শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিনিয়োগ বাড়াতে অনুকূল পরিবেশ দরকার

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৮ এএম

দেশে বেকারত্ব বৃধ্দি ও কাক্সিক্ষত উন্নতির জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। দীর্ঘদিন ধরে আশানুরুপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২-২৪% চলছে বহুদিন যাবত। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬.৬০ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। করোনার কারণে পরের অর্থবছরে আরো কমে হয়েছে ২১.২৫%, যা গত ৫ বছরের মধ্য সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেও কমে হয়েছে ১৯%। অথচ এসডিজি অর্জনে বেসরকারি বিনিয়োগ হওয়া দরকার জিডিপির ৩০%। বিদেশী বিনিয়োগের অবস্থা আরো খারাপ। তিনশ’ কোটি ডলারের মতো হচ্ছে বছরে। আঙ্কটাডের রিপোর্ট-২০২১ মতে, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২০ সালে ২৫৬.৪০ কোটি ডলার, ২০১৯ সালে ২৮৭.৪০ কোটি ডলার, আর ২০১৮ সালে ৩৬১.৩০ কোটি ডলার ছিল। অর্থাৎ এই তিন বছরে তিনশ’ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে শুধুমাত্র ২০১৮ সালে। তাও হয়েছে, জাপানী একটি কোম্পানী ১৪৭ কোটি ডলারে এ দেশের একটি তামাক কোম্পানী ক্রয় করায়। ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে এফডিআই ১১% কমেছে করোনার কারণে। এ অবস্থা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই হয়নি, বহু দেশেই হয়েছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালে বিশ্বে এফডিআই ৩৫% কমে হয়েছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে ছিল দেড় ট্রিলিয়ন ডলার।

অবশ্য ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে এফডিআই যে বাড়েনি তা নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে বেড়েছে ২০%। তার মধ্যে ভারতে বেড়েছে ২৭%। মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এফডিআই বেড়েছে। সউদীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০ সালে ৫৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি এফডিআই পেয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৯% বেশি। সম্প্রতি রুশ পত্রিকায় প্রকাশ, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনে নতুন করে ২৩ হাজার বিদেশী কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে চীনে বিদেশী কোম্পানির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। চীনের বিদেশী বিনিয়োগের ব্যবহার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৭% বেশি। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে চীন প্রথম বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে ছড়িয়ে গেছে। করোনাকালে বিভিন্ন দেশে চীনেরও বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যাপক। যেমন সম্প্রতি ইরানের সাথে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চীন। সম্প্রতি পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে ১,১০০ কি.মি. দীর্ঘ একটি গ্যাসের পাইপ লাইন নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে করাচি ও গাদার বন্দরের এলএনজি টার্মিনাল থেকে লাহোর পর্যন্ত প্রতি বছরে ১২.৩ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস পরিবহন হবে। সম্প্রতি হুয়াওয়ে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে এশিয়া প্যাসিফিকে। অপরদিকে, বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ জোটের ‘বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ পর্যালোচনা- ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, গত দুই বছরে বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ ১৫% হারে বেড়ে ৩৫.৩০ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির এমন উদাহরণ আরও আছে। অর্থাৎ করোনা সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দাকালেও বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে ও বাড়ছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ থেকেও বেসরকারীভাবে বিভিন্ন দেশে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘২০২০ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, দেশের বাইরে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের আউটওয়ার্ড ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৩০৭.৫০ কোটি ডলার। গত দুই বছরে আরও অনেক বিনিয়োগ হয়েছে বিভিন্ন দেশে। অর্থাৎ দেশে যে পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ দেশের অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। এছাড়া, অর্থ পাচার তো রয়েছেই। যার পরিমাণ বছরে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি ডলার।

অথচ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যার অনেকগুলোর নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিসিকেরও বহু প্লট ফাকা পড়ে রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের সুদাহার ৯-৬% করা হয়েছে। ২২টি খাতে বিনিয়োগে কর রেয়াত রয়েছে। সর্বোপরি বিনিয়োগ আনার জন্য আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুর ব্যয়বহুল রোড শো’ করা হয়েছে। তথাপি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে না, বরং কমছে। ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। অবশ্য, কয়েক বছর ধরে অবকাঠামো খাতে সরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে, যা জিডিপির ৮-৯% এবং তা মূলত বিদেশী ঋণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মধ্যে চীনের সর্বাধিক। ২০০ কোটি ডলার (যদিও চীনের বিনিয়োগ করার কথা ২,৭০০ কোটি ডলার)। তারপর জাপানের বিনিয়োগ। তাই অনেকের মতে, চীনের ঋণের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেশ। কোন দেশের বিদেশী ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৪০% হলে এবং কিস্তি ও সুদ দিতে না পারলে সে ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বিদেশী মোট ঋণের পরিমান জিডিপির মাত্র ১৪% এবং নিয়মিত কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে। তাই বিদেশী ঋণ দেশের জন্য মোটেও ঝুকিপূর্ণ নয়। অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ ও ড. নাজনীন আহমেদ ভোয়াকে বলেছেন, চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক, উৎকণ্ঠার কিছু নেই। সরকার বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ থেকেও ঋণ নিয়ে গঠন করেছে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল । যা গত ১৫ মার্চ উদ্বোধন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে বার্ষিক ২ বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা খুব ভাল উদ্যোগ। তাই এর সদ্ব্যবহার হওয়া দরকার।

দেশে বেসরকারী বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত পর্যায়ের না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, অনুকূল পরিবেশের অভাব। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক-২০২০ মতে, ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৮তম। এই সূচকে ভারত ৬৩তম, ভিয়েতনাম ৭০তম, ইন্দোনেশিয়া ৭৩তম, ভুটান ৮৯তম, নেপাল ৯৪তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, পাকিস্তান ১০৮তম, মালদ্বীপ ১৪৭তম। অর্থাৎ ব্যবসা সহজীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেই সর্বনিম্ন। এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অবস্থান কি তা বুঝিয়ে বলার অবকাশ নেই। উক্ত সূচকে দেশের অবস্থান টু ডিজিটের মধ্যে আনার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক বিষয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এতে ব্যবসা সহজীকরণে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ১৪ জুলাই প্রকাশিত জাতিসংঘের ১৪৩টি দেশের উপর চালিত জরিপ প্রতিবেদন মতে, বাণিজ্য সহজীকরণ সম্পর্কিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের হার চলতি বছরে এগিয়েছে বাংলাদেশ ৬৪.৫২% (২০১৯ সালে ৫২.৬৯%,২০১৭ সালে ৩৫% ও ২০১৫ সালে ৩১% ছিল), ভারতে ৯০%, শ্রীলংকায় ৬০%, পাকিস্তানে ৫৮%, মালদ্বীপ ও নেপালে প্রায় ৫৫%, ভুটানে ৪৩% ও আফগানিস্তানে প্রায় ৪২%। অর্থাৎ বাণিজ্য সহজকীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত অনুসারে নয়। তাই আগামী সূচকে দেশের অবস্থান দুই ডিজিটের মধ্যে আসতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। সেটা না হলে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগ আনার জন্য বিভিন্ন দেশে ব্যয় বহুল রোড শো করেও কোন লাভ হবে না। কারণ, বিদেশী বিনিয়োগ আসে ব্যবসা সহজীকরণ সূচক দেখে, রোড শো দেখে নয়।

উল্লেখ্য, ব্যবসা সহজীকরণ ছাড়াও আরো কিছু বিনিয়োগের প্রতিক‚ল বিষয় রয়েছে। যেমন এডিবি প্রণীত সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারী সুরক্ষা সূচক-২০২১ মতে, বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৯তম, পাকিস্তান ২৬তম, শ্রীলংকা ৩৮ ও নেপাল ৭২তম। দেশের পুঁজিবাজারও খুব একটা শক্তিশালী নয়। ডিএসই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত জুন শেষে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ছিল: বাংলাদেশে ৯.৪১%, ভারতে ৬২.৭৫%, শ্রীলংকায় ১৪.৯২%, থাইল্যান্ডে ৮৯.২৯%, হংকংয়ে ১৩১১.১৪% ও চীনে ৩৭.২৩%। অপরদিকে, অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বড় বিনিয়োগে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে- জামানত জটিলতা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের জমি যেহেতু সরকারের মালিকানাধীন থাকে, তাই ওই জমি জামানত হিসেবে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের সেখানে জমির মালিকানা পাওয়ার সুযোগ নেই। একই কারণে পিপিপি খাতে গৃহীত বড় প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর ধরে আটকে আছে। অর্থায়নের অভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পিপিপি’র প্রকল্পে অর্থায়ন দ্রুত করার জন্য ১৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (পিপিপি ফাইন্যান্সিং পার্টনারশিপ) করলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি উদ্যোক্তারা আর্থিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ছেন। এসব জামানত জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিডার কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণ প্রদানে জামানত জটিলতা শুধু সরকারি জমির ক্ষেত্রে নয়, বেসরকারি জমি নিয়েও নানা সমস্যায় পড়েন উদ্যোক্তারা। দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চাইলে একদিকে যেমন বেসরকারি জমি রেজিস্ট্রেশনের বিষয়গুলো সহজীকরণ করতে হবে, পাশাপাশি সরকারি জমি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের নামে এমনভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া উচিত যাতে অর্থায়ন দ্রুত হতে পারে। গত ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সিপিডি পরিচালিত বৈশ্বিক প্রতিযোগী সক্ষমতা জরিপ মতে, দেশের ৬০% ব্যবসায়ী মনে করেন, ব্যাংক খাতের অবস্থা স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রশাসনিক অদক্ষতাকে। সর্বোপরি দেশে দক্ষ জনশক্তি ও ভাল ব্যবস্থাপকের অভাব রয়েছে। ফলে লাখ লাখ বিদেশী কর্মী দিয়ে দেশে কাজ করাতে হচ্ছে। যাদের বেতন-ভাতাদি অত্যধিক। গত ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত এফবিসিসিআই আয়োজিত সংলাপে বক্তারা বলেছেন, বিনিয়োগ বাড়ানো, বাজার উন্নয়ন ও রপ্তানি খাতে বৈচিত্র আনতে দেশে দক্ষ কর্মী ও ব্যবস্থাপক তৈরি করা প্রয়োজন। অপরদিকে, মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেন্দেজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি শ্রম অধিকার ও শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার উপর তাগিদ দিয়েছেন গত ২৯ জুলাই। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি জন্য তার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ তাগিদ দেন। গত ২৩ জুন আইএফসি ও বিশ্বব্যাংক প্রণীত বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়গনস্টিক শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী দশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আকাক্সক্ষা পূরণে বাংলাদেশের এখন গতি পরিবর্তনের সময়। এ জন্য একটি আধুনিক, বৈচিত্রপূর্ণ ও প্রাণবন্ত বেসরকারি খাত গড়ে তুলতে বিভিন্ন আইন-কানুন ও নীতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।

স্মরণীয় যে, হিউস্টনভিত্তিক দ্য ভার্চুয়াল আমেরিকান কোম্পানিজ এলএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ শামীমুজ্জামানের অভিমত হচ্ছে, আমরা এখন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতের মহাকাশ অর্থনীতির আয়তন যদি ১ ট্রিলিয়ন ডলার হয়, বাংলাদেশ তার মাত্র ১% ভাগ পেলেও ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হবে, যা বর্তমানের রেমিটেন্সের চেয়েও বেশি। ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে রকেট উৎক্ষেপণ পোর্ট তৈরি করে ভাড়া দেয়ার সম্ভাবনাময় কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক জোনে রকেট এসেম্বলিং প্ল্যান্টও স্থাপন করা যায়। গোল্ডম্যান স্যাকসের মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সিমেন্ট ও টেলিযোগাযোগ খাত বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। নাউট ফ্রাঙ্ক ও সিটি গ্রুপ কর্তৃক প্রণীত ‘দ্য ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১২’ মতে, বিশ্বের সম্পদপ্রবাহ ও সম্ভাব্য বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রথম চারটি দেশের মধ্যে নাইজেরিয়া, ভারত ও ইরাকের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

দেশের বেকারত্ব হ্রাস ও উন্নতি ত্বরান্বিত ও টেকসই করার জন্য ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। এজন্য অনুকূল পরিবেশ আবশ্যক। বিনিয়োগের প্রতিকূল বিষয় সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা হয়েছে, যা খুব দ্রুত দূর করা প্রয়োজন। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে যত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, তত উন্নত হবে বিনিয়োগ সহজীকরণ। দ্বিতীয়ত অর্থ পাচার রোধ হলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগের যেসব প্রস্তাব পাওয়া গেছে এবং ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে, সেসব দেশের জন্য ক্ষতিকর না হলে কালো-সাদা কিংবা মোটা-চিকন বাছবিচার না করে খুব দ্রুত অনুমোদন করতে হবে। অর্থাৎ বিড়াল সাদা না কালো তা দেখার বিষয় নয়, ইঁদুর ধরে কিনা সেটা দেখার বিষয়-এই নীতি গ্রহণ করতে হবে দেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে শ্রমঘন, পরিবেশ বান্ধব, প্রযুক্তি ও দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক বিষয়গুলোকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারেরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে অবকাঠামো ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প খাতে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন