বছরের পর বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে মসজিদ। আশপাশে গজিয়ে উঠেছে আগাছা ও ঝোপঝাড়। মসজিদে শ্যাওলা জমে আছে। দেখে মনে হবে এটি কোনো পরিত্যক্ত স্থাপনা। কিন্তু আসলে এটি মুসলমানদের এবাদতখানা আল্লাহর ঘর মসজিদ। এ মসজিদটি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ পর্যটন এলাকায় অবস্থিত।
২০১৩ সালে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি অর্থায়নে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর দুই বছর মসজিদটি ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর প্রায় ৬ বছর ধরে এই মসজিদে আজান হয় না, তালাবদ্ধ থাকায় মসজিদটি আশপাশের মুসল্লীদেরও কোনো কাজে আসছে না। শুধু আশাপাশের মুসল্লীরাই নয়, বাইরে থেকে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পারছেন না মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায়। মসজিদের আঙিনা থেকে হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, হকনগর রেস্টহাউজের পাশে প্রায় আট বছর আগে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে রেস্টহাউজের একজন কেয়ারটেকার টানা দুই বছর এই মসজিদে নিজ দায়িত্বে নামাজ পড়িয়েছেন। পরবর্তীতে ওই কেয়ারটেকার রেস্টহাউজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় পর সেই থেকে আজোবধি প্রায় ৬ বছরেও এই মসজিদে নিয়োগ দেয়া হয়নি ইমাম-মুয়াজ্জিন। অবহেলা ও যত্নের অভাবে তালাবদ্ধ মসজিদটি এখন বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
দশনার্থী মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী বলেন, এখানে ঘুরতে এসে মসজিদ তালাবদ্ধ দেখে হতাশ হয়েছি। আমার মনে হচ্ছে এটা কর্তৃপক্ষের অবহেলা। মসজিদে ইমাম ও মুয়াজ্জিন না থাকায় আজান ও নামাজ হচ্ছে না। দূরদূরান্তের দর্শনার্থী ও মুসল্লীরা নামাজ আদায় করতে পারছেনা। তাহলে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে এই মসজিদ নির্মাণের কোনো মানেই হয় না।
বাঁশতলা চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা এম এ মোতালিব ভূঁইয়া বলেন, মসজিদটি বছরের পর বছর ধরে তালাবদ্ধ। দেখার কেউ নেই! যত্নের অভাবে মসজিদের মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাবাজার ইউপি সদস্য ধন মিয়া বলেন, আগে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে একজন লোক দিয়ে এই মসজিদটি পরিচালনা করা হতো। এখন এখানে কোনো লোক নেই। আমরা বেশ কয়েক বার মসজিদটি চালু করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান জসিম আহমেদ চৌধুরী রানা বলেন, মসজিদ নির্মাণের পর তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলীর সহযোগিতায় আমরা স্থানীয় একজনকে রেস্টহাউজের কেয়ারটেকার কাম মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলাম। তখন উপজেলা পরিষদ থেকে এর ব্যয়ভার বহন করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রহিম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এটি বন্ধ করে দেন। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি একাধিক বার আলোচনা করেছি। কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুইজন গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে রেস্টহাউজের দেখাশোনা করা হচ্ছে, আর মসজিদটি তালাবদ্ধ অবস্থাতেই আছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে দুইজন লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সাথে আলাপ করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রহিম বলেন, বিষয়টি জানিনা, তবে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন