শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাসাইলে ৮ কমিউনিটি স্কুল : দেড় যুগ বেতনভাতা বন্ধ থাকায় ২৮ শিক্ষক-শিক্ষিকার মানবেতর জীবন

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাসাইল (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : ২০১৩ সালের ১ জুলাই। সেদিন সরকার দেশের নন রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সাথে টাঙ্গাইলের বাসাইলের ৮টি কমিউনিটি স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হলেও এখানকার শিক্ষকরা জাতীয়করণের আওতায় আসেনি। ৮টি বিদ্যালয়ে ২৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রায় দেড় যুগ ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, উপজেলায় কমিউনিটি বিদ্যালয় ছিল ২৪টি। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হয় এ বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম। বিনা বেতনে কাজ করে চলতে না পারায় চাকরির মতো সোনার হরিণও নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিয়েছেন শিক্ষকরা। এর ফলে ২৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬টি বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ৮টি বিদ্যালয় চালু রয়েছে এ উপজেলায়। ৮টি কমিউনিটি বিদ্যালয়ে ২৮ জন শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে ৬ জন শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। ফলে ৬টি শূন্য পদ রয়েছে। বর্তমানে ৮টি বিদ্যালয়ে ২২ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও বেতনের আসায় বিনা বেতনে দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরি করে আসছেন। ২০১৩ সালে উপজেলার ৮টি কমিউনিটি বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও এখানকার শিক্ষকরা জাতীয়করণের আওতায় না আসায় তারা হতাশা প্রকাশ করেন। উপজেলার ৮টি কমিউনিটি বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি কমিউনিটি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে এবং শিক্ষকরা সরকারি অনুদান পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় ধাপ পর্যায়ক্রমে তৃতীয় ধাপে এসব শিক্ষকরা জাতীয়করণের আওতায় আসার কথা থাকলেও এখনও নতুন গ্যাজেটে তাদের নাম সংযুক্ত হয়নি। এখানকার বিদ্যালয় রাজস্বতে যাওয়ার পরও রাজস্বের কোন সুবিধাই পাচ্ছে না বিদ্যালয়ের কর্মরত প্রায় ২৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এসব বিদ্যালয়ে প্রথমে ৫শ’ টাকা মাসিক ভাতায় নিয়োগ পেলেও এখন পর্যন্ত এক পয়সা বেতনও পাননি এসব শিক্ষক-শিক্ষিকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সময়মতো বিদ্যালয়ে যাওয়া এমনকি সময়মতো অফিস শেষ করা। এভাবেই নিয়মিত চলছে তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম। এসব বিদ্যালয়ের ভবন থেকে শুরু করে সরকারি পাঠ্য বই, প্রশ্নপত্র, সমাপনীতে অংশগ্রহণসহ সরকারি সব সুবিধা পেলেও সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষকরা। তারা না পাচ্ছেন সরকারি বেতনভাতা, না নিতে পারছেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টিউশন-ফি। এ ব্যাপারে কথা হয় নন-এমপিও শিক্ষক কাজী শাহীনুর বেগমের সাথে, তিনি ১৯৯৭ইং সালে ব্রাহ্মণ পাড়িল পূর্ব পাড়া কমিউনিটি স্কুলে যোগ দেন। তিনি বলেন, ৫শ’ টাকা মাসিক বেতনে নিয়োগ পেলেও এখন পর্যন্ত এক টাকাও পাইনি। আমার স্বামীও নাইকানী বাড়ি কমিউনিটি স্কুলে ১৯৯৭ সাল থেকে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনে প্রাইভেট পড়িয়ে কোনরকমে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। নন-এমপিও শিক্ষক শিউলী আক্তার বলেন, প্রায় দেড় যুগ হলো নিয়োগ পেয়েছি। আজ পর্যন্ত এক টাকাও বেতন পাইনি। প্রতিদিন বাড়ি থেকে স্কুলে আসতে-যেতে (ভ্যান ভাড়া) আমার প্রায় ৫০ টাকা খরচ হচ্ছে। স্বামীর উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোনভাবে সংসার চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকলিমা চৌধুরী বলেন, এসব শিক্ষকদের জাতীয়করণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন