শস্যভান্ডার খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল। এ বিলের তিন হাজার হেক্টরজমিতে এই উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার কৃষক চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমান আমন মৌসুমে বিল জুড়ে সবুজের সমহার। যেদিকে চোখ পড়ে সেদিকেই চোখ জুড়ানো সবুজ আর সবুজ। এই গুমাই বিলের কৃষকের মাথায় এখন বাম্পার ফলনের স্বপ্ন। বিলে লাগানো কচি ধান চারাগুলি ক’দিনেই পরিপুষ্ট হয়ে সবুজ আকার ধারণ করেছে। রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থতি কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক ধরে মরিয়মনগর চৌমুহনী এলাকা হয়ে চন্দ্রঘোনায চোখে পড়বে সবুজ গুমাই বিলের দৃশ্য। ফসলের মাঠ যেন সবুজ গালিচায় ডেকে দেয়া হয়েছে। এই দৃশ্যে যে কোন মানুষের চোখ আটকে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদন হয় এই বিলে। চলনবিলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রামের এই শস্যভান্ডারে গত মৌসুমে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে খাদ্য উৎপাদন করে প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এই গুমাই বিল। আব্দুল বারী তালুকদার নামের এক ব্যক্তি ১৯৪৫ সালে গুমাই বিল সংস্কার করে প্রথমবারের মতো আধুনিক চাষাবাদের সূচনা করেন। গুমাই ঝিল থেকে গুমাই বিলে পরিণত করার কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে বিলের জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনা হয়।
রাঙ্গুনিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার ও লোকন বিশ্বাস জানান, উপজেলার মরিয়মনগর, চন্দ্রঘোনা, স্বনির্ভর, হোসনাবাদ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বি¯ৃÍর্ণ এলাকা জুড়ে গুমাই বিল। গত বছরের মতো এ বছরও গুমাই বিলে ৩ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ব্রি ৯৫, বীণা ১৭, স্বর্ণা ৫, ব্রি ৭১, ব্রি ৭৫, ব্রি ৪৯, ব্রি ৫০, ব্রি ৫২, ব্রি ৭২, ব্রি ৮১ জাতের আমন বীজ রোপণ করা হয়েছে। ১শ’ হেক্টর জমিতে স্থানীয় কালিজিরা ও বিভিন্ন ধান ও বাকি ৯০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে হাইব্রিড জাতের আমন ধান। এরা বলেন, সরকার হাউব্রিড জাতের ধান উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। এ বছর উপজেলার ৫০ কৃষককে ২ কেজি করে হাইবিড জাতের ধানের বীজ ও ৩০ কেজি করে ডিএপি ও এমএপি সার প্রণাদনা দিয়েছে। এছাড়া ৩৮০ জনকে দিয়েছে ৫ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের বীজ ও ২০ কেজি করে সার। এর বাইরেও আরো অর্ধশতাধিক কৃষক জেলা অফিস থেকে নিজ উদ্যোগে এ প্রণোদনা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে গুমাই বিল থেকে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৫ টন হিসেবে ১৮ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে তদারকি, সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ ও কীট দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতির ব্যবহার, কৃষকদের পরিশ্রম সর্বোপরি আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার আমন ফলন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হবে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া মেয়র শাহজান সিকদার বলেন, আমাদের উপজেলায় অবস্থিত গুমাইবিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিলের উৎপাদিত ফসল জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। কৃষকদের যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন