আফতাব চৌধুরী
বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মাথায় পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছিলেন। মিশর ও তিউনিসিয়ায় গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জনতা ফুঁসে উঠেছিল গণতন্ত্রের দাবিতে। যুক্তরাষ্ট্রে এখনো পর্যন্ত এর প্রতি এক ধরনের নৈতিক সমর্থন দিয়ে এলেও কার্যক্ষেত্রে তার ভূমিকা কী হবে, সেটা পরিষ্কার নয়। মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত গণতন্ত্র চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি তথা পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। কাজটি রাতারাতি সম্ভব নয়। সহজও নয়। কারণ এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত, লবি-গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়ও রয়েছে। সে সবের ওপরই নির্ভর করছে এক্ষেত্রে কতটা পরিবর্তন আসবে বা আসতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় স্ববিরোধিতা হল যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে গণতন্ত্রের ধারক-বাহক হিসেবে তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার সঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের শর্ত বেঁধে দিলেও নিজস্ব অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে অনেক দেশে একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যুগের পর যুগ এভাবেই ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা হয়েছিল স্বৈরাচারী একনায়কদের। সেসব দেশে এখন গণতন্ত্র এসেছে। লক্ষ্য করার বিষয়, নির্র্বাচনের মাধ্যমে অধিকাংশ দেশেই ক্ষমতাসীন হয়েছেন মার্কিন বিরোধীরা বা বামপন্থীরা। মধ্যপ্রাচ্যে এখনও আসেনি সে ধরনের পরিবর্তন। এসব দেশেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না-হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী মার্কিন তথা পশ্চিমা নীতি।
অতীতে বিভিন্ন দেশে এক নায়কদের সমর্থন দানের মার্কিন নীতির পেছনে কাজ করেছে সমাজতন্ত্র প্রতিরোধের প্রবণতা। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ও বিশ্বের অপর পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের সে প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই প্রতিবেশী লাতিন আমেরিকায় গণতান্ত্রিক পরিবর্তন মার্কিনীরা মেনে নিয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে এখনো মার্কিন স্বার্থ ফুরায়নি। সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য আরব দেশের জ্বালানি সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এসব দেশে বন্ধুভাবাপন্ন সরকার ক্ষমতায় না থাকলে এ স্বার্থ ক্ষুণœ হতে পারে। গণতন্ত্র এলে সে সম্ভাবনা এভাবে থাকবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থ আরো গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হল ইসরাইলকে যে কোনভাবে হুমকিমুক্ত রাখা। এ অঞ্চলে বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে। এ অবৈধ রাষ্ট্রের সৃষ্টিকর্তা আমেরিকা, বৃটেনসহ পশ্চিমা এবং ইউরোপীয় দেশসমূহ। এমন নীতি কখনো ভিত্তি পেত না যুক্তরাষ্ট্র প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসরাইলকে সমর্থন না দিলে। ইসরাইল শুধু ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করেনি, বল প্রয়োগের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি দেশের অংশবিশেষ। আরব দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলে যা কোনভাবে সম্ভব হত না। এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তৈরি হতে পারে সে সুযোগ। ইসরাইলের সবচেয়ে বড়ই মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তা হতে দিতে কতটা রাজি হবে, সে সন্দেহ প্রবল। এক সময় ইরাক হুমকি হয়ে উঠেছিল ইসরাইলের জন্য যা আমেরিকা ও বৃটেনের ভ্রান্ত ধারণা বলেই শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে আমেরিকা সৌদি আরবকে বুঝিয়েছে ইরাক, কুয়েতের পর আরও অগ্রসর হয়ে সৌদি আরব আক্রমণ করতে পারে। এ ভয় দেখিয়ে মার্কিন সৈন্য সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ছোট ছোট দেশে পাটিয়েছে। আর এসবের ব্যর্থভার আরব দেশগুলোকে বহন করতে গিয়ে অত্যন্ত সচ্ছল এসব দেশ অর্থনৈতিক টানাপোড়নে হিমসিম খাচ্ছে। আবার এ মার্কিনরাই আরবদের মধ্যে আইএস, আল কায়দা ইত্যাদি নাম দিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে রেখেছে। এতে ঝরছে আরবদের রক্ত, আরবদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং লুটপাট করছে আরবদের প্রধান সম্পদ তেল ও অর্থ। পর্যবেক্ষকদের মতে, ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা ও প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের মূল কারণ ছিল সেটি।
মার্কিনিরা ভেবেছিল ইরাকের উত্থান হয়ত ইসরাইলের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তাই তারা অতি চালাকি করে তাদের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে ইরাককে দিয়ে কুয়েত দখল করিয়ে নেয়। আর এ অজুহাতে প্রতিবেশী আরব দেশসমূহের রাষ্ট্র প্রধানদের ম্যানেজ করে আমেরিকা ও বৃটেন ইরাক আক্রমণ করে। তাদের এ আক্রমণ সে দেশের জনপ্রিয় রাষ্ট্র প্রধান সাদ্দাম শুধু গদিচ্যুত হননি তাকে উৎখাত করে হত্যা করা হয় লোক দেখানো বিচারের মাধ্যমে। এখানেই শেষ নয়, আমেরিকার ইরাক আক্রমণের ফলে লক্ষ লক্ষ নিরীহ ইরাকির রক্তে রঞ্জিত হয় সে দেশের মাটি, ধ্বংস হয় প্রাচীন সভ্যতা আর লুটপাট হয় হাজার হাজার কোটি ডলারের সম্পদ। ইরাকে এখনও রক্ত ঝরছে আর মার্কিনিরা তা শুধু উপভোগই করছে।
মার্কিনিরা ধুরন্দর। তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে একদিকে অস্ত্র বিক্রিসহ বিভিন্ন উপায় লুটিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি ডলার অন্যদিকে এ অঞ্চলের বিভিন্ন মুসলিম দেশে গণতন্ত্রের নামে যুবসমাজকে উস্কে দিয়ে রাষ্ট্র প্রধানদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে শুধু উৎসাহই দিচ্ছে না আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের প্রতি তোয়াক্কা না করে সে সব দেশের বিরোধীরা ঢালাওভাবে সমর্থন, অর্থ ও যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। অথচ যে সব দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের বিরুদ্ধে তারা জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে সে সব রাষ্ট্রপ্রধানেরা কিন্তু আমেরিকার বন্ধুই ছিলেন।
লিবিয়া একটি সার্বভৌম স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। সে দেশের জনগণ গণতন্ত্রের নামে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। এটা স্বীকার করতে হবে যে, এ দ্বন্দ্ব তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। অন্য কারোর নাক গলানোর কথা নয়। যদি গলাতেই হয় তবে আছে ওআইসি, আছে জাতিসংঘ। কিন্তু নাক গলাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেন এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। শুধুমাত্র মুসলিম দেশ বলেই আমেরিকা আজ ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া পরে লিবিয়াতেও নাক গলাচ্ছে। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে শুধু নৈতিক সমর্থন আর যুদ্ধাস্ত্র যোগান দিয়েই তারা ক্ষান্ত নয়। লিবিয়া উপদ্বীপে পাঠিয়েছে বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ। বিবিসি, রয়টারসহ পশ্চিমা বিশ্বের খবরে প্রকাশ, গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার নামে সে দেশ দখল করার লক্ষ্যে আকাশ, স্থল ও জলপথে এক যোগে হামলা চালিয়েছে বার বার। এদিকে ফ্রান্স ও অন্যান্য মিত্র দেশ লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পশ্চিমা সামরিক অভিযান সমর্থন করছে না। তাদের মতে এতে রক্তক্ষয় হবে ভাল কোন ফল অর্জিত হবে না। আমেরিকাকে এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে চলা উচিত যাতে তারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সমালোচনা আর প্রতিবাদের মুখে না পড়ে। কিন্তু সে তাতে কান দিচ্ছে না।
পশ্চিমা বিশ্ব নিজ স্বার্থেই আরব ঐক্যকে কখনো সুনজরে দেখেনি। আরব নেতারা নিজ দেশে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার স্বার্থে আন্তরিকভাবে চালাননি সে প্রয়াস। তারা বরং অনুসরণ করছেন পশ্চিমা তোষণ নীতি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসের। আরব বিশ্বে নাসেরের মতো স্বাধীনচেতা রাষ্ট্রনায়ক আর আসেননি। তিনি আধুনিক আরব ইতিহাসে ও বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। আরব বিশ্ব ও আফ্রিকার সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এখনো তাকে আরব বিশ্বের মর্যাদা ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। মিশরে ৩০ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল, তখন নাসের প্রসঙ্গ এখানে অপ্রাসঙ্গিক নয় বলে মনে করা যেতে পারে।
মিশরের অর্থনীতিতে সুয়েজ খালের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার ১৯২২ সালে মিশরের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তাদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। ১৯৩৬ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন সুয়েজ খাল এলাকায় ১০ হাজার সৈন্য ও একটি বিমানবাহিনী রাখার অধিকার পায়। স্বভাবত মিশরের জনগণ বিষয়টিকে তাদের স্বাধীনতা-পরিপন্থী মনে করে ওই চুক্তি বাতিলের দাবি করে আসছিল। ১৯৫৪ সালে ক্ষমতায় এসে নাসের সুয়েজ খাল এলাকা থেকে পর্যায়ক্রমে সৈন্য প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন এবং ১৯৫৬ সালে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়। ওই বছরই তিনি সুয়েজ খাল জাতীয়করণের দুঃসাহসিক ঘোষণা দেন। এ ছিল পশ্চিমা স্বার্থের উপর প্রচ- আঘাত। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। জাতিসংঘে চালানো হয় এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নানামুখী তৎপরতা। কিন্তু সোভিয়েত ভেটোর কারণে ব্যর্থ হয় সব উদ্যোগ। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরাইলকে দিয়ে মিশরে হামলার চেষ্টা চালিয়ে নাসেরকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
‘আরব জাতীয়তাবাদ’ উজ্জীবিত করার মাধ্যমে আরব বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন নাসের। এ লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালে তিনি সিরিয়ার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে গঠন করেছিলেন ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক। ইরাক ও লিবিয়ার সঙ্গে এ ধরনের ফেডারেশন গঠনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এসব দেশে ক্ষমতার টানাপোড়েন ও মিশরে ইসরাইলি হামলার প্রভাবে ব্যর্থ হয় সে উদ্যোগ। ১৯৭০ সালে নাসেরের মৃত্যুর পর ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ছিলেন পুরোপুরি পাশ্চাত্যপন্থী। ফলে আর্থিক ও সামরিক ক্ষেত্রে মিশর আবার ঝুঁকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের প্রতি। সাদাত ১৯৮১ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর ক্ষমতায় আসা হোসনি মোবারক অনুসরণ করে আসছিলেন সে নীতি। পশ্চিমা সমর্থনে অনেকদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পেরেছেন তিনি। মিশরে মার্কিন আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের পরিমাণ এখন বছরে দেড়শ’ কোটি ডলারের মতো। আরো সুনির্দিষ্ট করে বলা যায়, ইসরাইলের পর সবচেয়ে বড়ো মার্কিন সাহায্যপুষ্ট দেশ মিশর। ১৯৭৯ সালে মার্কিন উদ্যোগে ইসরাইলের সঙ্গে ‘শান্তি চুক্তি’ (ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি) সম্পাদনের পুরষ্কার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মিশরকে সহায়তা করে আসছে। কারণ এর মাধ্যমে অনেকটা হুমকিমুক্ত হয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের জন্য সেই হুমকি আবার সৃষ্টি করুক, তা কখনো চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিয়ে ভয় যুক্তরাষ্ট্রের। দমনপীড়ন ও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও মিশরে তাদের জনপ্রিয়তা বিপুল। নিরপেক্ষ নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট। প্রেসিডেন্ট ওবামা মিশরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যত আন্তরিক হোন না কেন- মনে রাখতে হবে, মার্কিন প্রশাসনে ইহুদি লবি অত্যন্ত শক্তিশালী। দেশটির পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের প্রবল প্রভাব। মিশরসহ আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের দাবি তাই বর্তমান মার্কিন প্রশাসনকে ফেলে দিয়েছে অস্বস্তিতে। নৈতিকভাবে তারা একে সমর্থন করছে, কিন্তু বাস্তবে কী করবে বুঝে উঠতে পারছে চলে মনে হচ্ছে না।
সাধারণ বিচার-বুদ্ধি বলে, জনগণের রায়ে যে দল ক্ষমতায় আসুক কোনো উগ্রপন্থী দল ক্ষমতায় এলে তাকে সংযত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়, মেনে চলতে হয় আইন ও সংবিধান। এতে ওই দলের জনপ্রিয়তা বরং আরো বেড়ে যেতে পারে। এর উদাহরণ মিশরের কাছের দেশ আলজেরিয়া। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বা কার্যকর গণতন্ত্র-না থাকা জঙ্গিবাদ ভয়াবহ হয়ে ওঠার বড়ো কারণ বলে মনে করা হয়। মিশরসহ আরব দেশগুলোর গণআন্দোলন পশ্চিমা বিশ্বের জন্য ভাবনার কারণ হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পন্থা পশ্চিমা শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে পরিবর্তন অপরিহার্য। এর ওপর নির্ভর করছে ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহকে তাদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করার সুযোগ দেয়া উচিত। তাদের ব্যাপারে বাইরের কোন বৃহৎ শক্তির নাক গলানো ইন্ধন বা অস্ত্র সরবরাহ করা কোন মতেই উচিত নয়। বৃহৎ শক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নাক গলানো বন্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে। আর এভাবেই বিশ্বে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসবে, বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কাও এড়ানো সম্ভব হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন