এম এ মতিন, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্রয়লার মুরগিতে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে মানবদেহে সৃষ্টি হচ্ছে মারাক্তক সব রোগব্যধি। শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তবে সে মৃত্যু ঝুঁকির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নিরাপদ ব্রয়লার মাংস উৎপাদনে নেমেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের দেড়শ ব্রয়লার খামারী। তারা অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত মাংস উৎপাদন করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। মুরগীর খামারে অহেতুক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করে অধিক মাংস উৎপাদন করছে তারা। খামারে পরিমিত ওষুধ ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়াই খামারীরা অর্থনৈতিকভাবেও বেশ লাভবান হচ্ছে। শ্রীপুরের গোসিংগা ইউনিয়নের কর্নপুর গ্রামের প্রায় দেড়শ ব্রয়লার খামারী এ সফলতা লাভ করেছে। এ সাফল্যের রোল মডেল এখন কর্নপুর গ্রাম। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের নিরলস পরিশ্রমে খামারীরা এন্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগী পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা এখন শুধু কর্নপুর গ্রামেই সীমাবদ্ধ না থেকে আশপাশের আরো ৪-৫ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, এ দেশে নব্বইয়ের দশক থেকে পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করে । দিন দিনই ব্রয়লার মুরগী পালনে আগ্রহী হয়ে উঠে বেকার যুবক-যুবতীরা। আর এতেই আমাদের দেশীয় আমিষের চাহিদার অর্ধেক পূরণ করতে সক্ষম হয় ব্রয়লার মুরগীর মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে। কিন্তু খামারীরা নিজেদের অজান্তে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির নির্দেশনায় অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। অধিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত মুরগীর মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি পরিশ্রমি খামারীরা অহেতুক এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নিরাপদ ব্রয়লার মাংস উৎপাদন প্রজেক্টের আওতায় ডিএলএস (ডাইরেক্টর অব লাইফস্টক সাভির্সেস) কয়েকজন খামারী নিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ প্রকল্প চালু করে। কর্নপুর গ্রামের ব্রয়লার খামারী তাজ উদ্দিন মোড়ল জানান, আগে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মুরগীর খামারে অধিক পরিমাণে এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করতাম। এতে ১ হাজার মুরগীর একটি ব্যাচ পালন করতে ১৫-১৮ হাজার টাকার ওষুধ লাগত। তবে গত ৮-১০ মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসের ডাক্তারদের নির্দিষ্ট পরামর্শে এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগী পালন করছি । ওই গ্রামের আরেক খামারী আলম খন্দকার জানান, অহেতুক এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার না করায় এখন ৪-৫ হাজার টাকার বেশি ওষুধ লাগে না ১ হাজারের একটি মুরগীর ব্যাচ পালন করতে। আমাদের লাভ হচ্ছে, খরচও কমেছে, স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ব্রয়লার মাংস উৎপাদনেও আমাদের ভূমিকা থাকছে। পুষ্টিবিদ জিনাত শারমিন জানান, ব্রয়লার মুরগীর মাংসে অধিক পরিমাণ আমিষ রয়েছে। তবে বেশি পরিমাণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে সে মাংসই স্বাস্থ্যের জন্য মারাক্তক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। নিদিষ্ট সময়ের আগে (উইথড্রোল পিরিয়ড) এন্টিবায়োটিকযুক্ত মাংস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল জলিল জানান, সারা দেশে ২৫টি উপজেলায় এ নিরাপদ ব্রয়লার মাংস উৎপাদন প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে কর্নপুরের খামারীরা অন্যতম সফলতা অর্জন করেছে। আমরা হাসপাতাল থেকে নিয়মিত ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করি। ডেইলি রেজিস্টার খাতায় মুরগির খাদ্য তালিকা পর্যবেক্ষণ করি। সাধারণত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ১২-১৪ দিন (উইথড্রোল পিরিয়ড) মাংস খাওয়া মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এন্টিবায়োটিক কম ব্যবহারের কারণে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে তেমনি খামারীদের অর্থনৈতিক ক্ষতিও কমেছে ৭০-৭৫ শতাংশ। গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. অখিল চন্দ্র বলেন, অধিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত মাংস খেলে মানব শরীর মাল্ট্রি ড্রাগ রেজিস্টেন্স হয়ে পড়ে। এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ মুক্ত না এমন মাংস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্টসহ মানব দেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আমরা বিভিন্ন উপজেলায় পর্যায়ক্রমে এন্টিবায়োটিক ওষুধমুক্ত ব্রয়লারের মাংস উৎপাদনে কাজ করব ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন