শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

নীলগাই’র ঘরে দুই নবজাতক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আশার আলো জ্বালিয়ে বাংলাদেশে বিলুপ্তির তালিকায় থাকা নীলগাই দম্পতির পরিবারে আরো দুইটি নবজাতক জন্ম নিয়েছে। গত ১ আগস্ট জন্ম নিলেও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ তা কাউকে জানায়নি। নতুন জন্ম নেয়া শাবকের নিরাপত্তা ও প্রকৃতিতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ থাকায় পার্ক কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান। আর নুতন জন্ম নেয়া শাবক দুটি থেকেই পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮০ বছর আগে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্তর তালিকা থাকা নীলগাইয়ের প্রকৃতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া বর্ডার এলাকার বাসিন্দারা একটি নীলগাই ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নেয়। পরে বিজিবি-৫৩ (মামুদপুর বিওপির) সদস্যরা ওই মাদী নীলগাইকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে হস্তান্তর করলে নীলগাইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়।
অপরদিকে, ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় অপর একটি নীলগাই আটক করে জবাই করার প্রস্তুতি নেয়া হয়। পরে তা জানতে পেরে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে। পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রাণিটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে পুরুষ নীলগাইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়।
পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মো. সারোয়ার হোসেন খান জানান, হেমন্তকাল থেকে শীতকালের শুরুর সময়ে পুরুষ নীলগাই ও মাদী নীলগাইয়ের সাথে মিলিত হয়। স্বভাবসিদ্ধভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরুষ নীলগাইগুলো একাধিক মাদী নীলগাইয়ের সাথে মিলিত হয়ে থাকে। গর্ভধারণ কাল গড় ২৪৩ দিন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে যমজ বাচ্চা প্রসব করে, ক্ষেত্র বিশেষে ১টি থেকে ৩টি বাচ্চাও প্রসব করে থাকে। জন্মের ৪০ মিনিটের মধ্যে দাঁড়াতে পারে। পুরুষ শাবক ৩ বছর এবং মাদী ২ বছরে প্রজননক্ষম হয়ে উঠলেও এদের গড় আয়ু ২১ বছর।
তিনি আরও জানান, পুরুষ নীলগাইয়ের বর্ণ গাঢ় ধুসর, অনেকটা কালচে রঙের। অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র পুরুষ নীলগাইয়ের দুটি কৌনিক, মসৃণ ও সামনের দিকে কিঞ্চিত বাকানো দুটি শিং আছে। পুরুষের উচ্চতা ৫২-৫৮ ইঞ্চি, শিং এর দৈর্ঘ্য ৮-১২ ইঞ্চি। মাদী নীলগাই এবং শাবকের রং লালচে বাদামী কিন্তু খুরের ওপরের লোম সাদা। ঠোঁট, থুতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নিচের তলদেশ সাদা। নীলগাই ছোট ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চড়ে বেড়াতে ভালবাসে। ঘন বন এড়িয়ে চলে। সচরাচর ৪ থেকে ১০ সদস্যের দল নিয়েই নীলগাই ঘুরে বেড়ায়। দলে কখনও ২০ বা তার বেশি সদস্যও থাকতে পারে।
নীলগাই সম্পর্কে তিনি আরও জানান, নীলগাই গাছে ঢাকা উঁচু-নিচু সমতলে বা তৃণভূমিতে যেমন স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে, তেমনি আবার শস্যক্ষেত্রে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করতে পটু। সকাল আর বিকেলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিনের বাকি সময়টা গাছের ছায়ায় বসে কাটায়। মহুয়া গাছের রসালো ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি ছাড়া এরা দীর্ঘসময় কাটিয়ে দেয়, এমনকি গরমের দিনেও এরা নিয়মিত পানি খায় না। আত্মরক্ষার প্রধান উপায় দৌড়ে পালানো। দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, এরা যখন পূর্ণবয়ষ্ক হয় তখন এদের দেহে কিছুটা নীল বর্ণ দেখা যায়। এজন্য তাদেরকে নীলগাই বলা হয়। গত ৮০ বছর আগে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এক সময় অবাধ বিচরণ ছিল নীলগাই’র। ১৯৪০ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে নীলগাই দেখা গিয়েছিল। বনাঞ্চল উজাড় হওয়া, বসবাসের পরিবেশ হারানো, খাদ্য সংকট ও শিকারীর অবাধ শিকারের কারণে পরিবেশে প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে কমতে এক সময় নীলগাইয়ের নাম উঠে বিলুপ্তর তালিকায়। প্রতিবেশি দেশ ভারত, পাকিস্তান নেপাল এবং যুক্তরাষ্ট্রে নীলগাই রয়েছে। পার্কে থাকা নীলগাই দুটি জুঁটি বাধার ১১ মাস ১১ দিন পর গত পহেলা আগস্ট দুটি বাচ্চা জন্ম দেয়। বর্তমানে সবাই সুস্থ আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন