রাজধানীতে আগে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দেখা যেত, হতো বোমাবাজি। দুই কোটি জনগণের বসবাসের নগরী রাজধানীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)।
ডিএমপি বলছে, কোনো ধরনের গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, ঝনাঝনানি বরদাস্ত করা হবে না। এসব ঘটনাকে দুর্বলভাবে দেখাও হচ্ছে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গত ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দুজনকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ডিএমপি।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা বরুড়ার আমড়াতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, মনিরুজ্জামান সুমন ও মো. ইমন। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, রাজধানীর খিলগাঁও থানার ত্রিমোহনী এলাকা থেকে ২টি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ভিকটিম সাইফুল ইসলাম, কচি, রিপন ও সুমন ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন। সাইফুল ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রিপন ও সুমন দলীয় পর্যায়ে পদ-পদবী না পাওয়ায় তাদের সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি হয়। এরপর তারা পৃথক গ্রুপ তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সুমন ও রিপন গ্রুপ একত্রিত হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
হাফিজ আক্তার বলেন, রিপন গ্রুপের সদস্য বাশার হত্যা মামলার ১ নম্বর অভিযুক্ত ছিলেন ভিকটিম সাইফুল। ওই মামলায় সাইফুল দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে সুমন গ্রুপ এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে থাকে।
সাইফুল জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর সুমন গ্রুপ ও রিপন গ্রুপ এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার হ্রাস পাওয়ার ভয়ে দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, গত ১৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে রাস্তায় পূর্ব পরিকল্পনার অনুযায়ী রিপন, কচি, সুমন ও ইমনসহ ১২ থেকে ১৩ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় সাইফুলকে রিপন ২ রাউন্ড ও সুমন ১ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের সাইফুলের স্ত্রী। এর মধ্যে মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে কচি, রাসেল তালুকদার ওরফে চাপাতি রাসেল, উজ্জ্বল তালুকদার ও আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক রিপনসহ অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ কী হতে পারে?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ডিএমপির পরিবেশ এখন শান্ত। যদিও আগে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দেখা যেতো, হতো বোমাবাজি। গত চার মাস মাসে রাজধানীতে যেখানেই অস্ত্রের মহড়া, বোমাবাজি হয়েছে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র-গুলি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২ কোটি জনগণের বসবাসের নগরী রাজধানীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো ধরনের গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, ঝনাঝনানি বরদাস্ত করা হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন