ফেনীর সোনাগাজীতে ছোট ফেনী নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, ভিটেজমি ও সড়ক। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সোনাগাজী উপজেলার ১নং চর মজলিজপুর ইউনিয়নের কুঠিরহাট বাজার সংলগ্ন কালিবাড়ির পাশ দিয়ে ছোট ফেনী নদী বয়ে যায়। ওই এলাকায় নদীটির বেশির ভাগ স্থানে বাকা এবং সঙ্কুচিত হওয়ায় নদীর পাড়ে মানুষের ভিটেজমি ও সড়কের তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ওই এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, মন্দির ও হাট-বাজার। গত বছর কালিবাড়ির পাশে নদীর তীরবর্তী ঘেঁষা এলজিইডির অধীনে থাকা আবুবক্কর সড়কটির প্রায় ৫০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়। ওই সড়কে ৫-৬ মাস গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। তখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে গাড়ি চালক ও যাত্রীসাধারনকে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিক পর্যায়ে ভাঙন রোধে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে সড়কটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি চলতি বছর সড়কটি আবার ভাঙতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই বছর আগে ভাঙনস্থানে বালি মাটি মিশ্রিত জিও ব্যাগ ফেলে কোনরকমে দায় সারেন। তখন তাদের নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। সরকারের লাখ লাখ টাকা জলে যাচ্ছে। তারা জানান, গত কয়েকবছর যাবত তাদের এলাকায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে সড়কের পাশে বিশাল গভীরতা সৃষ্টি হয়। তখন থেকে সড়কটি নিচের দিকে দেবে গিয়ে বারবার ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। তারা সরকারের প্রতি দাবি জানান সেখানে নদীর পাড়ের ভাঙন মেরামতে জরুরি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হোসেন বলেন, সকল কাজের আগে এখানে নদী শাসন করা দরকার। যে হারে নদীর পাড় ভাঙা শুরু হয়েছে একসময় পুরো এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ছোট ফেনী নদীর ভাঙনস্থান পরিদর্শনে আসেন ফেনী-৩ আসনের এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা নদীর পাড়ের ভাঙনস্থান ও রাস্তা মেরামতসহ নদীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। সড়ক মেরামতের বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মনির হোসেন জানান, সড়কটি নদী কেন্দ্রিক হওয়ায় প্রতিবছরই ভাঙছে। এ বছরও একই চিত্র দেখা যায়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আগে নদী শাসনের ওপর জোর দিতে হবে। সড়কটির ভাঙন স্থানে কালভার্ট নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আক্তার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে ছোট ফেনী নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে সড়কের ভাঙন মেরামত কাজ সম্পূর্ণ করেন। সে থেকে এখনো পর্যন্ত কোন বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু চলতি বছর নদীর পাড়ে বসবাসকারী ওই এলাকার মানুষজন সড়কের ভিতর দিয়ে পাইপ বসিয়ে নদীতে পানি যাওয়ার বিকল্প রাস্তা তৈরি করে। যার ফলে নদীর পাড়ে থাকা জিও ব্যাগ সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। সড়কের ২০ মিটার পাকা পিচসহ নিচের মাটি দেবে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষের নিজের ভুলের কারণে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বাকা নদী সোজাকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, দেড় বছর আগে নদীর অপরপ্রান্তে জাগা উঁচু চরের অংশ কাটার জন্য ওই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করেছিলেন। নদী খননের সুবিধার্থে বাকা নদী সোজাকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে তখন তাদেরকে মাটি কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বাধা দেয়া হয়। এভাবে বাধা বিপত্তি থাকলে নদীর শাসনের কাজ পরিচালনা করা যাবে না। নদীর ভাঙন রোধে সেখানে সিসি বøকের কাজের একটি প্রস্তাবনা ওপরে পাঠানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন