দুর্নীতি এবং অর্থপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়া ডিআইজি (প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেয়ায় ক্ষমা প্রার্থনা এবং ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চে গত বৃহস্পতিবার তিনি এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। গতকাল রোববার এ তথ্য জানান, বিষয়টি দৃষ্টিতে আনয়নকারী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন। ইকবাল হোসেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেয়ার ‘ভুল’ স্বীকার করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও প্রার্থনা করেন। ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ফৌজদারি আপিল নং (১০৫৩৪/১৯) মামলায় গত বছরের ২ নভেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে পার্থ গোপাল বণিকের মামলার বিচার ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্নের জন্য জজ ইকবাল হোসেনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ আদেশ যথা সময়ে না পৌঁছায় ৬ মাসের সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বলে আসামির আইনজীবী বিশেষ আদালতকে অবহিত করেন। এছাড়া ফৌজদারি রিভিশন মামলা নং (১৪৫/২১) মামলায় গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট অপর এক আদেশে মামলাটির বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়। গত ১০ মার্চ এই আদেশের অনুলিপি পান। এই আদেশে উল্লিখিত সময়সীমার মেয়াদ এখনও রয়েছে। বিশেষ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন ব্যাখ্যায় দাবি করেন, তিনি হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।
এর আগে গত ২৮ জুন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন মঞ্জুরের ঘটনায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনের ব্যাখ্যা চান আদালত। সেই সঙ্গে পার্থ গোপাল বণিক অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেয়ার বিষয় নিয়ে একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া পার্থ গোপাল বণিকের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। ৮০ লাখ টাকাসহ হাতে নাতে গ্রেফতার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেয়ার বিষয়টি দৃষ্টিতে আনেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন। এছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক। জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিক গত ১৯ জুন জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন আদেশ নিয়ে তার পর দিনই তিনি কারামুক্ত হন। অনেকটা গোপনে ও তড়িঘড়ি করে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন তিনি। এই মামলায় গত বছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। সেই টাকা পার্থ গোপাল বণিক তার নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অভিযান পরিচালনা করে তার বাসা থেকে ওই টাকা জব্দ করা হয়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, পার্থ গোপাল বণিক গত বছরের ২৮ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পার্থ গোপাল বণিক জানান, তার বাসায় ৩০ লাখ টাকা নগদ রয়েছে। তবে ওই টাকার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এই মামলায় হাইকোর্টে একাধিকবার জামিন আবেদন করেও তার জামিন মেলেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন