রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঘরের আলোয় মাশরুম চাষে সাফল্য

প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে

মীরসরাই উপজেলায় মাশরুম চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি মাশরুম চাষ করে সফলও হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুদর্শন রায়। সম্প্রতি তিনি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ গ্রামে ও মীরসরাই পৌর এলাকায় ২টি মাশরুম সেন্টার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে প্রতিদিন ২০ কেজি করে ওয়েস্টার মাশরুম বিক্রি করেন তিনি। জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে ওয়েস্টার মাশরুম চাষ করার জন্য বায়ু চলাচলের সুবিধাপূর্ণ আবছা আলোযুক্ত ঠা-া একটি ঘর নির্বাচন করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সে. এর মধ্যে হতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানে স্বল্প ব্যয়ে নির্মিত কুটির মাশরুম চাষের জন্য সবচেয়ে উত্তম। ঘরের আর্দ্রতা ৬০-৭০% রাখার জন্য ঘরের ভেতর সুতি কাপড় বা চট টানিয়ে নিয়মিত ভিজিয়ে দিতে হবে। পরবর্তীতে পরিপূর্ণ মাইসেলিয়াম আসা মাশরুমের বাণিজ্যিক বীজ প্যাকেট সংগ্রহ করে প্যাকেটের কাঁধ বরাবর ২ ইঞ্চি লম্বা ও ১.৫ ইঞ্জি চওড়া করে ইংরেজী ডি আকারে কেটে ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পানি ঝড়িয়ে প্যাকেট ৪ইঞ্চি দূরত্বে তাকে সাজিয়ে দিতে হবে। চাষ ঘরের আর্দ্রতা ৬০-৭০% বজায় রাখার জন্য ২/৩ ঘণ্টা পরপর পানি স্প্রে করা প্রয়োজন। এভাবে পরিচর্যা করলে ৪/৫ দিন পরে মাশরুমের অংকুর দেখা দেবে এবং ৫/৬ দিন পর মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। একবার মাশরুম সংগ্রহের পর চামচ দিয়ে মাশরুম উৎপাদনের স্থানটি ছেঁচে দিতে হবে এবং পুনরায় তাকে সাজিয় আগের মত পরিচর্যা করতে হবে। একই স্থান থেকে ১৫-২০ দিন পর পুনরায় ২য় বার মাশরুম বের হবে। এভাবে একটি বাণিজ্যিক বীজ প্যাকেট থেকে ৬-৭ বারে ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া সম্ভব। ওয়েস্টার মাশরুম বিভিন্ন ধরনের কৃষ্জি ও বনজ বিধায় কাঠেরগুঁড়া, ধানের খড়, গমের খড়, আখের ছোবা, কাগজ, চায়ের পাতি, সুপারির ছালসহ বহুবিধ উপকরণ দিয়ে চাষ করা যায়। সরেজমিনে উপজেলা সদরে অবস্থিত মাশরুম সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সুদর্শন রায় কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে মাশরুমের পরিচর্যা করছেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি নিজে থেকে মাশরুমের যতœ নেন। শুরুতে তিনি একা মাশরুম চাষ করলেও এখন তার অধীনে ৩০ জনের অধিক শ্রমিক কাজ করেন। সুদর্শন রায় বলেন, বর্তমানে আমরা দৈনন্দিন খাবারে শাক-সবজি হিসেবে যেগুলো খাই সবগুলোতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে মাশরুম উৎপাদনে কোন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরা সুস্বাদু ও বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর মাশরুম। মাশরুমের গুণাগুণ শুনে আমি মাশরুম খাওয়ার জন্য মীরসরাইতে একাধিক স্থানে খুঁজে কোথাও পাইনি। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শহর থেকে কিনে নিয়ে আসি। মাশরুম খাওয়ার পর আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তাছাড়া বিষমুক্ত খাবার হিসেবে মাশরুমের চাহিদা থাকায় এটার উৎপাদনের আমার প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাই শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর নেয়ার পর জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রের অধীনে মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ নিই। পরবর্তীতে ওখান থেকে মাশুরুমের বীজ নিয়ে এসে মীরসরাইতে আমার নিজ এলাকা চরশরতে মাশুরুম সেন্টার গড়ে তুলি। ওখানে মাশরুম উৎপাদন ভালো হওয়ায় মীরসরাই সদরে আরো একটি শাখা চালু করি। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন জায়গাতে লোকজন এসে মাশরুম নিয়ে যায়। এখন আমার ২টি সেন্টারে প্রতিদিন ওয়েস্টার মাশরুম ২০ কেজি হয়। প্রতি কেজি ওয়েস্টার মাশরুম ৩০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। বিক্রি পরবর্তীতে যেগুলো থাকে সেগুলোকে শুকিয়ে পাউডার হিসেবে বিক্রি করা হয়। মাশরুমের শুকনো পাউডার প্রতি কেজি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ২টি সেন্টার গড়তে দশ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে তিনি ওয়েস্টার, ফলো, পিএসপি, পিওপি, এইচকে-৫১ জাতের মাশরুম উৎপাদন করেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন, মাশরুম চাষ করার জন্য বৃহৎ জায়গা কিংবা অনেক টাকার মূলধনের প্রয়োজন হয় না। যাদের জায়গা নেই তারা ইচ্ছে করলে বাড়িতেও মাশরুম চাষ করতে পারেন। বর্তমানে দেশে যেভাবে বেকারের সংখ্যা বাড়তেছে তারা ইচ্ছে করলে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। আর স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের ভাগ্য ফিরাতে পারে। মাশরুম চাষে কেউ আগ্রাহী হলে তিনি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সকল ধরনের সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকতা বুলবুল আহমদ বলেন, ‘সুদর্শন রায়ের মাশরুম সেন্টারগুলোতে অল্পদিনে ভালো ফল দেয়া শুরু হয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা করলে অল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সুদর্শন রায়কে নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য যে সুদর্শন রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। পরবর্তীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও বেকারদের কথা চিন্তা করে নবরূপা বেনারসী পল্লী, কেঁচো সার প্রকল্প ও মাশরুম সেন্টার চালু করেন। তিনটি প্রতিষ্ঠানে তার অধীনে বর্তমানে তিনশ শ্রমিক কাজ করেন। ইতোপূর্বে দেশের মংগা কবলিত এলাকা রংপুর, নীলফামারী, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কেয়ার বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি এর সাথে কাজ করেছেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Hasinaperveenbeauty@gmail.com ১৬ জুন, ২০২০, ৬:২৪ পিএম says : 0
Ami masrum cash korte cai. Sahajj korbrn keu?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন