হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নয়া আমীর এবং দেশের সর্ববয়োজ্যৈষ্ট আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাটাই হচ্ছে এই মুহূর্তে হেফাজত নেতা-কর্মীদের মূল দায়িত্ব। দ্বীনি ইলম অর্জন আর বিতরণ তালেবে ইলমদের প্রধান কাজ। তাই রাসুলের সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠিত করতে তালেবে ইলমদের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি ও সদ্য প্রয়াত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মা শান্তি পাবে।
তিনি বলেন, চলমান সংকট কাটাতে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য এবং হেকমতের সাথে এ দ্বীনি সংগঠনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কোন ভাবেই উসুলে দেওবন্দ থেকে বিচ্যূত হওয়া যাবে না। স্বীকৃতির নামে উসুলে দেওবন্দকে শিকল পড়ানোর চেষ্টা চলছে। স্বীকৃতি দিয়ে এখন উসুলে দেওবন্দের সিলেবাস পাল্টানোর দাবী তোলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের সর্বস্তরের ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতাকে সজাগ থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদ্য প্রয়াত হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আমার বড় ভাগিনা; আমার পিতা আল্লামা হারুন বাবুনগরীর অতি প্রিয় নাতি ছিল সে, ওনি তাকে লেখা-পড়া শিখিয়েছেন। সে কারণে জুনায়েদ বাবুনগরীও তার নানা ভক্ত। তাই তার অতি ইচ্ছা ছিল; সে মারা গেলে বাবুনগর মাদ্রাসায় নানার পাশে যেন তার দাফন দেয়া হয়, যেখানে তার মা-বাবার কবরও আছে। বিষয়টি গত ৪ আগষ্ট আমার স্ত্রীর জানাজা শেষে সে আমার ঘরে গিয়ে বাবুনগরেই তার দাফন করার জন্য ওসিয়ত করে। এ জন্যই আমি তার শেষ ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করেছি; কিন্তু আল্লাহ’র ফায়সালাই চুড়ান্ত। আল্লাহ তাকে যেখানে ইচ্ছা; সেখানেই শায়িত করেছে। তার জন্য আমার কোন ক্ষোভ নেই। সকলে তাঁর জন্য দোয়া করবে- এ প্রত্যাশাই করি।
তিনি শুক্রবার (২০/০৮/২০২১) বাদ জুমা প্রথম দিনই এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় এবং তাঁর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে আসা গাজীপুর হেফাজতের কর্মীদের উদ্দেশ্যে নসিহত কালে এ সব কথা বলেন। এরপর হেফাজতের নায়েবে আমীর আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নতুন আমীর আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে বাবুনগর মাদ্রাসায় সাক্ষাত করেন।
নয়া আমীর শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর জীবন বৃত্তান্ত
হেফাজতের নয়া আমীর আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ১৯৩৪ সনের ১৫ ফেব্রæয়ারী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার অজপাড়াগাঁ দৌলতপুরস্থ বাবুনগর গ্রামে সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আল্লামা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (রঃ) ও মাতা উম্মে ছালমা। দুই ভাই; তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশবে তিনি তাঁর বাবা আল্লামা হারুন বাবুনগরী কর্তৃক ১৯২৪ সনে প্রতিষ্ঠিত আল-জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করেন। ৮ বছর (চাহরম শ্রেণী) পড়ে ১৯৪৯ সনে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর (চুয়াম শ্রেণী পর্যন্ত) পড়ে ১৯৫২ সনে পাড়ি জমান ভারতের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাঙ্গন ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ মাদ্রাসায়। সেখানে গিয়ে তিনি আবারো চুয়াম (৯ম শ্রেণী), দুয়াম (১০ম শ্রেণী), উলা ও দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন। পরে আরো এক বছর হাদীস শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ওই সময় তাঁর ওস্তাদ ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (রঃ), আল্লামা বলিয়ভী (রঃ) ও শায়খুল হাদীস আল্লামা সৈয়দ ফখরুদ্দীন (রঃ)। ওখানে যাওয়ার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী ইন্তিকাল করেন এবং সেই ঐতিহাসিক জানাজায় তিনি শরীক ছিলেন।
১৯৬০ সনে তিনি দেওবন্দ থেকে ফেরৎ এসে পিতার প্রতিষ্ঠিত বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮৬ সনে তাঁর গর্বিত পিতা আল্লামা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী ইন্তিকাল করলে তিনি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম নিযুক্ত হন; সে থেকে আজ অবদি তিনি মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৬০ সনে দেওবন্দ থেকে ফিরেই পিতার নির্দেশে ফটিকছড়ির ধর্মপুর আদু বাপের বাড়ী থেকে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মরিয়ম বেগম; তিনি গত ৪ আগষ্ট ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর ৩ পুত্র মাওলানা মুহাম্মদ আইয়ুব বাবুনগরী, মুফতি মুহাম্মদ মহিউদ্দীন বাবুনগরী ও মাওলানা মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন বাবুনগরী এবং ৮ কন্যা সন্তান; যারা সকলে বিবাহিত।
তিনি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র নায়েবে আমীর ছিলেন; কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতি নেয়া বিষয়ে বিরোধের জের ধরে তিনি হেফাজত, হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকুল মাদারিস এবং ইসলামী ঐক্যজোটসহ সব সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফির ইন্তিকালের পর তিনি হেফাজতে ফেরেন এবং সংগঠনটির আমীর হবার সম্ভাবনা থাকলেও আপন বড় ভাগিনা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মত্যাগ মূল্যায়ন দিতে তিনি তা হতে রাজী হননি। তবে ওনাকে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ আগষ্ট) ভাগিনা হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আকষ্মিক মৃত্যুতে আমীর পদটি শুন্য হলে জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজায় আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে হেফাজতের নতুন আমীর ঘোষণা করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন