আগুন লেগেছে সিলেটে বিএনপিতে। বাইরের শক্রর ঠেলা সামলাবে না, ঘরের শক্রর। সেকারণে নতুন সংকটের মুখে পড়েছে বিপুল জন সমর্থনের এদলটি। এখন লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে দলটির অস্তিত্ব। ভাঙ্গা ঘরে নতুন আগুনে চরম উত্তাপ ছড়াচ্ছে দলটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। সেকারণে অভিযোগ উঠছে ‘অবমূল্যায়নের’। ঝড় উঠছে ক্ষোভের। দল ছাড়ছেন ত্যাগী রাজনীতিকরা। সেই রাজনীতিকরা সিলেট বিএনপির অস্তিত্বের সাথে ছিলেন একাকার। রাজনীতিক মাঠে বিএনপির পরিচয়ে পরিণত হয়েছিলেন তারা ব্র্যান্ডে। দলের চরম মুহূর্তে রাজপথে নামলে তারা তেজি হয়ে উঠে মাঠ। কর্মী সমর্থকরা প্রাণ বাজী রাখতে হয়নি পিছপা। রাজনীতিক মামলার পাহাড় ঘাড়ে নিয়েও সাহসিকায় দ্যুতি ছড়াতো তারা। কেবল মাত্র নেতৃত্ব সংকটে সেই প্রাণ শক্তি এখন দিশেহারা। সেকারণে বিএনপির রাজনীতি এখন ঝিমিয়ে পড়েছে সিলেটে। এনিয়ে দলের অভ্যন্তরের বিরাজ ছিল তুষের আগুণ। সেই আগুণ আর নিয়ন্ত্রণে নেই সিলেটে বিএনপিতে। এবার লেলিহান শিখায় পরিণত হয়ে বিএনপির অস্তিত্বকে করে তুলছে ‘তামা’ ‘তামা’। অবমূল্যায়নের ঘটনায় ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে। সেই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ করেছেন দলের সাহসী নেতা এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। গত ১৭ আগষ্ট রাতে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। এ ঘোষণাতে ঝড় উঠে স্বেচ্ছাসেবক দলে। অভিনন্দন বা উছ্বাসের বদলের শুরু হয় প্রকাশ্যে পদত্যাগের হিড়িক। ১৮ আগষ্ট রাতে রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের করে ইতি টানেন বিএনপি রাজনীতির। দলটির কেন্দ্রীয় সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনাতে বলেন, ঘোষিত জেলা ও মহানগর শাখার আহবায়ক কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের করা হয়েছে অবমূল্যায়ন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর নিজের পদত্যাগপত্রও পাঠান তিনি। পত্রত্যাগ পত্রে জামান উল্লেখ করেছেন, “অত্যন্ত দুখ ও পরিতাপের বিষয় হলো– গতকাল (১৭ আগস্ট) সিলেট জেলা ও মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষিত হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমার জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষিত হল আমার, মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে। সর্বোপরি যেসব সহযোদ্ধা আন্দোলন করতে যেয়ে জীবন বাজি রেখেছিল, গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, এমনকি সমাজ, সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, তাদেরকে চরমভাবে উপেক্ষা করে উপহাসের পাত্রে পরিণত করা হলো।” ৩৬ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করা আসা জামান দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার পদত্যাগের মধ্যে আরো অনেক রাজনীতিক পদত্যাগের ঘোষণা দিতে থাকনে সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে। গত শনিবার জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটি থেকে আরোও ১১ নেতা পদত্যাগ করেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে পদত্যাগের কথা জানান তারা। পদত্যাগীরা হলেন- সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ বক্স, সদস্য মওদুদুল হক, শহিদুল ইসলাম কাদির, আলতাফ হোসেন বেলাল, আমিনুল হক বেলাল, আক্তার আহমদ, সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, টিটন মকি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রুজেল আহমদ চৌধুরী, মো. আবদুর রকিব তুহিন ও আবদুল হান্নান।
এদিকে, গত সোমবার বিএনপির অঙ্গসংগঠন তাঁতী দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আরোও তিন নেতা। সিলেট মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফফার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রে। পদত্যাগী এসব নেতাদের অভিযোগ, দলে তাদেরকে এবং তাদের কর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। দলে গণতন্ত্রের চর্চা ঠিকমতো হচ্ছে না। তবে এ পদত্যাগে বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, পদত্যাগীরা মূলত সামসুজ্জামান জামানের অনুসারী। তিনি পদত্যাগ করায় সে পথেই হেঁটেছেন তারাও। বিএনপি সংশ্লিষ্টরা বলছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়ে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে যে টানাপোড়ন শুরু হয়েছে, এর পরিণাম দলের জন্য শুভকর নয়। পদত্যাগীরা রাজপথে পরীক্ষিত। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য একটি রাজনীতিক দল বিএনপির নেতৃত্ব সিলেটে রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা। রাজনীতিক পরিচয় কেবল সুবিধা ভোগের অলংকার তাদের। অতীতে তেমনটিই করেছেন তারা। উচ্ছ্বাসের ঘাম ঝরানোর কোন ইতিহাস নেই তাদের। এসি রুমে বসে চর্বি জমিয়েছেন শরীরে। রাজনীতিক কর্মসূচীতে ‘শো’ পিছ হিসেবে তাদের অবস্থান। কর্মসূচী পালনের পূর্বে স্থানীয় শাসক দলের নেতাদের মতামত নিয়ে ফটোসেশনে ক্ষণিকের জন্য নামেন তারা। এর বাইরে তারা নিশ্চুপ, নির্লিপ্ত। মামলা চাপও নেই তাদের ঘাড়ে। কারন তারা শাসক দলের ছকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন দলের কর্মকান্ডকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপির পরীক্ষিত এক নেতা বলেন, বিএনপি সমুদ্রের মতো একটি সংগঠন। সবাই সাঁতার কাটতে পারে, আপত্তি নেই। কেউ পদ পদবীর লোভ বা অবমূল্যায়নের অজুহাতে ডাঙ্গায় উঠে গেলে বিএনপি রাজনীতির কিছু আসে যায় না। পদ ছাড়া কি দল করা যায় না ? তবে তিনি বলেন, বিএনপি রাজনীতিতে মূল্যায়নের নিক্তি কি তা প্রশ্নবিদ্ধ। সেই নিক্তি শাসক দল আওয়ামীলীগের কাছ থেকে শেখার রয়েছে। চেইন অব কমান্ড বা সিনিয়রদের সামনে রাখার একটি নন্দিত রেওয়াজ রয়েছে আ’লীগে। তিনি আফসোস করে বলেন, আ;লীগ রাজনীতিতে পদ পদবীর মূল্যায়নে সিনিয়র একটি ফ্যাক্ট। সেকারণে এই দলে শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে সিনিয়র সিটিজেনদের । তাদের পরিবার সমাজ, গোষ্টি মূল্যায়ন করে। কিন্তু উপেক্ষিত সিনিয়র সিটিজেনদের অংশ গ্রহণ বা অবস্থান বিএনপির রাজনীতিতে। নাবালকরা ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার অশুভ রেওয়াজে বিপর্যস্ত এখন বিএনপির রাজনীতি। মুরব্বিয়ানা চেপেছে জুনিয়রদের উপর। তারা আগুণ লাগানো শিখেছে, নেভানোর পরিপক্বতা বা কৌশল এখনো শিখেনি।
এব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, পদত্যাগ বিএনপির জন্য বিব্রতকর বা অস্বস্তিকর নয়। পদত্যাগীরা কেবল মাত্র জামানের অনুসারী। তারা বিএনপির অনুসারী হলে, পদত্যাগ করতেন না তারা।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, অনেক সময় ত্যাগীরা হয়তো মূল্যায়িত হয়নি। তাই বলে রাজনীতি তো শেষ হয়ে যায়নি। রাজনীতি টেস্ট ম্যাচের মতো, মাঠ কামড়ে থাকতে হবে। কেবল মাত্র পদ পদবীর ক্ষোভে অভিমান করে উচিত নয় দলত্যাগ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন