বর্ষা মৌসুমে জ্বর একটা সাধারণ উপসর্গ। বর্তমান সময়ে ঘরে ঘরে জ্বরের প্রার্দুভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জ্বর হলেই করোনা বা ডেঙ্গু মনে করবেন না। পরীক্ষা ছাড়া ডেঙ্গু বা করোনায় আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হবেন না। তবে হ্যাঁ সাধারণ ভাইরাস জ্বর, ডেঙ্গু বা করোনা সবই ভাইরাস দিয়ে হয়। সাধারণ ভাইরাস জ্বর মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, অর্থাৎ এটি ছোঁয়াচে। কোনো পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে প্রায়ই দেখা যায় সবাই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশে প্রধাণত রাইনো ভাইরাস নামক একধরনের ভাইরাসের আক্রমণে সাধারণত জ্বর বেশি দেখা দেয়। একে সর্দি জ্বর বলা হয়ে থাকে। এ ভাইরাস মানুষের শ্বসণতন্ত্রের উপরিভাগে আক্রমণ করে। আক্রমণ অনেকটা করোনা ভাইরাসের আক্রমণের মতোই। তবে এই ভাইরাস দুর্বল প্রকৃতির। মনে রাখবেন রাইনো ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে না। আর করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে জটিলতা সৃষ্টি করে প্রাণহানী ঘটায়। তাই সর্দি কাশি দিয়ে শুরু হলেই করোনা বলে আতঙ্কিত হবেন না। অবশ্যই পরীক্ষা করে নিবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
জ্বর কোনো রোগ নয় কোন রোগের লক্ষণ মাত্র। আসলে আমাদের শরীরে কোনো রোগ জীবানু প্রবেশ করলে তা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে একটা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সময় শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা ঠিক থাকে না। তখন দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হলে শরীরের অন্তর্নিহিত অসুস্থতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বহিঃপ্রকাশকেই জ্বর বলা হয়। থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে নিন এবং তাপমাত্রা বেশি কিনা নিশ্চিত হোন। থার্মোমিটারটি মুখের মধ্যে বা বগলের নিচে রেখে পরিমাণ করতে পারেন।
জ্বর কি ঃ আমাদের শরীরের তাপমাত্রার বয়স, স্বাস্থ্য ও প্রতিদিনের কাজ কর্মের সাথে পরিবর্তিত হয়। আবার পোশাক আশাকের উপরে ও তাপমাত্রা নির্ভর করে। তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ৯৮.৬ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে কারো ক্ষেত্রে ৯৯.৫ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭.৫ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকে। এই সীমানা অতিক্রম করলেই শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় বা জ্বর বলা হয়।
জ্বরের লক্ষণ ঃ জ্বর হলেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। তবে নিম্ন লিখিত লক্ষণগুলো বেশি প্রকাশ পায়।
* শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হতে ২ এর অধিক ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ ১০০ডিগ্রি ফারেহাইড হতে ১০৪ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে। * চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।
* শীত শীত ভাব অনুভব হয় ।
* স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম হয়।
* নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং নাক বন্ধ হয়ে আসতে পারে ।
* নাক চুলকায়।
* শরীরে ম্যাজ ম্যাজ করতে পারে।
* খাওয়া দাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে।
* মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।
* কাঁশি হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের নিকট যাবেনঃ বর্তমান সময়ে যে ঘরে ঘরে জ্বর দেখা যাচ্ছে তার বেশীর ভাগই রাইনো ভাইরাসের সংক্রমণ। বর্ষা মৌসুমের সর্দি জ্বর দুই এক দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে জ্বর দেখা দেওয়ার পর তিন চার দিনের মধ্যে না কমলে এবং নিম্ন লিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে অবশ্যই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা রেজিষ্টারড চিকিৎসকের নিকট রোগীকে নিয়ে যেতে হবে। কোনো প্রকার অবহেলা করবেন না।
* আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশু দেখতে গুরুতর অসুস্থ বা অলস ও উদ্বিগ্ন লাগলে।
* রোগীর ঘন ঘন বমি, ডায়রিয়া অথবা খিঁচুনি দেখা দিলে।
* তীব্র মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, ঘাড় শক্ত হলে, গলা ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
* হৃদ রোগীদের বেলায় হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেলে।
* চোখে ঝাপসা দেখলে।
* প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কম্পন দিয়ে জ্বর আসলে।
* জ্বর কমে যাওয়ার পরও অসুস্থ বোধ করলে।
* দিন দিন রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে।
* শিশুদের বেলায় জ্বর ৩ দিনের বেশি সময় স্থায়ী হলে ।
যা করতে হবেঃ প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্যারাসিটামল বয়স অনুসারে নিয়ম মাফিক খাওয়ানো যেতে পারে। সর্দি কাশি থাকলে অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়াতে পারেন। তাছাড়া নিম্নলিখিত কিছু পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।
* রোগীর ঘরটি আলো বাতাস মুক্ত এবং ঠান্ডা রাখুন।
* হালকা পোষাক পরিধান করতে দিন।
* পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার খেতে দিন।
* গামছা বা সুতি টাওয়াল ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে (বরফ পানি নয়) সারা শরীর মুছে দিন। তবে শিশুর শ্বাস কষ্ট থাকলে অবশ্যই সতর্কতার সাথে করতে হবে।
* লেবুর শরবত, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন খেতে দিন।
* রোগীদের টাটকা ফলমুল ও বেশী বেশী তরল খাবার খেতে দিন জ্বর কমে আসবে মুখে রুচিও বাড়বে।
সতর্কতা ঃ বৃষ্টির পানিতে হাটাহাটি করবেন না বা শিশুদের খেলতে দিবেন না। বৃষ্টিতে ভিজবেন না। বাসি কোনো খাবার খাবেন না। খাবার ঢেকে রাখবেন। জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। নিজে নিজে কোনো ঔষধ খাবেন না। মনে রাখবেন লিভার, হার্ট বা কিডনির কোনো অসুখ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতে প্যারাসিটাল খাবেন। অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাবেন না। মৌসুমি টাটকা ফল খান। সুস্থ থাকুন।
মোঃ জহিরুল আলম-শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন