দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার দিকে নজর না দিয়েই ভারতে রফতানী করা হচ্ছে ইলিশ। প্রতি কেজি ইলিশ দেশের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা। সেখানে ভারতে রফতানী হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ ডলার বা সাড়ে ৮ শ টাকায়। শনিবার বেনাপোল স্থল বন্দরের মাধ্যমে ১৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানী করা হয়েছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভারতে গেছে ১০৩ মেট্রিক টন, বৃহস্পতিবার ২০৯ মেট্রিক টন ও আজ যাচ্ছে ১৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ। এ নিয়ে গত তিনদিনে গেল ৪৯৮ মেট্রিক টন ইলিশ। আরো যাবে চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।
দূর্গা পূজা উপলক্ষে সরকার ভারতীয়দের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রসনার কথা বিবেচনা করে ইলিশ রফতানীর অনুমতি দিয়েছে। ২০১২ সালের আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হতো। তবে ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১২ সালের পর রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছরও দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এবার যাচ্ছে ৩ গুনের বেশী। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব ইলিশ রপ্তানির নির্দেশনা রয়েছে।
ইলিশ মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্পিতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক বিশুদা নন্দা আচার্জী বলেন, এবার ভারতে চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করা হবে। প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানিমূল্য ১০ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা। ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের কাস্টমস থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ইলিশের এ চালান ছাড় করানো হচ্ছে। দেশে ইলিশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ১১৫টি। তিনি আরও বলেন, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সকল ইলিশ রপ্তানির নির্দেশনা থাকলেও সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে রপ্তানিকারকরা কীভাবে এত পরিমাণ ইলিশ এসময়ের মধ্যে ভারতে রপ্তানি করতে পারবে সেটাই ভাবনার বিষয়।
এদিকে, ইলিশের চাহিদা মিটছে না এমন অবস্থায় ইলিশ রফতানীকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না সাধারণ মানুষ। খুলনার মৎস্য রফতানীকারক প্রতিষ্ঠান বিএন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর সত্ত্বাধিকারী মো। আমিনুল ইসলাম। সবার আগে অভ্যন্তরীন চাহিদার কথা চিন্তা করতে হবে। চাহিদা মিটিয়ে রফতানী করলে তা সবার জন্যই লাভজনক। বর্তমান অবস্থায় ইলিশ রফতানীর বাণিজ্যিকভাবে কোনো মূল্য নেই।
খুলনার অপর মৎস্য রফতানীকারক নুর এ জিলানী বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। তাদের দেশের মানুষকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না। তাই ভারতে ইলিশ রফতানী মোটেও ভালো সিদ্ধান্ত নয়। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ভারত কখনোই অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন না মিটিয়ে কোনো পণ্য রফতানী করে না। অতীতে কখনো আমরা দেখিনি আমাদের বিশেষ কোনো পণ্য সংকটের সময় ভারত নিজেদের প্রয়োজনের কথা গুরুত্ব না দিয়ে আমাদেরই পাশে দাঁড়িয়েছে। এ মুহুর্তে দেশের খুচরা বাজারে ক্রেতা পর্যায়ে ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমাদের রফতানীকারকেরা মাত্র সাড়ে ৮ শ’ টাকায় ইলিশ পাঠাচ্ছে। কেনো এতো ছাড় দেয়া হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন