ড. শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাংকের কাজ করার সময় একজন সিগারেট জ্বালাতে গেলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়। এতে ঐ বাড়ির কেয়ারটেকারসহ ৬ জন মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎ নিতে বাধ্য হয়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। এমন মর্মান্তিক ঘটনা বারবার ঘটছে। অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। কিন্তু এসব দুর্ঘটনা থেকে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করছেন না- এটাই পরিতাপের বিষয়।
কয়েক দিন আগে টাম্পাকো নামে সিগারেটের ফয়েল তৈরির কারখানায় আগুন লাগলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে কারখানাটি যেমন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়, তেমনই মর্মান্তিকভাবে ৪০ জনের অকাল মৃত্যু ঘটে। আশপাশের কয়েকটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফয়েল কারখানায় কর্মরত ছিলেন এমন ১০ জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ। সিগারেটের ফয়েল পেপার তৈরির কারখানার আগুন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, সেনাবাহিনীর ফায়ার ফাইটার্স ইউনিটকে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত করতে হয়।
টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় আগুন লাগার কারণ হিসেবে প্রথমে বয়লার বিস্ফোরণের কথা বলা হলেও তার প্রমাণ মেলেনি। তদন্ত করে দেখা যায়, কারখানার দু’টি বয়লারই অক্ষত রয়েছে। কেউ কেউ বিদ্যুতের শর্টসার্কিটকে দায়ী করলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, কারখানায় বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ অর্থাৎ কেমিক্যাল মজুত ছিল। শ্রমিক-কর্মচারীদের কেউ সেখানে সিগারেট জ্বালালে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ঘটতে পারে সহজেই। আর আগুনের সূত্রপাত হলে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট হওয়া স্বাভাবিক। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর এ বিষয়টি তলিয়ে দেখা প্রয়োজন।
সিগারেটের আগুন থেকে যদি টাম্পাকো ফয়েল কারখানার ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেই থাকে তাহলে ধরে নেয়া যাবে যে, এর পেছনেও সিগারেটের মরণনেশাই দায়ী। শুধু ধানমন্ডির আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাংক মেরামতের সময় কিংবা টাম্পাকো ফয়েল পেপার কারখানায় সিগারেট জ্বালাতে গিয়েই ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত ঘটেনি; আরও অনেক ভয়ঙ্কর অগ্নিকা-ের জন্য দায়ী এই সিগারেটের মরণনেশা।
উল্লেখ্য, টাম্পাকো ফয়েল পেপার তৈরির এই কারখানা স্থাপনের পেছনের মূল উদ্দেশ্যও হচ্ছে সিগারেট। এই সিগারেটের মরণনেশাই কেড়ে নিল এতগুলো শ্রমিকের প্রাণ। খতম হয়ে গেল কতকগুলো পরিবারের উপার্জনের চালিকাশক্তি। অথচ সিগারেটের ফয়েল তৈরির কারখানাটি স্থাপিত না হলে এমন ভয়াবহ অগ্নিকা- হয়তো নাও ঘটতে পারত।
জীবনের জন্য অনিবার্য শিল্প যেমন- বস্ত্র তৈরি, ওষুধ তৈরি, ফুড প্রসেসিং কারখানা, চিনিকল প্রভৃতি শিল্পকারখানা জরুরি। এগুলো না হলে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। সভ্যতার অগ্রযাত্রা পর্যন্ত ব্যাহত হয় এমন সব শিল্পকারখানার অভাবে। কিন্তু বিড়ি-সিগারেট তৈরির কারখানা কিংবা সিগারেটের ফয়েল পেপার প্রস্তুতের কারখানা না থাকলে সভ্যতার কোনওপ্রকার ক্ষতি হয় না। সিগারেট-বিড়ি, জর্দা, গুল, তামাক এসব না থাকলে মানুষ অনেক অপকর্ম ও উটকো ঝামেলা থেকেও আমাদের সমাজ রেহাই পেতে পারে।
সিগারেট-বিড়ির মতো মরণনেশার আগুনে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পিতা-পুত্রের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে নেশার জন্য। এমনকি নেশাদ্রব্য কেনার টাকা না পেয়ে কোনও কোনও কুপুত্র তাদের পিতা-মাতার ওপর চড়াও হবার এমনকি মেরে ফেলার মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাও ঘটিয়ে বসে কখনও কখনও। সিগারেটের এই মরণনেশা যেমন অনেক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী; তেমনই সভ্যতার অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতারও অনিবার্য অনুসঙ্গ এই নেশা।
ষ লেখক : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন