শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোনো পরীক্ষা দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণিতে তিনটি পাবলিক পরীক্ষা একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাগ নির্ধারণ বাতিল হবে প্রাথমিক সমাপনী-ইবতেদায়ী সমাপনী ও জেএসসি-জ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। যার সূচনা হতে যাচ্ছে আগামী বছর থেকেই। প্রস্তাবিত নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোন ধরণের পরীক্ষা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকলকেই বাধ্যতামূলক অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়াশুনা করতে হবে। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য এসব বিভাগ নির্ধারণ হবে এসএসসি-দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। দশম শ্রেণির আগে আর কোন পাবলিক পরীক্ষায় বসতে হবে না শিক্ষার্থীদের। দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তিন বছরে তিনটি পাবলিক পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে কেবল দশম শ্রেণির সিলেবাসেই অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি-দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা। এছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে এইচএসসি-আলিম ও সমমানের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম আগামী বছর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে তা সবার জন্য বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালে গিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখা অনুমোদন দেয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সচিবালয়ে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে। যার অর্থ, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। আর নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্যের মতো বিভাগ থাকবে না।

তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেওয়া হবে। অন্য শ্রেণিতে হবে সমাপনী পরীক্ষা, সমাপনীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সঙ্গে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। শিখন সময় কতটা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নেও গুরুত্ব দিয়েছি।

পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকছে কি না- জানতে চাইলে দীপু মনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, প্রাথমিকে শেষে একটি সনদ পেল, ক্লাস এইট শেষে একটি সনদ পেল। তার মানে না যে প্রত্যেক ক্ষেত্রে সনদ দিতে হবে। আমি যদি ক্লাস শেষ করি সেখানেও তো সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে। সনদের জন্য শিক্ষা নয়, পারদর্শিতা নিশ্চিত করতে চাই।

তিনি বলেন, অষ্টম ও প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না এবং প্রতিটিতে সমাপনী পরীক্ষা হবে। সনদ দেওয়ার জন্য পাবলিক পরীক্ষার দরকার নেই। পিইসি এখনও ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি পাবলিক পরীক্ষা, বছর শেষে প্রতিক্লাসে মূল্যায়ন হবে। দশম, একাদশ ও দ্বাদশে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছি, এইচএসসির পরীক্ষার রেজাল্ট হবে একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই রূপরেখা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক আলাদা আলাদা ছিল। একজন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিকে ঢুকে মাধ্যমিকে যাচ্ছে। এ জন্য এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়া যেন খুব মসৃণ হয়, মাঝে যেন ছেদ না পড়ে, অন্য স্তরে গিয়ে যেন খাপ খাওয়াতে কোনো সমস্যা না হয়, সেটি আমরা দেখার চেষ্টা করেছি।

পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। গভীর শেখনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখস্ত নির্ভরতার বিষয়টি যেন না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাখুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাখূলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটা যেন না হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

যেভাবে হবে মূল্যায়ন: শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ক্লাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে কয়েকটি বিষয়ে শিখনকালে অর্ধেক মূল্যায়ন হবে এবং বাকি অর্ধেক সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ ভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০ বিষয়: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্রমতে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০টি বই পড়ানো হবে, সেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Abdul Hafiz ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
দেরীতে হলেও এই পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার তারজন্য মাননীয়া মন্ত্রী দীপুমনি কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Md Kashem ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
এখনই বন্ধ করা উচিত ।ছাএদের কোনো প্রস্তুতি নেই ।কোমল বাচ্চাদের কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না।অবিলম্বে সিলেবাস দিন বার্ষিক পরীক্ষার ।
Total Reply(0)
Islam Mohammad NL ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
এই মুহূর্তে পি এস সি পরীক্ষা বন্ধ করে দিন।
Total Reply(0)
Sadik Muhammed ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
খুবই ভালো উদ্যোগ। জাতি এবার কোচিং বাণিজ্য, এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট, গাইড বাণিজ্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে। ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না এ প্লাসের জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে শিশুরা বেড়ে উঠবে চাপমুক্ত, অনন্দমুখর ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশে। শিক্ষকরা পরীক্ষায় পাশ করানোর চিন্তা বাদ দিয়ে সত্যিকার শিখন শেখানোর কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। অভিভাভাকরাও প্রাইভেট, কোচিং, গাইড ইত্যাদি বাবদ অতিরিক্ত খরচ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন বলে মনে করি।
Total Reply(0)
Abdul Kaium ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
গুড সিদ্ধান্ত, দেরীতে হলে বোধের উদয় হয়েছে.
Total Reply(0)
Abdul Kaium ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
গুড সিদ্ধান্ত, দেরীতে হলে বোধের উদয় হয়েছে.
Total Reply(0)
Jannat Kabir Munni ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
এবছর থেকে বাতিল করা দরকার ছিল
Total Reply(0)
Alamin Ecs ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
খুব ভালো লাগলো, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শুভকামনা রইলো।
Total Reply(0)
Md Mohiuddin Al Faruk ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
শিক্ষা ব্যবস্থায় আসছে ব্যপক পরিবর্তন, থাকছে না লেখাপড়া ।
Total Reply(0)
Md. Yousuf ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৩১ এএম says : 0
10 টি বিষয়ের পাশাপাশি বাধ্যতা মূলক কারিগরি শিক্ষাটা রাখা যায় কিনা চিন্তা করার দরকার।
Total Reply(0)
Didarul Alam Rezwan ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:৫৭ এএম says : 0
পঞ্চম শ্রেনী থেকে জরুরী কারিগরী শিক্ষা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন