সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঐতিহ্য হারাচ্ছে পানের বরজ

জসিম উদ্দিন আহমদ, সোনাগাজী (ফেনী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

পান বহুল প্রচলিত একটি মুখরোচক খাবার। সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ও চর মজলিশপুরে স্বল্প পরিসরে পান চাষ হয়। ওই সব এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় শত বছর আগেও এখানে ব্যাপক হারে পান চাষ হতো। উপজেলায় বর্তমানে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ৮০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে পান। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ও প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পানচাষিরা। ফলে হারিয়ে যেতে পারে সোনাগাজীর এ ঐতিহ্য।

জানা যায়, এখানকার উৎপাদিত পান ফেনীর চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে সোনাগাজী বাজার, কুঠিরহাট, দাসের হাট, কারামতিয়া ও কাজিরহাট থেকে সপ্তাহে দুই দিন পান সংগ্রহ করে নিয়ে যেত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সপ্তাহের দুদিন পাইকারদের চাহিদা অনুযায়ী পান বাজারজাত করতেন চাষিরা।

উত্তরচর সাহাভিকারী গ্রামের পানচাষি শেখ আলী আহম্মদ জানান, নিজস্ব ৭০ শতক জমিতে পান চাষ করেন। উৎপাদন বাড়ানো, রোগব্যাধি নির্মূল, সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নতুন করে পান চাষে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উপাদানের খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পুরোনোরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পান চাষ থেকে। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সোনাগাজীর এ পান শিল্প। চরসাহাভিকারী গ্রামের যজ্ঞেশ্বর মজুমদার জানান, পারিবারিকভাবে তারা ৫০ বছরের বেশি সময় পান চাষ করছেন। তার সংসারের একমাত্র
আয়ের উৎস পানের বরজ। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পান চাষ কমিয়ে সেই জমিতে অন্যান্য সবজি চাষ করেন। কোনো প্রকার সহযোগিতা বা প্রশিক্ষণ দেয় না কৃষি দফতর। পানচাষি রতন দাস বলেন, পরিবারের ঐতিহ্য হিসেবে পূর্ব পুরুষদের ন্যায় আমরা মাত্র ত্রিশ শতক জমিতে পান চাষ অব্যহত রেখেছি। আগে দেড়-দুই একর জমিতে চাষ করতাম। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আবারো চাষাবাদ বৃদ্ধির ইচ্ছা আছে।

চর দরবেশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টো জানান, পানচাষিদের জন্য কৃষি দফতর বা ইউনিয়ন পরিষদের বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। তবে পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময় চাষিদের সহযোগিতা করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, সোনাগাজীর চর দরবেশ ও চর মজলিশপুরে ৭০ জন কৃষক প্রায় ৭৫ একর জমিতে পান চাষ করছেন। তিন চার বছর আগেও এর পরিমাণ দ্বিগুণ ছিল। পান চাষিদের সরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণের বা প্রণোদনা দেয়ারমতো বরাদ্দ নেই। তবে চাষিরা যদি কোনো পরামর্শ চায় তখন আমরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। পানচাষিরা যদি প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেন তাহলে কৃষি দফতর থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন