শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

নির্মাণের ৬ মাসেই সড়কে ভাঙন

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর নদীর কূলে এলজিইডির ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার নির্মিত সড়ক নির্মানের ৬ মাসের মধ্যেই নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে হুমকীর মুখে চলে গিয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কের প্রায় ১০০ মিটারের অধিক এলাকার অর্ধেকাংশ নদীতে বিলীন হওয়াসহ ২টি স্থানে নদীর পাশ দিয়ে বড় গর্ত হয়ে রাস্তাটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পুকুরজানা বাজার ভায়া তেতুলবাড়িয়া খেয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি কচাবুনিয়া নদীর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (পটুয়াখালী-বরগুনা জেলা) আওতায় ২০১৭ -২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কাজ শুরু করেন।
রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করায় স্থানীয় জনসাধারণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারকে রাস্তার সাববেইজসহ ম্যাগাডাম রোলার দেয়ার পরেও তা নিম্নমানের হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারনের প্রতিরোধের মুখে তা ওঠিয়ে নতুন করে করতে বাধ্য হন। এদিকে ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার প্রকোপ শুরুর পরে বিভিন্ন সময় লকডাউন কার্যকর করায় জনসাধারনের চলাচল কম থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত বছরের শেষের দিকে যেনতেনভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ম্যানেজ করে কাজ শেষ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারন ৫.২০০ কিলোমিটার সড়কের নদীর কূল ঘিরে অংশের রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে পাইলিং-এর দাবি জানালেও তা স্থানীয় সরকার বিভাগ আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভাঙন কবলিত পাংগাশিয় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তেতুলবাড়িয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সেকন্দার বয়াতি গতমাসের শেষের দিকে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, ২ থেকে ৩ মাস আগ থেকে ভাঙন শুরু হয়, তখন আমরা পাইলিং শুরু করতে বলছিলাম, তারা তা করেন নাই, এখন ভাঙন বাড়ছে যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হয় ততই আমাদের সুবিধা, রাস্তার সাথে আমাদের বাড়ি, আমরা এখন হুমকির মধ্যে আছি।
এ দিকে এ প্রতিবেদক গত ১৯ সেপ্টম্বর বিকেলে স্থানীয় জনগনের কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রবল বর্ষার মধ্যে সরেজমিনে সড়কে গিয়ে দেখতে পান নদীর পাশ্ববর্তী বিধ্বস্থ অংশের পরিমান পূর্বের ৬০ মিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে কমপক্ষে ১০০ মিটারে পৌছে গিয়েছে। এ ছাড়াও ১৫ থেকে ২০ দিনের ব্যবধানে ঐ সড়কের অন্য দুটি অংশে নদীর পাশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে রাস্তার মধ্য গর্ত হয়ে সড়কটি বিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় অটোচালকরা কোনরকম সড়কের এক পাশের অংশে গর্ত ভরাট করে মাটি ফেলে চরম ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। তবে প্রবল বর্ষণ ও নদীর পানির চাপে এ কাজটি এক-দুই দিন স্থায়ী হতে পারে বলে তার জানান।
স্থানীয় অধিবাসী মো. মোজাম্মেল অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু করলে আমরা আপত্তি তুলি, তারা কাজ ফেলে চলে যায়, পরে আবার কাজ শুরু করে। সে সময়ও তার পুনরায় সেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করতে গেলে আমরা আপত্তি করি। নদীর পাশের রাস্তা নির্মাণের সময় আমরা দাবি জানিয়েছিলাম পাইলিং দিয়ে কাজ করেন, কিন্তু তারা আমাদের কথা গায়ে লাগানননি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এড. গাজী নজরুল জানান, কচাবুনিয়া নদীর তেতুলবাড়িয়া অংশের ভাঙন শুরুর পরে তিনি পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে দেখা করলে তিনি দুমকী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে তাৎক্ষণিক প্রাক্কলন তৈরির নির্দেশ দেন। কিন্তু দুমকী উপজেলা অফিস থেকে প্রাক্কলিত মূল্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় কাজটি শুরুতে বিলম্বিত হয়েছে।
দুমকী উপজেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান, এম খান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামের কাজটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ের বাইরে সময় বৃদ্ধি সাপেক্ষে শেষ হয়। নদীর পাশে ভাঙন কবলিত ৬০ মিটার রাস্তার জন্য ৩ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যায়ে পাইলিং করে মেরামতরে জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদরে চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে নদীর পাশ ঘিরে পানি উন্নয়ন বেড়িবাঁধের ওপর রাস্তার নির্মাণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা তার কোন সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি। তবে তিনি আজকের রাস্তার বিচ্ছিন্ন ৬০ মিটার থেকে বৃদ্ধি পাওয়াসহ অন্য দুটি অংশের গর্ত হয়ে রাস্তাটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পথের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন