বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে দেশকে। কিছু বিষয়ে সত্যিই পরিবর্তন আনার সময় এসেছে, যেগুলো দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে বলে আমদের বিশ্বাস। তা না হলে যেখানে খুব অল্প সময়ে যে সফলতা অর্জিত হওয়ার কথা, সেটা বিলম্বিত হবে বছরের পর বছর। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সেসবরের আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও আমাদের দেশে এখনো সেই মান্ধাতার আমলের নিয়মই বহাল আছে। সামান্য কিছু বিষয় নিয়ে আজ আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমেই নজর দিতে চাই দেশের গবেষণা খাতে। গবেষণার জন্য দেশের সরকারি বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। যেখানে আমাদের পাশের দেশগুলো হরহামেশায় আমদেরকে টপকে উপরে উঠে যাচ্ছে, সেখানে আমরা তাদের সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছি। এর পিছনে বেশ কিছু কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারের গবেষণা খাতে বরাদ্দের সীমাবদ্ধতার সাথে গবেষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব। এ জন্য গবেষণা খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি লক্ষ করা যায় না। অথচ এই গবেষণা সংশ্লিষ্ট কাজে বেশি সময় দেন দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা। নামীদামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের সব থেকে টপ র্যাঙ্কের ছাত্রছাত্রীরাই যোগ দেন গবেষণা সংশ্লিষ্ট কাজে। হতে পারে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নতুবা কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক হিসেবে। কিন্তু তাদের মেধার ঠিকমত আউটপুট পাওয়া যায় না শুধুমাত্র আমাদের দেশের কিছু পুরানো ধরাবাধা নিয়মের কারণে। গবেষকদের গবেষণার পরিবেশ এমন হওয়াটা বাঞ্ছনীয় যেখানে একজন গবেষক গবেষণার ভিতর আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন। চাওয়া মাত্র গবেষণা সংশ্লিষ্ট কাজের সরঞ্জামাদি তার হাতের কাছে পেতে পারেন। তবেই একজন গবেষক সেটার ভিতর তার উদ্ভাবনী আনন্দ খুঁজে পাবেন এবং সেইসাথে দেশও গবেষণায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ত্বরিৎ গতিতে এগিয়ে চলবে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে একটু বলতে চাই। চীনে আসার পরে দেখেছি, ল্যাবে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা টিউটররা ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে থাকেন। হরহামেশাই তারা খুবই দামি কেমিক্যাল দেদারছে নষ্ট করে যাচ্ছে। চীনারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম পরিশ্রমী জাতি এবং ব্যর্থতা থেকে বারবার চেষ্টা করেই তবে সফলতা আসে, এটা এরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আর সেজন্যই পরীক্ষাগারে একের পর এক পরীক্ষা করতেই থাকে। যার থেকে সফলতা বা নতুন কিছুর উদ্ভাবন খুবই অল্প দিনের ভিতর তাদের কাছে ধরা দেয়। আমার টিউটর আমাকে বলে রেখেছেন, গবেষণা বিষয়ক কী লাগবে সেটা তাৎক্ষণিক তাকে জানানোর জন্য। আমি বলা মাত্রই উনি সেটার অর্ডার করেন। এক থেকে দুইদিনের ভিতরেই সেগুলো হাতে পেয়ে যাই। এটা শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে নয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব উন্নত দেশের চিত্র। টিউটরকে বলা মাত্রই ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল, বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে পেয়ে যাচ্ছে। আমি মাঝমধ্যে কেমিক্যাল ব্যবহারে কিছুটা কার্পণ্য করি। কিন্তু আমার টিউটর বলেন ‘কার্পণ্যতার কিছুই নেই, তোমার যতটা লাগবে ততটাই ব্যবহার করবে। শেষ হওয়ার আগে আমাকে বললেই হবে।’ শিক্ষকদের একটাই কথা, সাফল্য আনতে গেলে ল্যাব ওয়ার্কের বিকল্প নেই আর সেখানে কেমিক্যাল নষ্ট হবেই। এগুলো দেখে মুহূর্তেই মনে পড়ে, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ সুবিধা বা সরকারের বরাদ্দের কথা। যেখানে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে বসে থাকতে হয় বহুদিন আবার একটা কেমিক্যাল অর্ডার করতে গেলেও আছে অনেক বেশি ঝক্কি ঝামেলা। ভালো কিছু উদ্ভাবনের জন্য ল্যাব ওয়ার্কের কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীতে যত কিছু আবিষ্কার হয়েছে তার বেশিরভাগই আগে তাত্ত্বিক আবিষ্কার তার পর তার বাস্তবিক অর্থাৎ প্রায়োগিক দিকে বিবেচনায় ল্যাব ওয়ার্ক প্রয়োজন। যেটা উন্নত রাষ্ট্রগুলো বুঝে তাদের গবেষণায় বরাদ্দ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে।
এরপর আসি আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিমার্জনের বিষয়টা নিয়ে বহু আগেই বিশেষজ্ঞদের ভাববার বিষয় ছিল বলে মনে হয়। কেননা আমাদের শিক্ষাব্যবাস্থায় বহু আগে থেকেই প্রচলিত আছে বেশ কিছু সনাতনী পদ্ধতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সবার সামনে হাজির হয়, সেটি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করানোর ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দেওয়া। আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যে সময়ে কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস শেখানো হয়, ঠিক একই সময়ে চীন, ইউরোপ, আমেরিকার শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কম্পিটারের প্রোগ্রামিং। এর পরের বিষয়ে নজর দিলে দেখা যায়, দেশের খুব নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ভালো বিষয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা চাকরির আশায় আবারও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সিলেবাস মুখস্থ করতে শুরু করে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কর্মক্ষেত্রের সাথে মিল না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা এগুলো করে। শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্বের দীর্ঘ সময়ে অর্জিত সবথেকে প্রায়োগিক যে জ্ঞান আহরণ সেটাকে কোনভাবেই প্রাধান্য দেওয়ার রীতি আমাদের দেশে নেই। এর ফলে কর্মক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ নেই। যেটা আমাদের দেশের খুবই বাজে একটা অনুশীলন বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ, উন্নত দেশগুলোতে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সময়ে নিজ নিজ কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই সমস্যা শুরুর প্রধান কারণ দেশে কর্মমুখী শিক্ষার তেমন কোনো বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী বা মেডিকেল ডিগ্রী নিয়েও অনেক সময় তার পেশাগত দায়িত্ব বাদ দিয়ে নেমে পড়েছেন অন্য সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে চাকরির প্রতিযোগিতায়। অথচ, ওইসব ছাত্রছাত্রীর পেছনে ডিগ্রী অর্জনের জন্য সরকার ব্যয় করেছে বহু অর্থ। বাস্তবিক অর্থে এসবের প্রয়োগ না থাকাতে দেশে যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলীর অভাব পূরণ হচ্ছে না, সেই সাথে সরকারের সৃষ্টিশীল কাজেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। একজন ছাত্র-ছাত্রীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নেওয়ার পরে যেমন হৈমন্তী গল্পের গৌরিসেন কে ছিলেন না জানলেও তার কর্মক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না, ঠিক তেমনই একজন ডাক্তারের হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর নাম কি সেটা না জানলেও তার চিকিৎসা বিদ্যায় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু আমাদের দেশে সেই মান্ধাতার আমল থেকেই প্রচলিত নিয়ম এখনো বহাল আছে। ফলে দেশ এগুতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে দেশের টেকসই উন্নয়ন কিংবা উত্তম রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণ খুবই চ্যালেঞ্জিং।
চীনের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, শিক্ষার সাথে কর্মক্ষেত্রের অনেক বেশি মিল। তাই একজন ছাত্র-ছাত্রী ছাত্রাবস্থায় থেকেই তার লক্ষ্য ঠিক করে ফেলে শিক্ষা জীবন শেষ করে সে কোথায় তার কর্মজীবন শুরু করবে। আমার এখানে বেশ কিছু পরিচিত ছাত্র-ছাত্রী আছে, যাদের স্নাতকোত্তর শেষ হবে আগামী জুলাই মাসে। কিন্তু এখন থেকে প্রায় দুই মাস আগেই তারা তাদের কর্মক্ষেত্রের স্থান চূড়ান্ত করে ফেলেছে অর্থাৎ চাকরি পেয়ে গেছে। প্রাইভেট সেক্টরগুলোতেও এখানে ভালোমানের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় এরা সরকারি বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কোনটিতে চাকরি করবে সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। চেষ্টা করে নিজেদের শিক্ষা জীবনের অর্জিত জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে বাস্তবিক প্রয়োগ করার। এছাড়াও চীনা প্রশাসন রাষ্ট্রীয় খরচে প্রত্যেক বিভাগে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিদেশে টিমভিত্তিক পড়াশোনা কিংবা প্রশিক্ষণ নিতে প্রকৃত মেধাবী এবং কর্মঠ জনবল পাঠায়। পরে তারা দক্ষ হয়ে এবং অনেক বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নিজ দেশে ফিরে উপযুক্ত ক্ষেত্রে জনবলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে টিমকে আরও দক্ষ করে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের দেশেরও উচিত ঢালাওভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণে না পাঠিয়ে তরুণ মেধাবীদের পাঠিয়ে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া, যাতে করে তারা সেখান থেকে সর্বোচ্চটা নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে।
আরেকটি বিষয়ে না বললেই নয়। সেটি দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনের ব্যর্থতা। দুর্নীতি প্রতিরোধের সরকার মরিয়া হয়ে থাকলেও ওই সেক্টরে কোনো উন্নতি হইনি এই একটিই কারণে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুর্নীতিবাজরা রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় বা অন্য কোনো অদৃশ্য শক্তির জোরে এ অপকর্ম দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। এটা দুর্নীতি বা অপরাধ প্রবণতাকে আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে।
প্রশাসনের উচিত, যেকোন অপরাধী তিনি যত বড় ক্ষমতাধর হোক না কেন এবং তার আপরাধ যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন নিরপেক্ষভাবে তার অপরাধের বিচার করে তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত সাজার ব্যবস্থা করা। তাহলে অপরাধ প্রবণতা যে অতিদ্রুত কমে যাবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনো অপরাধী যদি চোখের সামনে অন্যান্য অপরাধীদের দ্রুত সাজা পাওয়ার বিষয়টা দেখে তাহলে নিশ্চিত সে অপরাধ কর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে একটু হলেও সোচ্চার হবে।এক্ষেত্রে চীনের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, এখানে প্রকৃত অপরাধীকে যত দ্রুত পারা যায় আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এখানকার পুলিশ বা প্রশাসনের কখনো সশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা যায় না। কেননা, সবখানে এদের ভিডিও ফুটেজ কাভার করার ব্যবস্থা আছে। যেটা গ্রাম থেকে শুরু করে নদী, পাহাড়, অরণ্যে সবখানেই সার্বক্ষণিক সবার চলাচল পর্যবেক্ষণ করতে পারে। চীন বিশ্বের সর্বাধিক জনগণের এত বড় দেশ হয়েও যদি পুরো দেশের সকল জনসাধারণের সার্বিক চলাফেরা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে পারে তাহলে আমাদের দেশের শুধুমাত্র বিভাগীয় শহরগুলোর পুরোটাই ক্যামেরার আওতায় আনতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না। সমস্ত বিভাগীয় শহরের প্রতিটি জায়গা সিসি টিভির আওতায় আনা গেলে দেশের চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতকারীদের খুন সিংহভাগ কমে যাবে বলে আশা করা যায়। সেই সাথে একজন পথচারী ও নির্ভয়ে পথ চলার সাহস পাবে। কমে যাবে মহিলাদের শ্লিলতাহানি, জনগণের অহেতুক হয়রানি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে, দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আমাদের দেশের কিছু কিছু স্থানে লাগানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব ক্যামেরার ফুটেজগুলো মাঝে মধ্যে গায়েব হয়ে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। এর ফলে এসব ক্যামেরা লাগানোর কোনো ফলাফল কর্তৃপক্ষ দেখতে পায় না। শুধুমাত্র কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই আজ আমাদের এই বেহাল দশা। কিন্তু যদি এগুলোর যথাপযুক্ত তত্ত্বাবধায়ন করা যেত তাহলে নিশ্চয়ই পুরো দেশ সেটার সুফল পেত। সরকারের উচিত, প্রশাসনের কোনো বিশেষ বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়ে কঠোরভাবে ভিডিও ফুটেজগুলো সংরক্ষণ করা বা সেখান থেকে অপরাধীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা।
সবশেষে আরও একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। সম্প্রতি খুব কাছ থেকে দেখলাম, চীনের প্রেসিডেন্ট ‘শি জিনপিং’কে। বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত তিনি ফুজিয়ান প্রদেশের শীর্ষ একাধিক রাজনৈতিক ও সরকারি পদে নিযুক্ত ছিলেন। আর সেজন্যই মাঝেমধ্যে তিনি ফুজিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফুজো শহরে ভ্রমণে আসেন। আমাদের খুব কাছেই একটি স্থানে ওনার ভ্রমণের খবর শুনে আমরা সেদিন পৌঁছে গিয়েছিলাম ওনাকে দেখার জন্য। খুব কাছ থেকে দেখলাম, বিশ্বের সর্বাধিক জনগণের শীর্ষ নেতাকে। যেখানে ছিল না প্রশাসনের কোনো বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। ছিল না কোনো সশস্ত্র বাহিনীর মহড়া। দিনমজুর, সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে ভিনদেশি বহু জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত একজন নেতা হাত নেড়ে সবাইকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কোনো রকম সশস্ত্র বাহিনী ছাড়া জনসাধারণের সাথে সাধারণ মানুষের বেশে এরূপ একজন নেতার ঘুরে বেড়ানো আমাদের দেশে অসম্ভব ব্যাপার। কেননা, আমাদের সরকার প্রধানেরা নিজেরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। পারেননি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, তাই নিজেরা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। আর এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন, সেইসাথে জনগণও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। আইনের শাসন, যথোপযুক্ত প্রয়োগ, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ছাড়া কখনো একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এগুলোর সবটায় আমাদের বেশ ঘাটতি রয়েছে। আমাদের আইন এবং উন্নত দেশের আইনগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, উন্নত দেশের জনগণ আইন মানতে বাধ্য, কেননা সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে আইনের প্রয়োগ হয়। সেখানে আইন অমান্য করে কেউই পার পায় না। মুহূর্তের মধ্যেই অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হয়। আর আমাদের মধ্যে রয়েছে বিলম্বিত করার অভ্যাস এবং আইনের অপপ্রয়োগসহ নানা ধরনের স্বজনপ্রীতি।
বিশ্বে এখন প্রযুক্তির বিপ্লব চলছে। একমাত্র প্রযুক্তিই পারে মানুষের জীবনকে সাচ্ছন্দে ভরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ব্যক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার উপযোগী করে মানুষের হাতের মুঠোয় আনতে গবেষকদের ভূমিকা অপরিসীম। আর উচ্চমানের গবেষক তৈরি করতে হলে দেশের প্রচলিত কিছু সনাতন নিয়ম পরিবর্তন খুবই জরুরি, যেখানে একজন গবেষক নির্দ্বিধায় প্রাধান্য দিতে পারবে কর্মমুখী শিক্ষার যথাযথ প্রয়োগ। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা জীবনে অর্জিত বিভিন্ন ডিগ্রীর যথাযথ জ্ঞানের মাধ্যমে বাস্তবিক প্রয়োগই শুধুমাত্র বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে নিজেদের কুক্ষিগত করে দেশকে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। সেইসাথে প্রতিটি সেক্টরে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সুশাসন প্রতিষ্ঠার ভূমিকাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
ajoymondal325@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন