গত রবিবার দেশে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি হচ্ছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বমানের বিমানবন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ। এটি উদ্ভোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণাধীন দেশের প্রথম মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্ভোধন। এর উদ্ভোধন করেন সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে সমুদ্র পর্যন্ত রানওয়ের সম্প্রসারণ কাজের উদ্ভোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রিফুয়েলিং হাবে পরিণত হবে। পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে, সেগুলোর রিফুয়েলিংয়ের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে এবং রিফুয়েলিং করে চলে যেতে পারবে। অন্যদিকে, স্বপ্নের মেট্রোরেল ছয়টি বগিতে যাত্রী নিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী পর্যন্ত ঘুরে আবার ডিপোতে ফিরে যায়। ১০০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন এ মেট্রোরেল ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রায়াল দেয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে গতি বাড়ানো হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে স্বপ্নের এ দুটি যোগাযোগ ব্যবস্থার রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর একক উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
যোগাযোগ খাতে পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধী বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেয়া অন্যান্য প্রকল্প সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এর মধ্যে রাজধানীর যানজট কমাতে এবং দ্রুত যতায়াতের ব্যবস্থার জন্য নির্মিতব্য মেট্রোরেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের দেশে এ ধরনের বিদ্যুচ্চালিত মেট্রোরেল এটিই প্রথম। এ অভিজ্ঞতাও আমাদের নেই। ফলে এটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের মানুষের জন্য ‘অভূতপূর্ব’ হয়ে উঠেছে। এটি পুরোপুরি চালু হলে উত্তরা ও মতিঝিল উভয় দিক থেকে ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। এতে যানজট এড়িয়ে মানুষের কর্মঘন্টা যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি কাজের গতি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, আগামী জুনে পদ্মাসেতু চালু এবং এরপর বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দর চালু হলে এটি হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দরের মতো বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজার পরিণত হবে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে। বিমান বন্দরটির ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর ঝিনুক আকৃতির টার্মিনাল অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে। বিভিন্ন দেশের পর্যটক সরাসরি এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। এ কথাও বলা প্রয়োজন, পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, কক্সবাজার বিমানবন্দরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় পৌঁছতে যে ধরনের মসৃণ সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আবশ্যক তার চিত্রটি আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্বে আধুনিক, নিরাপদ ও আরামদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে ট্রেন এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয়। উন্নত বিশ্ব ট্রেনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে ট্রেন এখন যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এ তুলনায় আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশাও লাঘব করা যাচ্ছে না। চার লেন, আট লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেয়া হলেও তার সুফল মিলছে না। অনেক সড়ক-মহাসড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেয়া প্রকল্পগুলো থেকে মানুষের সুবিধা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেসব আধুনিক প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলো চালু হওয়ার পর সুফল পেতে হলে সড়ক ও রেল পথ মসৃণ ও আধুনিক করা ছাড়া বিকল্প নেই।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভাগ্যবান যে, তাঁর মন্ত্রীত্বকালে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকল্পের সাথে যুক্ত হতে পেরেছেন এবং এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করি, সরকারের অগ্রাধিকারমূলক অন্যান্য যেসব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে তিনি সচেষ্ট হবেন। একইসঙ্গে মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর এগুলো ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন ও শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। মেট্রোরেলে আরোহন ও এর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সাধারণ মানুষের নেই। তাই এসব অতি মূল্যবান পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে মানুষের জানা ও অনুধাবন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন