মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

যুদ্ধের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও নিরসন জরুরি

প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : বর্তমান বিশ্বে এক ধরনের যুদ্ধ চলছে যা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। আরেক ধরনের যুদ্ধ চলছে ভেতরে ভেতরে। এটি দেখা যায় না, তবে অনুভব করা যায়। প্রকাশ্য যুদ্ধ এবং অপ্রকাশ্য যুদ্ধের মধ্যে এক প্রকার আন্তঃসম্পর্কও রয়েছে। বলা যায়, প্রকাশ্য যুদ্ধের মধ্যে যেমনি স্বীকৃতির একটি ব্যাপার রয়েছে তেমনি অপ্রকাশ্য যুদ্ধের মধ্যেও স্বীকৃতির একটি বড় বিষয় কাজ করছে। এটা এখন বিশেষভাবে ভাববার বিষয় প্রকাশ্য যুদ্ধগুলো এশিয়ায় কেন? আরো সুনির্দিষ্ট করা যায়, এশিয়ার বিশেষ কিছু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ কেন? এ আলোচনা অনেক বিস্তৃত হতে পারে। ভাববার বিষয়, যুগ যুগ ধরে চলা ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর সমস্যার কেন সমাধান হচ্ছে না ? এটা কিন্তু সঙ্গতভাবেই বিশ্বশান্তির ট্যাবলেট যারা বেচছেন তাদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অন্যদিকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের যৌক্তিকতাকেই সমর্থন করছে। শুরুর জন্য নজর দেয়া যেতে পারে কাশ্মীরের দিকে।
এখনো কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত সীমান্তে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেন এই বাস্তবতা? ভূস্বর্গ বলে পরিচিত এই কাশ্মীরের জনগণকে গত ছয় দশক ধরে কঠিন মূল্য দিতে হচ্ছে। সেখানকার সাধারণ মানুষ মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা কী চায়, সে আলোচনায় নতুন কিছু নেই। এর একটি চমৎকার জবাব দিয়েছেন বুকার বিজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতি রায়। তিনি লিখেছেন, ‘আমার মতো মানুষ যে অমুসলিম তার কাছে কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইসলামী জোশের মানে বোঝা কঠিন। আমি এক যুবতী মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম কাশ্মীরে স্বাধীনতা মানে কি নারী হিসেবে আরো অধীনতা নয়? আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, কী ধরনের স্বাধীনতা আমরা এখন পাচ্ছি? ভারতীয় সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার স্বাধীনতা? তার জবাব আমাকে চুপ করিয়ে দেয়। ছয় দশক বা তার কিছু আগের কথা যদি আমরা স্মরণ করতে চাই তাহলে ফিরে যেতে হবে বৃটিশ কর্তৃক ভারত বিভাজনের সময়ে। কাশ্মীরে স্বাধীনতার লড়াই দীর্ঘদিনের। এটা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে যখন হিন্দুরাজা হরিসিং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের মতের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। কাশ্মীরের জনগণের ন্যায্য লড়াইকে ভারতীয় শাসকরা সন্ত্রাস বলে মনে করে। কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার আন্দোলন দমাতে গিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা সেখানে রক্তের সাগর বইয়ে দিয়েছে। সেখানকার নদ-নদীর পানি কাশ্মীরিদের রক্তে লাল হয়ে গেছে। কাশ্মীর এখনো উত্তাল। সেখানকার জনগণ স্বাধীনতা চায়। অথচ ভারতীয়রা তা মানতে রাজি নয়। তারা গণভোটের সিদ্ধান্ত মানতে চায় না। গায়ের জোরে দখলে রাখতে চায়। অথচ দাবি করছে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে। বলা যায়, ভারত চালায় এখনো কাশ্মীরি ব্রাহ্মণরা। কাশ্মীর যে ভারতের অংশ নয় সে কথা শ্রীনগরের হাইকোর্টও বলেছে। মূল বিষয় হচ্ছে কাশ্মীরি জনগণের স্বীকৃতির লড়াই। এই লড়াইয়ে কাশ্মীদের দমিয়ে রাখতেই বর্তমানে হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে কথিত সন্ত্রাসী হামলার জুজুতে ভারতীয়রা পাকিস্তান আক্রমণের ফাঁকফোকড় খুঁজছে। পাক-ভারত সীমান্ত নিয়ে কিছু হয়নি। কার্যত কাশ্মীর ইস্যু ধামাচাপা দিতেই পাক-ভারত উত্তেজনা। এটা ভাববার রয়েছে, এ থেকে প্রকৃত লাভবান হচ্ছে কারা? এ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণ সব সময়ই যুদ্ধ নয়, শান্তির পক্ষে। পরিস্থিতি যেভাবে শুরু হয়েছিল সেভাবে নেই। ভারতই হয়তো পিছুটান দিয়েছে। কেন দিয়েছে সেটি হয়তো বড় কথা নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের যুদ্ধ শুরু করা যায় তবে সামাল দেয়া কঠিন। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তারা শেষ পর্যন্ত কে কোথায় থাকবে সেটি যেমনি বিবেচ্য তেমনি বিবেচ্য হচ্ছে বিদ্যমান বিশ্ববাস্তবতা। সে যাই হোক, যুদ্ধের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান। সে ক্ষেত্রে কাশ্মীরের জনগণের দাবি মেনে নিলে মূল সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং এটা হলে কেবলমাত্র একটি ক্ষেত্রে নয় এর নানামাত্রিক প্রভাব অন্যত্রও পড়তে বাধ্য। মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অর্থাৎ মুসলমানদের দাবির স্বীকৃতি না দেয়ার মধ্য দিয়ে ভারতীয় শাসকদের যে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার অবসান ঘটাতে হবে। এখানে এ কথাও বলে রাখা দরকার, কাশ্মীরের প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে ভারতীয়রা যাই ভাবুক সে ভাবনার কোনো প্রয়োজন নেই বরং তারা যদি কাশ্মীরের জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল হতো বা হতে পারে তাহলে বোধহয় অন্যদের দোষ খোঁজার কোনো প্রয়োজন নেই। ঠিক এমনটাই ঘটছে ফিলিস্তিনে। সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে যারা, তারাই তাদের উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এখন ফিলিস্তিনিরাই মার খাচ্ছে আর মধু খাচ্ছে দখলদার ইসরাইলিরা। যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনি মায়েরা সন্তান ধারণ করছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করতে। এটা বিশ্ব শান্তির বিবেচনায় গভীর ভাবনার। মূল লড়াই স্বীকৃতির।
স্বীকৃতির লড়াই কেবল ভারতেই চলছে বোধকরি তা কোনোভাবেই বলা যাবে না। মানুষে মানুষে বৈষম্য আজ বিশ্বজুড়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই যুদ্ধটা সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়। আবার যদিওবা দেখা যায় তাহলে তা আক্ষরিক অর্থে যুদ্ধ বলে মনে হয় না। অথচ নিরন্তর চলে আসা এই যুদ্ধ মানবসভ্যতাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যে গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি, যে মানবাধিকারে কথা সরবে উচ্চারিত হচ্ছে তা কি দুনিয়া জোড়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে? বোধকরি এর জবাবে হ্যাঁ বলার কোনো সুযোগ নেই। বর্ণবাদ-ব্রাহ্মণ্যবাদ সারা দুনিয়ায় শোষণের নতুন উপকরণ হিসেবে বিবেচিত। এর বিরুদ্ধে লড়াই কতটা করা যাচ্ছে বা করা সম্ভব তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। ভারতে আজ যা চলছে তা যে সেখানকার ব্রাহ্মণ্যবাদের বীভৎস চিত্র তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? সেখানে ভারতীয় নাগরিক হওয়াই বড় কথা নয় হতে হবে হিন্দু। হিন্দুত্বের নামাবলী গায় দিয়ে সেখানে হিন্দু যুবকরা মন্দিরে গরুর গোস্ত রেখে দায়ী করার চেষ্টা করছে মুসলমানদের। যদি গণতন্ত্রের কথাই বলি, তাহলে একজন তার ধর্মবিশ্বাসের কারণে গরুর গোস্ত খেতে পারবে না এটা কোন গণতন্ত্রে লেখা রয়েছে? এটা যদি গণতন্ত্রের চেহারা হয় তাহলে ফ্যাসিবাদ কাকে বলা যাবে? এখন ভারতে যা ঘটছে তার কারণ যদি ভারতের হিন্দু শাসকরা হন তাহলে কিন্তু তুলনামূলক এ আলোচনা উঠতেই পারে যে, এই ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রূপ দিয়েছে মুসলমানরাই। শত শত বছর মুসলমানরা ভারত শাসন করেছে। কই সেখানে হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য বৈধ, যা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ, এমন কোনো পশু হত্যা তো আইন করে বা সামাজিকভাবে প্রতিরোধ তৈরি করে বন্ধ করা হয়নি। শত শত বছর মুসলমানদের ভারত শাসনামলে ভারতে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে এমন কোনো উদাহরণ পাওয়া যাবে না। তাহলে ভারতে এই সাম্প্রদায়িকতার বীজ এলো কেত্থেকে?। এর উত্তর খুঁজতে যেতে হবে বৃটিশ আমলে। প্রকাশ্য রূপ ডিভাইড এন্ড রুল হলেও মূল কথা ছিল ভারতে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া। বৃটিশ শাসনের মাত্র একশ বছরের মধ্যেই সফলতার সাথে এ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল। যার প্রথম প্রতিফলন ঘটেছিল ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে। বৃটিশমুক্ত হলে ভারতের শাসনভার কারা গ্রহণ করবে। এ বিতর্ককে উসকে দিয়েই বৃটিশরা পরবর্তী প্রায় একশ বছর ভারত শাসন করেছিল। বোধকরি এখনকার এই উপমহাদেশের ভূগোল দেখে যে কারোরই মনে হতে পারে, ম্যাপটা যদি প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে তৈরি করা হতো বা যেত, তাহলে এ অঞ্চলে এখন যে ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে তা হয়তো থাকত না। এখন অনেকেই এটা মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন, এ অঞ্চলে বিরোধ টিকিয়ে রাখতেই ভূগোলটা এমন করা হয়েছে। ব্যাপারটা শুধু যে এ অঞ্চলেই হয়েছে বোধকরি তাও নয় বরং বৃটিশ ও ফরাসীরা যেসব মুসলিম দেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল সেগুলো ছেড়ে যাওয়ার সময়ে প্রত্যেকটিতেই কোনো না কোনো জটিলতা রেখে গেছে, যা স্থায়ী অশান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলেও প্রকৃতপক্ষে যেসব লড়াই চলছে তা স্বীকৃতির।
ফরাসি বিপ্লবোত্তর রেনেসাঁকে মনে করা হয় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনের এক মাইলফলক। আজকের দুনিয়া জোড়া যে গণতন্ত্রের জয়গান গাওয়া হচ্ছে তার মূলে রয়েছে ফরাসি বিপ্লব। এটাকে যদি আধুনিক যুগের এবং আধুনিকতার সবচেয়ে বড় অবদান হিসেবে বিবেচনা করা যায় তাহলে বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে এটা বলতেই হবে, মানুষের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠায় এটা কতটা কার্যকর রয়েছে যথেষ্ট সেটি ভাববার বিষয়। পাশ্চাত্য বিশ্বজুড়েই এখন চলছে মানুষ ও মূল্যবোধের স্বীকৃতির লড়াই। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিটা জোরদার রূপ নেয় বর্ণবাদবিরাধী আন্দোলনের মাধ্যমে। এখন সকলেই স্বীকার করছেন এটা ছিল স্বীকৃতির লড়াই। বলছেন, এ লড়াই ছিল শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই একদল মানুষ উন্নত যুদ্ধাস্ত্রের কারণে আরেকটি স্বাধীন দেশের মানুষকে করতলগত করল। দাস বানালো। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে একদিকে বলা যায়, এটা টেকেনি আবার এটাও বলা যায়, এর অবসান হয়নি। আজো যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে সেখানে এই বৈষম্যের কোনো অবসান হয়নি। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প যা বলছেন তা কোনো শিক্ষিত সভ্য মানুষ বলতে পারে বলে মনে হয় না। তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। কেন তার এই ঘৃণা তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি হাজির করতে পারবেন না। যেসব কথা বলা হয় এবং হচ্ছে তার পেছনে প্রমাণিক কোনো দলিল নেই। তার পূর্বসূরি বুশ যেসব কথা বলে ইরাক ও আফগানিস্তানে হামলা করে দেশ দুটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছেন তার কোনো বিচার কী হয়েছে? সেখানকার মুসলমানরা যেভাবে জঙ্গি হামলার শিকার হচ্ছে তা কি কোনো নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত হয়েছে? শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বা কেন, ফ্রান্সে মুসলিম নারীদের পর্দা করা নিয়ে যে চরম বিব্রতকর বাস্তবতার সৃষ্টি হয়েছে তার কি কোনো অবসান করা গেছে ? মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলিদের ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত অব্যাহত বর্বরতার কোনো অবসান করা যায়নি বরং মুসলিম বিশ্বের একসময়কার যে কয়েকজন নেতা এ ইস্যুতে আপসহীন ছিলেন তাদেরই নানা অজুহাতে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। বোধকরি এ কথা নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই যে, বিশ্বে ইহুদি স্বার্থ রক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-ইসরাইলের বৃটেরেন যে জোট রয়েছে সে জোটে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে ভারত। সব মিলে বিশ্বব্যাপী মানবতা ধ্বংসের যে পাঁয়তারা চলছে তার মূলে রয়েছে মূল্যবোধের অবক্ষয়।
দুনিয়াজুড়ে এখন চলছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। আধুনিকতা গণতন্ত্র তথাকথিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে মানুষের নীতি-নৈতিকতাকে আঘাত করাই যেন প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। আর্থিক প্রলোভন, কথিত উন্নত জীবনযাপনের বিলাসী ভাবনা সবকিছু মিলে গোটা সমাজই আজ রাহুগ্রস্ত। এর মাসুল দিচ্ছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ। এর ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের সমাজ দেহে প্রবেশ করেছে ভয়ঙ্কর কীট। প্রতিদিনই সমাজ অধঃপতিত হওয়ার নানা খবর প্রকাশিত হচ্ছে। যুবসমাজ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরেই নানা কুপ্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠছে। যেসব বিষয়ের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য বিশ্বে ব্যাপক জনমত রয়েছে আমদের দেশে সেসব বিষয়ও নিশ্চিন্তে রয়েছে। সমাজ ভাঙছে নেতিবাচকতার দিকে। বর্ষার প্রবল স্রোতে যেভাবে নদী তার দু’কূল ভাঙে আমাদের সমাজের অবস্থাও বলতে গেলে ঠিক তেমনটাই। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানও বাদ পড়ছে না এসব থেকে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নিত্যদিনের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একটি চ্যানেলে একজন বিশ্লেষক বলেছেন, দুনিয়াজোড়া রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। এর কারণ তিনি বিশ্লেষণ না করলেও বোঝা যায়, কথায় ও কাজে সমন্বয় না থাকাই হয়তো এর প্রধান কারণ হতে পারে। বিষয়টি উদ্বেগের। প্রকৃত অবস্থা যদি এই হয় তাহলে বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এ কথা প্রমাণ করে সমাজে রাজনীতিবিদ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে হয়তো বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এই ব্যবধান বোধ বিশ্বাসজনিত মনে করাই সঙ্গত। এমনও হতে পারে, রাজনীতিবিদরা একই ধাঁচে যেসব গুলতানি ছাড়ছেন তাতে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গেছে। মার্কিন নির্বাচনে প্রায় সব বিশ্লেষকই মনে করছেন, এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে এক ধরনের জোয়ার উঠেছে। পাশাপাশি সতর্ক মন্তব্যও রয়েছে। নানা জোড়াতালির আলোচনায় এ কথাও অনেকে মনে করেন নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে কী ঘটে যাবে তা এখনই বলা যায় না। বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া যতটা বিস্ময় সৃষ্টি করছিল হিলারি বিজয়ী হলে তা হবে আরো বিস্ময়কর। যত গণতন্ত্র মানবাধিকারের কথাই মার্কিনিরা এযাবৎকাল বলে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট পদে একজন নারীকে তারা মেনে নেয়া তো দূরের কথা মনোনয়ন দেয়ার কথাও কখনো ভাবেনি। সে বিবেচনায় মার্কিন রাজনীতির কালচারে ইতোমধ্যেই এক বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হয়েছে হিলারির প্রার্থীতার মধ্য দিয়েই। এবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেভাবেই হোক মূল্যবোধের বিষয় উঠে এসেছে।
দুনিয়াজুড়ে এখন যে লড়াই চলছে, তা হলো মানুষের স্বীকৃতির লড়াই। বর্ণবাদী আচরণের কারণে এই অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যখন ধর্মীয় আস্থার সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছিল তখনই ইসলামের সাম্যবাদী পতাকাতলে তারা আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতের সংবিধান রচয়িতা অম্বেদকারও নিজের পরিচয় সংকট মেটাতে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। আজো দুনিয়াজুড়ে বিপর্যস্ত মানুষেরা আত্মার শান্তি ও অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হচ্ছেন। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেইÑ এই সত্য যতদিন না সমাজ-রাষ্ট্রে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন সমাজ থেকে বৈষম্য দূরীকরণের কোনো উপায় নেই।
awalthakur@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন