দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেটি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পরবর্তী থেকে জোয়ারের প্রভাবে টেকনাফের সেন্টমার্টিনের একমাত্র পর্যটক জেটিটি ভেঙে গেছে। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে দৈনিক ৫ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই জেটি দিয়ে জাহাজে ওঠানামা করে।
জানা যায়, প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানির উত্তাল ঢেউ একের পর একে জেটিতে আঘাত করতে থাকে। ফলে জেটির পন্টুনে ছোট-বড় ফাটল দেখা গিয়েছে। এরপর উত্তাল সাগরের ঢেউ আঘাত হানার পর জেটির অধিকাংশ অংশ, রেলিং ও সিঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে কোন সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরাবরের মতো কিছু পর্যটন ব্যবসায়ীরা সেন্টমার্টিন নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠে কিন্তু জেটি সংস্কারের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে একদিকে করোনা মহামারীতে দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাছাড়া দ্বীপে ব্যবসা সময়কালীন বলতে মূলত চারমাসকেই বুঝানো হয়। প্রতিবছরই অক্টোবর থেকেই পর্যটকের দ্বীপে আগমন ঘটে। এই জেটির উপর নির্ভর করে দ্বীপের প্রায় দশ হাজার মানুষের জীবন, কক্সবাজারের ১৫০টিরও উর্ধ্বে ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান, ঢাকা-টেকনাফ ট্রান্সপোর্টের কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, স্পীড বোট, ট্রলার, ফিশিং, দিন মজুর, রিকশা ভ্যানসহ শত শত ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। এ প্রবালদ্বীপের জেটিতে নোঙর করে শত শত ফিশিং বোট, পণ্যবোঝাই ট্রলার, যাত্রীবাহী নৌকা ও পর্যটকবাহী নৌযান এবং ছোট-বড় অনেক জাহাজ। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে দিবারাত্রি সেন্টমার্টিন জেটিতে নোঙর করে শত শত নৌযান। হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় এই জেটি ঘাট। এই জেটি ঘাট থেকে বছরে কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় করে সরকার।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা ও দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে ২০০২-০৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত¡াবধানে এই জেটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈঘর্য ৩০০ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির পার্কিং পয়েন্ট সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দুটি গাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তখন থেকেই জেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। প্রতিবছর জেলা পরিষদ এই জেটি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কোনো ধরনের মেরামত কাজে হাত দেয়নি। তিনি আরো বলেন, দ্বীপের মানুষের কষ্টের কথা ভেবে জেটি সংস্কার অথবা পুননির্মাণের জন্য ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশাকরি পর্যটক ও দ্বীপবাসীদের কথা চিন্তা করে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, জেটিটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছিলো।
ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে একদম ভেঙে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত বাজেট পাশ হয়ে কাজ করতে পারব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন