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এ ফলে পাল্টে যায় পর্যটন শিল্পের সেই পরিচিত রূপ। শূন্য পড়েছিল শত শত হোটেল মোটেল এবং বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছে শত শত কোটি টাকা। বেকার হয়েছে হাজার হাজার পর্যটন সংশ্লিষ্ট মানুষ।
সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এতে আবারো আশান্বিত হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালনকারী পর্যটন শিল্প আবার চাঙ্গা হবে। দেশি বিদেশি লাখো পর্যটকে আবার সরগরম হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। লোকসান কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, গত ১৭ মাস আগে করোনা প্রকোপ শুরু হয়। এর মধ্যে ১৩ মাস বন্ধ ছিল হোটেল মোটেল ও পর্যটন স্পট। এতে শুধু কক্সবাজারের পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৫শ’ কোটি টাকা। তারা আশা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে চেষ্টা করবেন।
পাঁচ তারকা হোটেল সীগালের সিইও ইমরুল হাসান রুমী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে হোটেল মোটেল পর্যটন ব্যবসায়ীদের ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে, ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারী পর্যটকদের সচেতন হতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে টুরিস্ট পুলিশ সতর্ক ভ‚মিকা পালন করবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সরকার সার্বিক বিবেচনা করে ১৯ আগষ্ট থেকে পর্যটন এলাকার হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, ফের সরগরম হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। পাহাড়, নদী, সমুদ্র এবং উপত্যকায় ঘেরা প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলোতে দেখা যাবে অন্য রকম আবহ। বর্ষণে শিক্ত সৈকত, পাহাড়, লেক, ঝরনা, ইকোপার্ক। হরেক ফুলের সমাহার পর্যটন স্পটগুলোতে। ১৯ আগস্ট থেকে বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার আগাম ঘোষণার পর পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। পর্যটন খাতে ফিরে আসছে প্রাণ চাঞ্চল্য। স্বস্থিতে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বন্দরনগরী ও জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। তারকা হোটেলসহ হোটেল- মোটেলও প্রস্তুত হচ্ছে।
করোনায় বন্ধ স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। টানা লকডাউনে ঘরবন্দি শিশু-কিশোরেরা। নেট দুনিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে অনেকে। সন্তানদের একটু স্বস্তি দিতে অনেকে ছুটছেন প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলামেলা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। নগরীর পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিদিন পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে। নানা বয়সের মানুষ সেখানে ঘুরে বেড়াতে আসছেন। সৈকতের পাশ ঘেঁষে সিটি আউটার রিং রোডও এখন অন্যতম বিনোদন স্পট। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে দিনভর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনাগোনা। এক পাশে উত্তাল সাগর অন্যপাশে নগরীর সুউচ্চ ভবন। সড়ক থেকে দেখা যায় সাগরে বড় বড় জাহাজের সারিতে আলোর বন্যা।

নেভাল বীচ, খেঁজুর তলা, বাঁশবাড়িয়া সৈকতের পাশাপাশি সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সৈকত এবং আনোয়ারার পারকি সৈকতেও পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। পতেঙ্গা সৈকতের অদূরে অভিজাত বোট ক্লাবও পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। সেখানে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কর্ণফুলীতে ছুটে চলা দেশি-বিদেশে জাহাজ দেখার সুযোগ। বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে হরেক রাইডে চড়ার পাশাপাশি পাশের শাহ আমানত বিমান বন্দরে বিমান উঠা-নামা দেখার সুযোগও আছে। নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেকেও পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি চলছে। সেখানে বাড়ছে পর্যটকের আগমন। পাশেই আছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।

নগরীর সবচেয়ে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন উম্মুক্ত স্থান সিআরবিতেও পর্যটক বাড়ছে। বর্ষায় সতেজ শত বছরের গাছ গাছালিসহ সেখানকার গাছে গাছে হরেক ফুলের সমাহার। নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক, ফিরিঙ্গি বাজারের নেভাল-২, কর্ণফুলী সেতু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পাহাড় ঘেরা বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে স্বস্তিতে ঘুরে বেড়াতে যাচ্ছেন অনেকে। নগরীতে রয়েছে নেভাল মিউজিয়াম, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, ওয়ার সিমেট্রি, কালুরঘাটে মিনি বাংলাদেশ। নগরীর বাটালি হিল, ডিসি হিল পার্ক, জিলাপির পাহাড়েও সময় কাটাতে ছুটছেন অনেকে।
সীতাকুন্ডের ইকোপার্ক, আদিনাথ পাহাড়, মীরসরাইয়ের মহামায়া লেক, খইয়াছড়া ঝরনা, বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য হাজারিখিল ছাড়াও এই দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি ঝরনা এখন পর্যটক টানছে। বর্ষায় ঝরনাগুলো দারুণ সতেজ। বইছে পানির ঝরণা ধারা। ভাটিয়ারী লেককে ঘিরে গড়ে উঠা বিনোদন কেন্দ্র এখন অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। সেখানে রয়েছে অসাধারণ প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য। ফকিটছড়ির চা বাগানে টানা বৃষ্টিতে নিরিবিলি পরিবেশে রাত্রী যাপনের মজাই আলাদা। দক্ষিণ চট্টগ্রামে আনোয়ারা, বাঁশখালী, লোহাগাড়া, বোয়ালখালীর পর্যটন ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা বাড়ছে। পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার খুলে দেওয়ার পর বিয়ে শাদিসহ সামাজিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। তখন পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে।

টুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা মেনেই পর্যটন কেন্দ্র চালু রাখতে হবে।

বান্দরবান থেকে মো. সাদাত উল্লাহ জানান, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী। পাহাড়ে সবুজের মেলা ও বয়ে চলা পাহাড়ি ঝরণা। নৃতাত্তি¡ক ১১টি জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট মাচাং ঘরে বসবাস। জুম চাষ, দিন শেষে ঘরে ফেরা, সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি, বৈশাখের উৎসব, সব মিলিয়ে রূপকথার কোনো কল্পকাহিনী মনে হলেও এর সবই রয়েছে বান্দরবানে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যকটদের কাছে বান্দরবান একটি অতি প্রিয় গন্তব্য হতে শুরু করেছে। সবুজের সমারোহে, পাহাড়ে নিস্তব্ধতায়, প্রিয়জনদের নিয়ে একান্ত সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন স্মরণীয় করতে অনেকেই অতিথি হন বান্দরবানে। অনেকের মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নান্দনিক পর্যটন স্পটের নাম পার্বত্য বান্দরবান জেলা।

কিন্তু কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাসে পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক ধস নেমেছে। পাহাড়ে নেই কোন কোলাহল। থেমে গেছে হৈ হুল্লা আর আনন্দ উল্লাস। প্রতি বছর ঈদ, সরকারি ছুটিসহ প্রতিনিয়ত পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র। নেই কোন পর্যটকের আনাগোনা, এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন স্পট দেয়ার ঘোষণায় পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে বান্দরবানে পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন বান্দরবানবাসী। পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, নদী আর পর্যটনকেন্দ্র গুলো ঘুরে আনন্দের পাশাপাশি প্রকৃতির অপরূপ রূপ অবলোকন করবে পর্যটকেরা।

পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত শ্রমিকরা জানান, ৪ মাসের ওপর হয়ে গেল, শ্রমিকদের গাড়ির চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলোর মালিক ও শ্রমিকরা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আয় রোজগার। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়েছে অনেককে।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারীরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালিকদের লোকসান গুনতে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বিধি নিষেধ শিথিলের কারণে আমাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

রাঙ্গামাটি থেকে সৈয়দ মাহবুব আহমদ জানান, পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার ঘোষণায় ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা রাঙ্গামাটিতেও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রভাব পড়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই শহরের হোটেল মোটেল সরকারি গেস্ট-হাউজ রেস্টহাউজগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। শুরু হয়েছে আগাম বুকিং ও যোগাযোগ। বন জঙ্গল আর হ্রদ বেষ্টিত পাহাড়ের আনাচে কানাচে গড়ে উঠা অসংখ্য পাহাড়ি ঢং এ নির্মিত খাবার ও বিশ্রামের ঘরগুলোও নব সাজে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মানসে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এবারের ছুটিতে রাঙ্গামাটির পর্যটন এলাকায় কম করে হলেও ২০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হ্রদে বেড়ানোর জন্য ছোট বড় নানান ধরনের জলযানও নবজাগরণে সরব হয়ে উঠেছে।

রাঙ্গামটি পার্বত্য শহর কিন্তু দেশের ভেতরে ভিন্ন আকারের একটি ব্যতিক্রমী শহর। উচু নিচু সর্পিল আকারের রাস্তায় এখানে কোন রিকশা কিংবা লোকাল পরিবহন বাস বা টেম্পো গাড়ির প্রচলন নাই। শহরে ও আশপাশের এলাকায় চলাচলের মাধ্যম হিসেবে সিএনজি চালিত গাড়িই একমাত্র ভরসা। এতে করে এলাকা ঘুরে দেখার জন্য পর্যটকদের এ ব্যবস্থা একরকম আনুক‚ল্যও এনে দিয়ে থাকে।

ছোট শহর হলেও রাঙ্গামাটি পর্যটকদের জন্য বেশ মজার এক উপভোগ্য স্থান। দেশের আর কোথাও পাহাড় বন জঙ্গল ও বৃহৎ হ্রদ বেষ্টিত এতো মনোরম সৌন্দর্যের চোখ জুড়ানো স্থান মেলা সম্ভব নয়। এখানে সুবলং নামক স্থান পরিদর্শনে গেলে স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্ট হ্রদের দুধারে বিশাল আকারের মাথা উঁচু করে পাহাড়রাজি যেনো পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। পর্যটকদের আকর্ষণ ও পেইড মেহমানদারি করার জন্য পাহাড়ের কিছুদূর পর পর রয়েছে সুসজ্জিত বিশ্রামাগার ও খাবারের কুঁড়ে ঘর। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শহরের ভেদভেদি হ্রদের কোলজুড়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত মোটেল আরন্যক ও তার পাশাপাশি দর্শনীয়দের উপভোগের জন্য হ্যাপী আইল্যান্ড, শহরের অদূরে কাপ্তাই পথে বালুখালি পাহাড়ের দুইধার ঘেঁষে রযেছে খাবার ঘর ও বিশ্রামাগার চাংপাং, পেদা টিং টিং, টুক টুক ইকো ভেলেজ, বড়গাং,বেড়ান্যা।

এছাড়া নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদু রবের নজর কাড়ানো সমাধি। আরও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে শহরের পুলিশ লাইনে রয়েছে পলওয়েল পর্যটন কেন্দ্র ও ভেদভেদির সুখি নীল গন্জ। এছাড়া তবলছড়ি বাজার পেরিয়ে রয়েছে সেই ঐতিহ্যময়ী ঝুলন্ত ব্রীজ যা অনায়াসে পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। চট্টগ্রাম শহর হতে দেড় দু-ঘন্টার যাত্রায় সহজে রাঙ্গামটি পর্যটন শহর আসা যায়। যাতায়াতের জন্য বিলাসী পাহাড়িকা নামের বিরতিহীন বাসের ব্যবস্থা রয়েছে।

খাগড়াছড়ি থেকে ইব্রাহীম শেখ জানান, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে খাগড়াছড়িতে অসাধারণ নয়নাভিরাম অনেক দৃশ্য। এগুলো এখন খাগড়াছড়ি ভ্রমণকারীদের জন্য বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে, মাইনীমুখ উপত্যাকার বিস্তীর্ণ সমতল ভ‚মি ও উপজাতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্রতা। মহালছড়ি, দিঘীনালা, পানছড়ি, রামগড়, ল²ীছড়ি, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা যেদিকেই নজর যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ।

খাগড়াছড়ির উত্তরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও ত্রিপুরা রাজ্য আর পশ্চিমে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। এখানে যেসব প্রাকৃতিক ঝরণা, টিলা ও পাহাড় গুলো পর্যটকদের নজর কাড়ে তার মধ্যে রয়েছে আলুটিলা পাহাড়, বিছাং ঝর্ণা, মাতায় পুকুর,পানছড়ি অরন্য কুটির, তৈদুছড়া ঝর্ণা, রাবার ড্যাম ও সাজেক ভ্যালী।

সাজেক ভ্যালী রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও যাতায়াতের সহজ পথ হল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সড়ক দিয়ে। তাই সাজেক ভ্যালী ভ্রমণকারীদের জন্য খাগড়াছড়ি দিয়ে ভ্রমণ করাই সহজ। হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণায় খাগড়াছড়ি পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আনন্দ ভাব দেখা গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন দীর্ঘদিন পরে পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় খাগড়াছড়িতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করবেন। এতে চাঙ্গা হবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন