উথান মন্ডল, নাজিরপুর (পিরোজপুর) থেকে
পিরোজপুরের নাজিরপুরে গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো প্রকার কাজ না করে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মোল্লার বিরুদ্ধে। দুই দফায় দেয়া বিশেষ বরাদ্দের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে দেউলবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১২ লাখ টাকার ৭টি প্রকল্প কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উপজেলার দেউলবাড়ী ইউনিয়নে টিআর, কাবিখা ও কাবিটার ৭টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৯ টন খাদ্যশস্য ও ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দেউলবাড়ী ইউনিয়নের ত্রিগ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য কাবিটার ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বাস্তবে সেখানে কোনো কাজ হয়নি। ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য অমল চৌধুরী, পংকজ মালী ও আব্দুল মালেক জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দের কথা তাদের জানা নেই। তবে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি সোহেল মোল্লা কাজ করিয়েছেন। আমি এব্যাপারে কিছু জানি না। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা সোহেল মোল্লা নিজেই অন্য দুটি প্রকল্পের চেয়ারম্যান। এর মধ্যে গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে খালের পাইলিংয়ের জন্য টিআরের আওতায় ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু জাফর বাহাদুর জানান, ভাঙনের কবল থেকে প্রতিষ্ঠান রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে পাইলিং দেয়া হয়েছে। পাইলিংয়ের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ পাইনি। অপর প্রকল্পটি হচ্ছে তুরুকখালী আসাদের দোকান থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত রাস্তা পুনঃসংস্কার। এ প্রকল্পে টিআরের আওতায় ৪ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এখানেও কোনো কাজ হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা। এছাড়া গাওখালী বেপারী বাড়ি হতে কালাম শেখের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃসংস্কারের জন্য টিআরের আওতায় ১৪ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এ প্রকল্পেও কোনো কাজ হয়নি। প্রকল্পের চেয়ারম্যান ওই ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সীমা হালদার বলেন, আমার সহপাঠি যুবলীগ নেতা সোহেল মোল্লা একটি বরাদ্দ এনে দেয়ার কথা বলে উপজেলা সদরে বসে আমার কাছে কয়েকটি স্বাক্ষর নেয়। বরাদ্দ হওয়া বা কাজ বাস্তবায়নের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি। অপর দুটি প্রকল্প হলো পদ্মডুবি মজিবর মিয়ার বাড়ি হতে হালদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য টিআরের আওতায় ১ টন খাদ্যশস্য এবং পদ্মডুবি আফজাল মিয়ার বাড়ি হতে চৌকিদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃসংস্কারের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প দুটির চেয়ারম্যান ওই যুবলীগ নেতার সহচর এআর রহিম। এ প্রকল্প দুটিতেও কোনো কাজ হয়নি। সার্বিক বিষয়ে কথা হলে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সোহেল মোল্লা বলেন, ভাই একটু ছাড় দেন। এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। আমি আপনার সাথে দেখা করব। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, প্রকল্পগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন